শিশু কোলে রিতার সাড়ে ৬ ঘণ্টার লড়াই

ভোর রাত থেকে দুপুর। দীর্ঘ সাড়ে ৬ ঘণ্টার অপেক্ষা। রিতা আক্তারের কোলে ফুটফুটে শিশু। মুখে ক্লান্তির ছাপ। হাতে বাজারের ব্যাগ। টিসিবি’র দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। স্বল্প মূল্যের পণ্য পাওয়ার অপেক্ষা। কখনো রোদে পুড়ছেন আবার খুঁজছেন গাছের ছায়া। সূর্যের তাপ এড়াতে কাপড় দিয়ে সন্তানের মুখ ঢেকে দিচ্ছেন বার বার। তবুও হাল ছাড়েননি।

কেটেছে অপেক্ষার ৬ ঘণ্টা। দীর্ঘ এ লড়াইয়ের পর তিনি হাতে পান স্বল্প মূল্যের টিসিবি’র পণ্য।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় রিতা আক্তার বলেন, সকাল ৬টার দিকে এসেছি বাচ্চাকে নিয়ে এখনো পর্যন্ত তাকে নাস্তা খাওয়াতে পারিনি। এক সপ্তায় যদি আমাদের দুই-তিনবার পণ্য দেয়া হয় তাহলে কিন্তু এত হয়রানি হতে হয় না। ভোরবেলা এসে সিরিয়াল দিয়ে রাখি কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত পণ্য নিতে পারি না। সারাদিন পার হয়ে গেলেও পণ্য পাওয়া যায় না। আমার মতো অনেকে বাচ্চা নিয়ে আসে। খালি হাতে চলে যেতে হয়। গত বুধবারও আমি এসেছি কয়েক ঘণ্টা পর খালি হাতে ফিরে গিয়েছি। আজ এসে পেলাম।
তিনি বলেন, গত রমজানে সবকিছুর দাম কম ছিল। এখন আমাদের দেশে যেই পরিমাণ পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে আমাদের মতো গরিব মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা পারছি না আর এইভাবে কিনে খেতে। তিনি বলেন, আগের রমজানে যা কিনেছি তার ৪ ভাগের ১ ভাগও কিনতে পারবো না। একটা জিনিস কিনতে গেলে হিমশিম খেতে হয়। এখন দেখা গেছে আমাদের সবকিছু মেনে নিয়ে খেতে হবে।

রাজধানীর আজিমপুরের স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা রোডে টিসিবি’র পণ্যের দোকানে গতকাল সরজমিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায়, স্বল্প মূল্যে পণ্য পেতে দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন। অসংখ্য মানুষের ভিড়। শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ নারী-পুরুষ। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের উপচেপড়া জটলা। অনেকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে পণ্য না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন একজনে কয়েকটি পণ্যের প্যাকেজ নিচ্ছেন আবার কেউ কেউ না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। দোকানের ভেতর থেকে পণ্য শেষ হয়ে গেলেও কমেনি বাইরে মানুষের দীর্ঘ লাইন। এদিকে যে পরিমাণ পণ্য দেয়ার কথা তার চেয়ে ৪ গুণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

লালবাগ থেকে এসেছিলেন জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে এসেছি। অসুস্থ মানুষ আমি। সেই সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছি এখনো পাইনি। সব জিনিসের দাম বেশি। আমরা গরিব মানুষ এত সময় ধরে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছি কিছুটা সাশ্রয় পাবো বলে। কিন্তু এখানেও এই অবস্থা। এই লাইনে দাঁড়িয়ে মান-ইজ্জত সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কিছু করার নেই। প্রত্যেক মাসে একবার করে দেয়ার কথা ছিল কিন্তু এইবার দুই মাস পরে আসলাম তাও পাইনি। কিছু করারও নেই বলারও নেই। পণ্য নিতে আসা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি সকাল ছয়টায় এসেছি। এখনও সিরিয়াল ধরে আছি। আয় হিসেবে আমাদের ব্যয় বেশি। সামনে রমজান আমাদের যে পরিস্থিতি অনেক কষ্ট হচ্ছে। সবকিছু নাগালের বাইরে। পণ্যের দাম দিন দিন বাড়ছে। এজন্য একটু স্বল্প মূল্যে নেয়ার জন্য এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। ভাগ্যে থাকলে নিবো না হলে চলে যাবো।