সৌদি আরবে ৭ হাজার বছরের পুরনো মরু প্রান্তরে মানুষের দেহাবশেষ এবং পশুর হাড় উদ্ধার

সৌদি আরবের প্রত্নতাত্ত্বিকরা ৭ হাজার বছরের পুরানো মরুভূমির প্রান্ত থেকে শত শত প্রাণীর হাড় এবং মানুষের দেহাবশেষ আবিষ্কার করেছেন। একসময় এই প্রান্তটি একটি ধর্মীয় স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতো। যে মানুষের দেহাবশেষগুলি পাওয়া গেছে তাদের বয়স তিরিশের কাছাকাছি। দেহাবশেষগুলি আয়তকার কাঠামোর মধ্যে পাওয়া গেছে, যার আরবি নাম মুস্তাটিল। ধ্বংসাবশেষটি ১৯৭০ এর দশক থেকে সৌদি আরবে আবিষ্কৃত ১৬০০ টিরও বেশি মুস্তাটিলের মধ্যে একটি। এগুলি বেশির ভাগই বালির নীচে নিমজ্জিত ছিল। কাঠামোগুলি যখন তৈরি করা হয়েছিল যখন আরব মরুভূমি একটি তৃণভূমি ছিল যেখানে হাতিরা বিচরণ করত এবং জলহরা হ্রদে স্নান করত। গবেষকরা বলছেন, মুস্তাটিলের নির্মাতারা একটি অজানা সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ধীরে ধীরে তৃণভূমি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হওয়ায় এই সদস্যরা সম্ভবত অজানা দেবতাদের কাছে তাদের গবাদি পশু বলি দিয়ে জমিকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন।

PLOS One জার্নালে একটি সমীক্ষায় রহস্যময় কাঠামো এবং তাদের উপাসকদের নিয়ে আরও বিশদ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে । ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ইউনিভার্সিটির একজন প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার প্রধান লেখক মেলিসা কেনেডি লাইভ সায়েন্সকে বলেন, “মুস্তাটিল এবং তাদের ঘিরে থাকা বিশ্বাস সম্পর্কে এতদিন প্রায় কিছুই লেখা হয়নি।

শুধুমাত্র ১০টি মুস্তাটিল খনন করা হয়েছে, এবং এই গবেষণাটি প্রকাশিত হওয়া প্রথমগুলির মধ্যে একটি। তাই আমরা এখনও এই ঐতিহ্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানি না।” একেকটি মুস্তাটিলের আকৃতি একেকরকম। এগুলি সাধারণত ৪ ফুট উঁচু পাথরের দেয়াল থেকে গঠিত লম্বা আয়তক্ষেত্র। কেনেডি বলেন, খননকাজের পর কিছু ধ্বংসাবশেষের ভিতরে জটিল কাঠামোর গঠন দেখা গেছে। যার মধ্যে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দেয়াল এবং স্তম্ভ মিলেছে। এগুলি সাধারণত ভোজ এবং আচার-পালনের জন্য ব্যবহৃত হতো ।
মুস্তাটিলের মাথার কাছে একটি বেইটল বা পবিত্র পাথর রাখা হতো যার মাধ্যমে সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের দেবতার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করতো বলে অনুমান। গবেষকদের দ্বারা খনন করা মুস্তাটিলটি প্রাচীন শহর আলউলা থেকে ৩৪ মাইল পূর্বে অবস্থিত, এটি ৪৬০ ফুট দীর্ঘ এবং স্থানীয় বেলেপাথর দ্বারা নির্মিত। এর চারপাশে গবেষকরা প্রাণীর খুলি এবং শিং এর ২৬০ টি টুকরো খুঁজে পেয়েছেন। হাড়ের টুকরোগুলি মূলত গৃহপালিত ছাগল, গজেল এবং ছোট রমিন্যান্টের। কেনেডির মতে, বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষজন তাদের সাথে পশু নিয়ে আসত। এই ধর্মীয় স্থানে জবাই করতো। শিং এবং মাথার খুলির উপরের অংশগুলি দেবতার কাছে অর্পণ করত এবং অবশিষ্টাংশগুলি সম্ভাব্যভাবে ভোজ হিসেবে গ্রহণ করা হতো।

মুস্তাটিলের মাথার উত্তরে গবেষকরা একটি সমাধিকক্ষ পেয়েছেন যেগুলি সাধারণত ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নিওলিথিক এবং ব্রোঞ্জ যুগে নির্মিত হতো । সাইটে গবেষকরা যে মানবদেহের হাড় উদ্ধার করেছেন সেগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সেই ব্যক্তির বয়স ৩০ নয়তো ৪০ বছর হবে। সম্ভবত তার অস্টিওআর্থারাইটিস ছিল। মানুষ এবং পশুর হাড়ের রেডিওকার্বন ডেটিং দেখায় যে পশু জবাই করার ৪০০ বছর পরে ওই ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়েছিল। এটি বোঝায় যে যে মুস্তাটিলগুলি তীর্থক্ষেত্র হিসেবে জনপ্রিয় ছিলো ।মুস্তাটিল উপাচারের উদ্দেশ্য আজও একটি রহস্য রয়ে গেছে।

যেহেতু মরুভূমি-বিস্তৃত কাঠামোগুলি ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হোলোসিন আর্দ্র সময়কালে নির্মিত হয়েছিল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে সেগুলি বালির অনেক গভীরে চাপা পড়ে গেছে। গবেষকরা মনে করেন যে এই কাঠামোর অভ্যন্তরে প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠান এবং বৃষ্টির সাথে শুকনো জমিকে উর্বর করার কোনো প্রথার সংযোগ থাকতে পারে। গবেষকরা এখন মুস্তাটিলের কাছাকাছি প্রাগৈতিহাসিক ভূমি, নদী এবং হ্রদগুলিতে ভৌগলিকভাবে ম্যাপিং করে আরো তথ্য জানার চেষ্টা করছেন। আগামীদিনে হয়তো মুস্তাটিল সম্পর্কে অনেক অজানা দরজা খুলে যাবে।