“গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে”

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)-এর মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেছেন, “৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে কীভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে হবে সেই নির্দেশনাও বঙ্গবন্ধু দিয়ে গিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এমনই এক সম্মোহনী শক্তি ছিল যে, জীবিত বঙ্গবন্ধু ও লোকান্তরিত বঙ্গবন্ধু সমানভাবে বাঙালির উপর প্রভাব রেখেছিলেন। যার প্রমাণ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে এবং বঙ্গবন্ধু পরবর্তী আজকের এই বাংলাদেশ। ২৫শে মার্চের নারকীয় হত্যাকা-ের বর্বরতা সম্পর্কে আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে হবে। তাদের মাঝে দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করতে হবে। গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত অনেক বধ্যভূমি নিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেগুলোকে উদ্ধার করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অদম্য গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশনে আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে।” তিনি আজ ২৫শে মার্চ (শনিবার) ২০২৩ খ্রি. বেলা ২.৩০ ঘটিকায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে চুয়েট প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত গণহত্যা দিবস এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব এ.কে.এম. জহুরুল ইসলাম বলেন, “২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামে যে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় তা পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম। দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যে বৈষম্য ও শোষণ-নিপীড়ন চালিয়েছিল তাতে তাদের সাথে যুক্ত থাকার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলেন। জাতীয়তাবোধের জায়গা থেকে ধর্ম নিরপক্ষে ও অসাম্প্রদায়িক একটি দেশ বিনির্মাণে তিনি এগিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের মহাকাব্যিক ভাষণের মাধ্যমে সমগ্র বাঙালি জাতিকে উজ্জ্বীবিত করে মাত্র নয় মাসেই আমরা সেই কাক্সিক্ষত স্বাধীনতার স্বাদ পাই। নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ একটি নতুন দিগন্তে এসে পৌঁছে গেছে। তবুও পাকিস্তানি দোসররা এখনও তৎপর। তারা সুযোগ পেলেই ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এদের বিষয়ে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সজাগ থাকতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলের মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।”

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ইনস্টিটিউট পরিচালক ও অন্যান্য পরিচালকবৃন্দ, বিভাগীয় প্রধানগণ, সেন্টার চেয়ারম্যানগণ, শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা সমিতি ও কর্মচারী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ চুয়েট পরিবারের শিক্ষকম-লী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মানবিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব নাহিদা সুলতানা। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২৫শে মার্চের গণহত্যা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন উপ-পরিচালক (তথ্য ও প্রকাশনা) জনাব মোহাম্মদ ফজলুর রহমান। এর আগে গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে শহিদদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন চুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ক্বারী নুরুল্লাহ।

গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় বাদ আছর চুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত এবং কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাত ১০:৩০ ঘটিকা থেকে ১০:৩১ ঘটিকা পর্যন্ত এক মিনিটের জন্য প্রতীকি ব্যাকআউট ও পরে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অংশগ্রহণ করেন।