ক্যান্সার রোগীদের রোজা

সাধারণত এবার গরমের শুরুতে রোজাদারদের একটু পিপাসাজনিত ক্লান্তি হতে পারে। তবে আল্লাহর রহমতে রোজাদাররা এই ক্লান্তি নিয়েই রোজা পালন করে থাকেন। রোজার সময় ভোররাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু এই অবস্থাকে শরীরের জন্য সুন্দর একটি ব্যায়াম আখ্যায়িত করেছে বিভিন্ন গবেষণা। সেই সঙ্গে চিকিৎসকরা অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সাধারণ ধারণা হচ্ছে, নিয়মিত তিন বেলা খাবার না খেলে সুস্থ ও অসুস্থ মানুষ উভয়েরই ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু রোজায় যেহেতু নিয়ম মেনে খাওয়ার ব্যাপারে বিধান রয়েছে, সেক্ষেত্রে খুব বেশি অসুস্থ রোগী না হলে তার জন্য রোজা রাখলে তা শরীরের জন্য উপকার হয়। কেননা, ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে খাবার খেলেই একজন মানুষের সারাদিনের খাদ্য চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়। রোজার নিয়মগুলো যদি একজন রোজাদার ঠিকমতো মেনে চলেন, তাহলে তার পক্ষে শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে পরিপূর্ণ সুস্থ থাকার এটি উপযুক্ত সময়। যেসব রোগী খুব অসুস্থ থাকেন, ক্যান্সার বা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ জটিলতা আছে তারা কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শে অনেকেই রোজা রাখতে পারেন।

আবার দিনে যাদের তিন থেকে চারবার ইনজেকশন নিতে হয়, কিংবা দিনে যাদের প্রায় দুই ঘণ্টা পর পর অল্প করে খাবার খাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে তাদের পক্ষে রোজা রাখা সম্ভব নয়। কিডনি রোগীদের মধ্যে যারা দিনে তিনবেলা ওষুধ খান তারা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ বদলে নিতে পারেন। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা প্রথম দু’দিন রোজা রাখার পর যদি মনে হয় শরীর বেশি খারাপ হচ্ছে তাহলে রোজা রাখা বাদ দিতে হবে। পুরোপুরি শারীরিক স্বাস্থ্য বলতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে সংজ্ঞা দিয়েছে অর্থাৎ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক স্বাস্থ্যের সবগুলোর সঙ্গে রোজার সম্পর্ক রয়েছে। রোজার মাসে রোজাদারদের হঠাৎই দৈনন্দিন জীবন যাত্রার চক্র পরিবর্তন করতে এবং নতুন লাইফস্টাইলের মধ্যে আসতে হয়। রোজার উপকারিতায় গবেষণা বলে, নিত্যজীবনে শরীরে বাড়তি যে মেদ তৈরি হয়, সেগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে জমা থাকে। এগুলোর কারণে রক্তনালি সংকীর্ণ হয়ে যায়। নিয়ম মেনে রোজা রাখলে তা দূর হতে পারে। রোজার সময় প্রথম ৬-৮ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার কারণে শরীর ভোররাতে খাওয়া খাবারগুলো ক্ষয় করে। বাড়তি যে অলস ফ্যাট শরীরে জমে থাকে, সেগুলো বাকি সময়ের চাহিদা পূরণ করে। এতে কোলেস্টেরল বেশি থাকার ঝুঁকি এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। সাধারণত স্তন ক্যান্সার স্থূলকায় মেয়েদের বেশি হয়। তারাবি নামাজ কেউ পড়লে তা একটি মধ্যম মানের ব্যায়ামের কাজ করে। এই এক মাসে এটাও একটা ফিজিক্যাল অ্যাক্টিভিটি হয়ে যায়। তবে আমরা যদি রোজাকে সংযমের স্থান না দিয়ে রোজা করি তাহলে এগুলোর কোনোটিই কাজে লাগবে না। সারাদিন রোজা রাখলাম আর ইফতারের পর থেকে একটানা চর্বি জাতীয় খাদ্য খাওয়া শুরু করলাম, এতে করে কোনো উপকার হবে না। ক্যান্সারের রোগীদের কেমোথেরাপি নিতে হয়। কিছু কম্বিনেশন কেমোথেরাপি আছে যেগুলো খাওয়ার পর প্রচুর পানি খেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোজা রাখার ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। তবে রেডিওথেরাপি নিচ্ছেন এমন রোগী যদি চান তাহলে রোজা রাখতে পারবেন। অসুস্থ রোগীর জন্য তো রোজার বিকল্পের সুযোগ রয়েছে। পরে করা যায় বা কাফফারা দিতে পারে। বিভিন্ন প্রকাশিত জার্নাল ও গবেষণায় দেখা যায়, ৮০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে দিনে দু’বেলা ওষুধ খেয়ে রোজা রাখা সম্ভব। একজন মানুষের জন্য যেটুকু খাবার প্রয়োজন তা তার পক্ষে ইফতার ও সাহরি খাওয়ার মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব। ভোররাত থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীর পাকস্থলী বিশ্রামে থাকে। সাধারণত আমরা রোগীদের দিনে দেড় থেকে দুই লিটার অর্থাৎ ৮ গ্লাস পানি খেতে বলি। অনেক রোগীই এমন কথা বলেন যে, পানি না খেলে বাঁচবো কীভাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের কথা হচ্ছে, বেশি পানি খেলেও অনেক সময় কিডনি নষ্ট হতে পারে। অনেক ক্যান্সারের রোগীরা হোমিও ডোজ নিয়ে থাকেন। যারা হোমিও চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি রোজা থাকতে সক্ষম বা আগ্রহ প্রকাশ করেন, তখন চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ডেলি পথ্য ও ওষুধ নতুন নিয়ম বা সময় করে নিতে হবে। যেহেতু ক্যান্সার একটি জটিল রোগ, তাই ক্যান্সারের ধরন অনুযায়ী রোজা রাখা যাবে কি-না তা চিকিৎসক বলে দেবেন। রমজানে সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
লেখক: সরদার হোমিও ক্যান্সার চিকিৎসক, সরদার হোমিও হল ৬১/সি, আসাদ এভিনিউ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। সেল-০১৭৩৭৩৭৯৫৩৪