পীরেরবাগ থেকে শেওড়াপাড়া, মিললো না কিছুই

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা। মিরপুর-২ এর উত্তর পীরেরবাগ বাজারে কয়েকশ’ নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে। কাছে গিয়ে জানা গেল তারা ফ্যামিলি কার্ড (ডিজিটাল পরিবার পরিচিতি কার্ড) দিয়ে পণ্য কিনতে এসেছেন। এক নারী দাঁড়িয়ে থাকা অন্যদের অনুরোধ করছেন কিছু একটার জন্য। পরে তিনি একটি বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন। সেখান থেকে টিসিবি’র পণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। তাকে অনুসরণ করে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় একজনের পা চেপে ধরেছেন তিনি। কাঁদছেন আর অনুরোধ করছেন, আমারে ফিরায়ে দিয়েন না। আমারে জিনিসগুলো দেন। আমি অপারেশনের রোগী।

সকাল ৭ টায় আসছি। এখন দুপুর। সেখানে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা ওই নারীর কার্ড পরীক্ষা করলেন। কিন্তু তার তথ্য সেখানে মিললো না। কারণ তার কার্ডে ওয়ার্ড নম্বর ১৪ দেয়া, যেটি শেওড়াপাড়ায়। তিনি এসেছেন ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পীরেরবাগে। কিন্তু নার্গিস আক্তার নামে সে নারী নাছোড়বান্দা। বললেন, আমি শেওড়াপাড়ায় তিন-চারদিন আগে গেছি। ওরা বলে পরে আসেন। আপনি পীরেরবাগের বাসিন্দা। না হলে ওইখানেই যান। নার্গিস বলেন, তারা আমাকে বারবার এখানে পাঠায় দিচ্ছে। আমি এখন কই যাব। অঝোরে কাঁদতে লাগলেন নার্গিস। পরে এ প্রতিবেদক নার্গিস আক্তারকে নিয়ে যান শেওড়াপাড়ায়। সেখানেও পঞ্চাশ – ষাটজন লাইনে দাঁড়িয়ে। সেখানে ওএমএস’র চাল-আটা দেয়া হচ্ছে। নার্গিস আক্তার বললেন, আমার তো তেল, লবণ, চিনি লাগবে। অনেক কষ্টে আসছিলাম। এই পাঁচ-ছয় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কী পেলাম? শেওড়াপাড়া থেকে জানানো হলো- কার্ডের মাধ্যমে পণ্য দেয়া হবে রোববার থেকে। তারা নার্গিস আক্তারকে রোববার আসতে বললেন। নার্গিস বললেন, আমার কার্ডে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড না দিয়ে কেন ১৪ নম্বর দিল তা জানি না। এই দোষ কি আমার? শেওড়াপাড়া থেকে ফিরে কাঁদতে কাঁদতে ফের উত্তর পীরেরবাগের দিকে রওনা দিচ্ছিলেন নার্গিস। তিনি বলেন, সকাল সাতটা বাজে আইছি। উত্তর পীরেরবাগ গেলে বলে শেওড়া পাড়া যেতে। সেখানে গেলে আবার বলে পীরেরবাগ যেতে। এইভাবেই ঘুরছি। এখন পর্যন্ত (দুপুর) পণ্য দেয় নাই। রাইত পোয়াইলেই রোজা। আমরা কি খামু? আমাদের কিছুই দেয় না। গত মাসে অপারেশন (গলায় টিউমার) হয়েছে। বাসায় কামেও যাইতে পারতেছি না। আমাদের অবস্থাতো খারাপ। আমরা এখন কী করমু? পোলাপান নিয়া ঘরে ছয়জন মানুষ কেমনে খামু, কেমনে চলমু?
তিনি বলেন, তিন-চারদিন আগে শেওড়াপাড়া আসছিলাম। একটা মোবাইল নম্বর দিছে আর বলছে যে, শেওড়াপাড়ার পণ্য শেওড়াপাড়ায় দিবে। তারা বলছিল, তেল দিবো, চিনি দিবো, বুট দিবো, লবণ দিবো, ডাল দিবো ৬১০ টাকা দিয়া। তিনি বলেন, দেখি রোববার আবার আসতে পারি কি-না।

ওদিকে শেওড়াপাড়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক নারী বললেন, সকাল থেকে বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। মেয়ে মানুষ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি! সেখানে পণ্য নিতে এসেছিলেন আরও একজন নারী। তিনি বলেন, পরপর দুইদিন এসে ঘুরে গেছি। শেষদিন সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থেকে গেটে এসে শুনি আমারটা আজ দেয়া হবে না। খালি বলে- কাল আসেন। আসি, অপেক্ষা করে করে চলে যাই।