মুশফিকের রেকর্ডে বাংলাদেশের নয়া ইতিহাস

ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা যা বারবারই মাঠে মিলেছে প্রমাণ। এখানে দিন বদলায়, ইতিহাস হয়, চলে রেকর্ডের ভাঙা গড়া। ব্যাট-বলের লড়াই যেন রোদ আর মেঘের মতো লুকোচুরির খেলা। আগের ম্যাচেই বাংলাদেশ আয়াল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৩৩৮ রান করেছিল ৮ উইকেট হারিয়ে। ঠিক ৪৮ ঘণ্টাও স্থায়ী হলো না সেই রেকর্ড। দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগারদের সংগ্রহ ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান। যেখানে প্রথম ম্যাচে সাকিব আল হাসান ৯৩, তাওহীদ হৃদয় ৯২ রানে সেঞ্চুরি ছাড়ার আক্ষেপে পুড়ছিল সেখানে মুশফিকুর রহীম গড়লেন দেশের ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। তার ব্যাটে বাংলাদেশ পেলো ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এই ম্যাচেও সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েছিলেন লিটন দাস (৭০) ও নাজমুল হোসেন শান্ত (৭৩) রান করে। কিন্তু দু’জনই বাজে শটে বিদায় নেন।

দলীয় ১৯০ রানে চতুর্থ উইকেট পতনের পর জুটি বাঁধেন মুশফিক ও হৃদয়। শুধুমাত্র শেষ ৭৮ বলে ১২৮ রান যোগ করেন এই দু’জন। ১ রানের জন্য টানা দ্বিতীয় ফিফটি করতে পারেননি হৃদয়। কিন্তু ব্যাটে ঝড় তোলা মুশফিক ইনিংসের শেষ বলে এক রান নিয়ে নিজের নবম সেঞ্চুরি তুলে নেন মাত্র ৬০ বলে। যা বাংলাদেশের ক্রিকেটে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। আগেরটি ছিল সাকিব আল হাসানের দখলে। ৬৩ বলে সাকিব জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব। শুধু তাই নয়, নিজের মুশফিক এই ইনিংসেই বাংলাদেশের হয়ে তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পর ৭০০০ রানের মাইলফলকও স্পর্শ করলেন।
দলীয় ৪২ রানে অধিনায়ক তামিম আউট হন ২৩ রান করে। এরপর দলের হাল ধরেন লিটন ও শান্ত। শুরুর ধাক্কা সামলে রানের গতি বাড়ানো দুই টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান। এর মধ্যেই ব্রেক থ্রু দিলেন কার্টিস ক্যাম্পার। তার সাদামাটা এক ডেলিভারিতে ফ্লিক করতে গিয়ে অন সাইডে সহজ ক্যাচ তুলে লিটন। ৩টি করে চার-ছ’য়ে ৭১ বলে ৭০ রান করেছেন তিনি। শান্তর সঙ্গে লিটনের জুটিতে এসেছে ৯৬ বলে ১০১ রান। তবে লিটন এই ইনিংস খেলার পথে অভিষিক্ত ম্যাথু হামফ্রেজের বল পুল করে ছ’য়ের মার হাঁকান লিটন। সেই সঙ্গে পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের ৮ম ফিফটিতে। একই সঙ্গে পূরণ করলেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২ হাজার। বাংলাদেশের নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে ২ হাজার রানের মালিক এখন তিনি। এই মাইলফলক স্পর্র্শ করতে ৬৫ ইনিংস লেগেছে তার। এর আগে শাহরিয়ার নাফীসেরও লেগেছিল একই সমান ইনিংস। এরপর শান্তও ফিরেছেন বাজে এক শটে। শান্ত তার ২০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তৃতীয় ফিফটি তুলে নিয়ে জাগিয়েছিলেন প্রথম সেঞ্চুরির আশা। কিন্তু হয়নি, তিনিও এক বাজেশটে আউট হয়ে ফিরেছেন সাজঘরে। তার আগে আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে ৯৩ রান করা সাকিব আউট হন ১৭ রান করে।
শান্তর বিদায়ের পর থেকেই শুরু করেন মুশফিক ও হদয়। আগের ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন দু’জনেই। বিশেষ করে ছয় নম্বর পজিশনে বেশ সাবলীলভাবেই খেলছিলেন মুশফিক। আগের ম্যাচে ২৬ বলে ৪৩ রান করে আউট হলেও গতকাল মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন মুশফিক। শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে খেলছিলেন তিনি, এমন মুশফিককে এর আগে খুব বেশি দেখা যায়নি। ফিফটি তোলার পর যেন আরও ধারালো হয়ে ওঠে মুশফিকুর রহীমের ব্যাট। মাঠের চারদিকে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে থাকেন তিনি, এই মুশফিককে দেখতে পারাও যেন চোখের শান্তি। এদিকে মুশফিককে যোগ্য সঙ্গ দিতে থাকেন তাওহীদ হৃদয়। সুযোগ পেলেই আক্রমণ করতে থাকেন তিনিও, খেলতে থাকেন
উইকেটের চারদিকে। যদিও অর্ধশতক স্পর্শ করতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই ফিরতে হয়েছে তাকে। ৪ চার আর ১ ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৯ করে ফেরেন হৃদয়।
৪৬.২ ওভারে দলীয় ৩১৮ রানে আউট হন হৃদয়। তার বিদায়ে ভাঙে মুশফিকের সঙ্গে গড়ে তোলা তার ৮০ বলে ১২৮ রানের জুটি। এরপর ইয়াসির আলীর সঙ্গে যোগ করেন ১৭ বলে ২১ রান, শেষ ওভারে ৭ বলে ৭ করে আউট হন ইয়াসির। সেখান থেকে লড়াই চালিয়ে ইনিংসের শেষ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি!