চাকরির অপেক্ষায় লাখো তরুণ, জট লেগেছে বিসিএসে

সরকারি চাকরিতে বিসিএস যেন সোনার হরিণ। কিন্তু এর নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় চাকরিপ্রত্যাশীদের। যেটিকে এক ধরনের ধৈর্যের পরীক্ষাও বলা হয়। কারণ একটি বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়। যার কারণে সরকারি চাকরিতে পদ থাকলেও নিয়োগ হচ্ছে ধীরগতিতে। আর চাকরির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে লাখো তরুণকে। বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) ৪টি বিসিএসের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেগুলো হলো- ৪১, ৪৩, ৪৪ ও ৪৫তম বিসিএস। এর মধ্যে ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ৪৩ ও ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

আর ৪৫তম বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯শে মে। সব মিলিয়ে বিসিএসে জট লেগেছে। একাধিক বিসিএস এক সঙ্গে সম্পন্ন করতে হিমশিম খাচ্ছে পিএসসি। এর জন্য জনবল সংকটকে দায়ী
করছে প্রতিষ্ঠানটি। মো. সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বাধীন কমিশন এক বছরে বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের সংস্কৃতি চালু করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। কিন্তু অতীতের কয়েকটি বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় সেই লক্ষ্য অধরা থেকে গেছে। তবে এ জট ভাঙতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। কমিশনের চেয়ারম্যান বলছেন, ৪৬তম বিসিএস থেকে এক বছরে বিসিএস শেষ করতে পারবে পিএসসি। চাকরিপ্রত্যাশীরাও এমন ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়ে এর বাস্তবায়ন দেখতে চান। পিএসসি ২০১৯ সালের ২৭শে নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি দেয়। এর প্রিলি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ১৯শে মার্চ। আর ২৯শে নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে ৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে লিখিত পরীক্ষা।

চার বছরে এসে এই বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে এখন। মৌখিক পরীক্ষার পর সুপারিশের জন্য চাকরিপ্রত্যাশীদের আরও কতো দিন অপেক্ষা করতে হয় তা বলা মুশকিল। অন্যদিকে করোনার সময়ে চিকিৎসক নিয়োগের লক্ষ্যে ৪২তম বিসিএসে বিশেষ নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। আর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২০ সালের ৩০শে নভেম্বর। প্রিলি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের ২৯শে অক্টোবর। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত বছরের ২৪শে জুলাই থেকে ৪ঠা আগস্ট পর্যন্ত। কিন্তু এখনো এর ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। আর ৪৪তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০২১ সালের ৩০শে নভেম্বর। প্রিলি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ২৭শে মে। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৯শে ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১১ই জানুয়ারি পর্যন্ত। আর গত রোববার পিএসসি’র এক বৈঠকে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলি পরীক্ষা আগামী ১৯শে মে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। যা পরবর্তীতে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। এদিকে পিএসসি ৪১তম বিসিএসের ফল প্রকাশে বেশ সময় নিয়েছিল। এর অন্যতম কারণ ছিল পরীক্ষকদের অনেকের যথাসময়ে খাতা মূল্যায়ন করে জমা না দেয়া।

যার কারণে ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে কিছুটা সতর্ক থাকতে হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটিকে। যারা সময়মতো খাতা মূল্যায়ন করে জমা দিতে পারবে কেবল তাদেরই দেয়া হচ্ছে ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার খাতা। ৪৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার ফলপ্রত্যাশী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক শিক্ষার্থী এনামুল হক মানবজমিনকে বলেন, নিয়ম হচ্ছে এক বছরে একটা বিসিএস শেষ করা। কিন্তু আমরা দেখতে পাই একটা বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে পিএসসি’র তিন থেকে চার বছর সময় লেগে যায়। চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছে বিষয়টি কষ্টের, বিরক্তিকর। আমরা চাই পিএসসি একটি রুটিন মেনে চলুক। যথাসময়ে বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ভাবে সুপারিশ করা হোক। ৪১তম বিসিএসে মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা রাহাতুর রহমান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিসিএস বরাবরই মেধার সঙ্গে ধৈর্যের পরীক্ষাও। ২০১৯ সাল থেকে ৪১তম বিসিএসের প্রক্রিয়া শুরু। এখনো শেষ হয়নি। এটা প্রত্যাশিত না হলেও আমাদের মানতে হচ্ছে। কীভাবে এ সময় কমিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত।

পিএসসি’র চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে চারটা বিসিএস নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের। অতীতের কাজ শেষ করেই আমাদের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে। আগেরগুলো শেষ না করে এক বছরের একটা বিসিএস শেষ করা সম্ভব নয়। আমরা আশা করছি, ৪৬তম বিসিএস থেকে এক বছরের মধ্যে একটা বিসিএস শেষ করতে পারবো। তিনি বলেন, ৪৪তম বিসিএসের খাতা বিতরণ করা হচ্ছে। আমরা এবার তাদেরই খাতা দিচ্ছি যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খাতা দেখা শেষ করে জমা দিতে পারবেন। বর্তমানে চলমান বিসিএসগুলোর বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখা শেষের দিকে। খাতা দেখা শেষ হলে আমরা ফলাফল প্রকাশ করবো। এরপর ভাইভা শুরু হবে। যে প্রক্রিয়ায় আমরা আগাচ্ছি আশা করছি, প্রতি ছয় মাসে চলমান বিসিএসগুলোর একটা করে আমরা সুপারিশ করতে পারবো।

তবে বোর্ড সংখ্যা কম হওয়ায় বিসিএসের ভাইভা গ্রহণে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করেন সোহরাব হোসাইন। তিনি বলেন, আমাদের বোর্ড রয়েছে কেবল ৯টা। পিএসসি’র সংবিধানে এর সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান করার সুযোগ নেই। আমরা আমাদের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলেছি। যদি পিএসসিতে সদস্য সংখ্যা বাড়ে তাহলে আমরা অন্তত ১৫টা বোর্ড গঠন করতে চাই। তখন দেখা যাবে দ্রুত ভাইভা শেষ করতে পারছি। সুপারিশও আরলি করা যাবে। তিনি বলেন, পিএসসি বর্তমানে আইডিয়াল পজিশনে রয়েছে। আশা করছি, ৪৬তম বিসিএস থেকে এক বছরের মধ্যে একটা বিসিএস শেষ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবো। আমরা প্রতিদিন কাজ করছি। যদি না কোভিডের মতো কঠিন কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হয় তাহলে আমরা আমাদের টার্গেট অনুযায়ী কাজ করতে পারবো।