ভারত থেকেও লাপাত্তা সোহেল রানা কোথায়?

১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ


ই-অরেঞ্জের নামে গ্রাহকের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা সোহেল রানা এখন আর ভারতেও নেই। তিনি সেখান থেকে পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোহেল রানা কোচবিহারের চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত দিয়ে নেপাল পালানোর সময় বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়েন। কিছুদিন বিচারপর্ব চলার পর তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে ছিলেন। তারপর তিনি জামিনের আবেদন করেন। শর্তসাপেক্ষে জামিনও পান। জামিনের শর্ত ছিল যে, তিনি সপ্তাহে একদিন করে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ থানায় হাজিরা দেবেন। প্রথমবার হাজিরা দিলেও তিনি আর এখন আদালতে যাচ্ছেন না। আদালতকে কোচবিহার জেলা পুলিশ জানিয়েছে যে, একটি ই-মেইল পাঠিয়ে সোহেল রানা জানান যে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি হাজির হতে পারেননি। তিনি বিদেশ যাবেন চিকিৎসা করাতে, তাই আপাতত তিনি আসতে পারবেন না।

এরপরই সোহেল রানা লাপাত্তা হয়ে যান। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, সোহেল রানা নেপাল কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই কিংবা আবুধাবি চলে যেতে পারেন। এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশ মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। জামিনে থাকা অবস্থায় একজন আন্তর্জাতিক অপরাধী কীভাবে পালালো তা নিয়ে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। ই-মেইলে সোহেল রানা একটি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন। আদালত জানতে চাইতে পারে যে, পোর্ট অফ এমবারকেশন অর্থাৎ বিমানবন্দরগুলোকে সোহেল রানা সম্পর্কে রেড কর্নার নোটিশ দেয়া হয়েছিল কি-না। এই ব্যাপারে ইন্টারপোলের কোনো সাহায্য নেয়া হয়েছিল কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
ওদিকে সোহেল রানাকে ফেরাতে বাংলাদেশের পুলিশ সদর দপ্তর থেকে তিন দফা চিঠি দেয়া হলেও ভারতের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ ও বিদেশি মুদ্রা বহন করাসহ একাধিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ভারতে মামলা হয়। তাকে ফেরানোর জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা ভারতের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) পরপর তিন দফা চিঠি দিলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। দুইবার চিঠি দেয়ার পর সর্বশেষ এবং তৃতীয় চিঠি দেয়া হয় ২০২২ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর। কিন্তু, সেই চিঠিরও কোনো উত্তর পায়নি পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, তিনি ভারত ছেড়ে অন্য দেশে পালিয়ে গেছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর ও কলকাতা সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার সাজা ঘোষণা করেন কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ। এরপর থেকে কলকাতা প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে ছিলেন সোহেল রানা। কিন্তু, জেলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে জামিন আবেদন করেন। মেখলিগঞ্জ থানায় প্রতি সপ্তাহে সশরীরে হাজিরা ও মেখলিগঞ্জ থানা এলাকার বাইরে না যাওয়ার শর্তে গত ৮ই ডিসেম্বর তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। প্রতি সপ্তাহে থানায় হাজিরা দেয়ার শর্তে তাকে জামিন দেন আদালত।

২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বের ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার চ্যাংড়াবান্ধা সীমান্ত থেকে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানাকে আটক করে বিএসএফ।
ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে পণ্য দেয়ার নামে টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে। তারা পণ্য দেয়নি। পরে টাকা ফেরতও দেয়নি। প্রায় ১১০০ কোটি টাকার প্রতারণার অভিযোগ ওঠে তাদের নামে। এ ঘটনায় ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করেন তাহেরুল ইসলাম নামে এক গ্রাহক। মামলা দায়েরের সময় আরও ৩৭ জন গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন। মামলার তদন্ত করছে সিআইডি।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) মো. মঞ্জুর রহমান মানবজমিনকে জানান, ‘তাকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সব প্রক্রিয়ায় অব্যাহত আছে। তবে তিনি জামিনে কোথায় আছেন তার সর্বশেষ তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।’
পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা সূত্রে জানা গেছে, ই-অরেঞ্জের ব্যাপারে একের পর একা গ্রাহকের অভিযোগ আসার পর হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান সোহেল। পরে সোহেল ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর খোদ পুলিশ কর্মকর্তারা উষ্মা প্রকাশ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর শাহ্জাদপুরে একটি, গুলশান মডেল টাউনে ১টি, নিকেতনে ২টি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ই-ব্লকে ১টি ফ্ল্যাট আছে সোহেলের। গুলশানে একটি বাণিজ্যিক ভবনে ৯ কোটি টাকায় স্পেস (জায়গা) কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া বসুন্ধরা ও পূর্বাচলে দু’টি প্লট এবং গুলশান ও উত্তরায় তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে তার। রাজধানীর বাইরে নিজ জেলা গোপালগঞ্জে এবং খাগড়াছড়িতে জমি কিনেছেন তিনি।
এছাড়াও থাইল্যান্ডের পাতায়ায় সোহেল রানার সুপারশপ, জমি ও ফ্ল্যাট, পর্তুগালের লিসবনে সুপারশপ, ম্যানিলায় বার ও নেপালের কাঠমান্ডুতে একটি বার আছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু, সর্বশেষ তার মামলার তদন্ত থমকে যাওয়ার কারণে দেশের বাইরে কত সম্পদ রয়েছে তা জানা যায়নি।