অবশেষে সুনামগঞ্জে খুলছে রেলের দিগন্ত

গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট এ সিলেট-ছাতক ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপিত হয়েছিলো ১৯৫৪ সালে। সিলেট স্টেশন থেকে ছাতক পর্যন্ত রয়েছে খাজাঞ্চি, সৎপুর ও আফজলাবাদ রেলওয়ে স্টেশন।

সুনামগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি- এই রেল লাইন সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত নেয়ার। দাবি বাস্তবায়নের জন্য নানাভাবে উদ্যোগ নেয়া হলেও আলোর মুখ দেখছে না। প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত হয়েছিল আফজালাবাদ-দক্ষিণ খুরমা-শান্তিগঞ্জ হয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে যাবে রেললাইন। এরই মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা যাচাই করে এই রুটে ৪৪ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের সুপারিশ করা হয়।

সিলেট-ছাতক রেললাইনের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের চূড়ান্ত রিপোর্ট এই সপ্তাহেই জমা হবে বলে জানা গেছে। রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন স্থাপনে দু’টি পথের মতামত দেওয়া হলেও রেলওয়ের দায়িত্বশীলদের বেশিরভাগেই গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়া ও কালীপুরের মাঝের হাওর পর্যন্ত রেল লাইনে স্থাপনের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে রেলের একাধিক দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন।

রেলপথের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নিয়োগকৃত মজুমদার এন্টারপ্রাইজের সমীক্ষা দল ছাতকের গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়া পর্যন্ত ইতোপূর্বে সমীক্ষা করেছে। আবার ছাতক-দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত একাধিবার ঘুরে দেখেছেন সমীক্ষাদল।

সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের সময় নানা বিষয় বিবেচনায় এনে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত অর্থাৎ সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক সড়কের পাশ দিয়ে রেললাইন স্থাপনের বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে এর চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা হয়নি বলে জানা গেছে। রেলওয়ের দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী জানান, সুনামগঞ্জ পর্যন্ত রেলপথ বর্ধিত করার জন্য দুই পর্যায়ে কাজ চলছে। একটি হচ্ছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, অপরটি নকশা প্রণয়ন।

চুক্তি অনুযায়ী চায়না রেলওয়ে ডিজাইন করপোরেশন এবং বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজ এই কাজ বাস্তবায়ন করছে। নির্দেশনা অনুযায়ী গেল অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সম্ভাব্যতা যাচাই রিপোর্ট দাখিল করে সংশ্লিরা। তাদের ওই রিপোর্টের উপর পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা কিছু অবজারভেশন সংযুক্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট ডিসেম্বরের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেন। কয়েক দফায় সময় নেবার পরও সম্ভাব্যতা যাচাইকারীরা চূড়ান্ত রিপোট ২৬ মার্চ রবিবার পর্যন্ত দাখিল করেননি। সর্বশেষ গত সপ্তাহে রিপোর্ট দাখিল করার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি। চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল না হওয়ায় এই প্রকল্পের অগ্রগতি থেমে আছে।

রেলওয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সমীক্ষাকালে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত পাঁচটি স্টেশন নির্ধারণ করা হয়েছে। শেষ স্টেশন হবে সুনামগঞ্জ শহরের দক্ষিণ নতুনপাড়ার পাশ্ববর্তী ঝাওয়ার হাওরে। এই স্টেশনটির দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার এবং প্রস্ত হবে ৫০০ মিটার।

প্রসঙ্গত, ৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘সুনামগঞ্জ জেলা সদরে রেলওয়ে সংযোগের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ নকশা প্রণয়ন’ প্রকল্পে কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশের মজুমদার এন্টারপ্রাইজ এবং চীনের সিএইচইসি যৌথভাবে এ কাজ করছে। এর আগে ২০১৫ সালে ইকোসার্ভ ইঞ্জিনিয়ারিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে জরিপ করেছিল রেলওয়ে। তারা ছাতক থেকে দোয়ারাবাজার হয়ে সুনামগঞ্জ শহর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের জন্য তিনটি রুট সুপারিশ করেছিল। এর আগে ২০১৫ সালেও প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ হয়েছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচটি বিকল্প অ্যালাইনমেন্ট প্রস্তাব করা হয়েছিল। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) তিনটি রুটে জরিপের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সরেজমিন যাচাইয়ে বিদ্যমান আফজালাবাদ স্টেশন থেকে দক্ষিণ খুরমা, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ রুট রেলপথ নির্মাণের জন্য সবচেয়ে উপযোগী বিবেচিত হয়েছে। প্রেজেন্টেশনে বলা হয়েছে, ৪৫ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার অ্যালাইনমেন্টে টপোগ্রাফিক জরিপ হয়েছে। এ রুটে ৬৬টি ছোট-বড় জলাভূমি রয়েছে। দক্ষিণ খুরমা, শান্তিগঞ্জে দুটি স্টেশন নির্মাণ করা হবে। পথে আরও দুটি স্টেশন তৈরি করতে হবে। ১২৮টি বসতবাড়ি, অবকাঠামো সরাতে হবে রেলপথ নির্মাণে। সাড়ে ১৩ হাজার গাছ কাটা পড়বে। পাঁচটি স্টেশনের জন্য ৫০ একরসহ মোট ৬১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।