রোজায় পরিপাকের সমস্যা হলে

চৈত্র ও বৈশাখের প্রখর রোদ ও কিছুটা গরম আহাওয়ায় এবারের রোজা শুরু হয়েছে। আর রোজা রাখতে হচ্ছে প্রায় ১৪ ঘণ্টা করে। এই দীর্ঘ সময়ে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে কারও কারও।
সাধারণত এত লম্বা সময় ধরে কিছু না খাওয়ার কারণে পরিপাকতন্ত্র সংক্রান্ত বা কলোরেক্টাল জাতীয় কিছু অসুখের প্রকোপ বেড়ে যেতে পারে; বিশেষ করে যাদের গ্যাসট্রাইটিস, আলসার, অ্যানাল ফিসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইল্স ইত্যাদি অসুখ আগে থেকেই আছে, তাদের বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন। তবে রোজাদার ব্যক্তিরা রোজার শুরুতে যদি কিছু পরিকল্পনা করে সেহ্‌রি, ইফতার ও রাতের খাবার খেয়ে রোজা রাখেন, তাহলে সুস্থ থাকতে পারবেন।
রোজাদারেরা সাধারণত গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় বেশি ভুগে থাকেন। ইফতারিতে বেশি ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার খাওয়াই এ সমস্যার মূল কারণ। এ কারণে পরিপাকতন্ত্রে অন্য সমস্যাও দেখা দেয়।
রোজায় কিছু নিয়ম মেনে চললে পাকস্থলীর প্রদাহ, আলসার, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি জটিলতা এড়ানো সম্ভব। যেমন সেহ্‌রিতে অবশ্যই খাবার খেতে হবে এবং যথাসম্ভব সেহ্‌রির সময় শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে খাবার শেষ করতে হবে। আবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া ঠিক নয়।
যা মানতে হবে-
* অ্যাসিডিটি, আলসার, বুকজ্বলা ইত্যাদি সমস্যা থাকলে ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত খাবার, লেবু, আঙুর, কমলার মতো টক ফল ও টমেটোযুক্ত খাবার বাদ দিতে হবে।
* অল্প অল্প করে খেতে হবে। একেবারে পেট পুরে খাওয়া চলবে না।
* কম ঝাল, কম মসলাদার হালকা খাবার খেতে হবে।
* উচ্চমাত্রার প্রিজারভেটিভ দেওয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিতে হবে।
* বিস্কুটের মতো বেশি চিনিযুক্ত ও রিফাইন কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
* একটু বিরতি দিয়ে দিয়ে পানি পান করতে হবে।
* বাইরের খাবার না খাওয়াই ভালো।
* মাগরিবের নামাজের পর কিন্তু তারাবির নামাজের আগেই রাতের মূল খাবার খেতে হবে।
* সেহ্‌রি ও ইফতারে চা-কফি পান করা যাবে না।

তাতে শরীর দ্রুত পানিশূন্যতায় আক্রান্ত হতে পারে।
* খনিজ উপাদানে ভরপুর খাদ্য খেতে হবে বেশি করে।
* ধূমপান বাদ দিন।
এসব সতর্কতা অবলম্বনের পরও যদি অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা, পেটে গ্যাস জমে বা বুক জ্বালা- পোড়া ইত্যাদি সমস্যা হতেই থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
খাদ্যাভ্যাসে রাখুন
* আঁশযুক্ত শর্করা যেমন- লাল চাল, লাল আটা, বিট, যব ইত্যাদি। এগুলো খেলে ক্ষুধাও খুব কম অনুভূত হয়।
* ইফতারে মিষ্টির বদলে খেজুর খান। খেজুরে আছে চিনি, আঁশ, শর্করা, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ অনেক খনিজ উপাদান।

* কলা কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস।
* সেহ্‌রিতে এক গ্লাস দুধ খেলে পাকস্থলীর প্রদাহ ও আলসারের উপসর্গ কমে যায়।
মনে রাখুন
* তাড়াহুড়ো না করে খাবার হাত দিয়ে মেখে ভালো করে চিবিয়ে খান।
* কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর আঁশযুক্ত খাবার ও শাক খেতে হবে। ইফতার ও সেহ্‌রিতে প্রচুর পানি পান করতে হবে। যদি কারও রোজায় হঠাৎ খাদ্যাভ্যাস ও খ্যাদ্যাভ্যাসের সময় পরিবর্তনের কারণে পরিপাকের ও কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের কারণে সমস্যা দেখা দেয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসা নিন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক (কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগ) কলোরেক্টাল, লেপারোস্কপিক ও জেনারেল সার্জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ই- মেইল:[email protected]/ www.facebook.com/Dr.Mohammed TanvirJalalফোন: ০১৭১২৯৬৫০০০৯