বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ১০,০০০ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী আতঙ্কে

ফিলিস্তিনের বিভিন্ন শহরে আগ্রাসন শুরু করেছে ইসরাইলি সেনারা। তারা বেপরোয়াভাবে গ্রেপ্তার অভিযান চালাচ্ছে। এ সময় হত্যাকাণ্ডও সংঘটিত করছে। এর ফলে ইসরাইলি বসবাসকারী এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত প্রায় ১০,০০০ ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী রয়েছেন আতঙ্কে। বিভিন্ন সূত্র আরব নিউজকে নিশ্চিত করেছে যে, এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে কমপক্ষে ২৫০ জন ইউনিভার্সিটি ছেড়ে গেছেন। তারা ইসরাইলের ভিতরে তাদের আবাসনে অবস্থান করছেন। উল্লেখ্য, জেনিনে আরব আমরিকান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন প্রায় ৫০০০ শিক্ষার্থী। আন-নাজাহ ইউনিভার্সিটিতে ৩০০০, আবু দিসে অবস্থিত জেরুজালেম ইউনিভার্সিটিতে ১১০০ এবং হেব্রন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থী। ফিলিস্তিনিদের হয়রানির অন্যতম একটি কারণ হলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফিলিস্তিনি ইউনিভার্সিটিগুলো বছরে ৮০ লাখ ডলার পায়। যদি তারা ইউনিভার্সিটি ত্যাগ করে তাহলে এসব প্রতিষ্ঠান লোকসান খাবে এবং ইসরাইলি ইউনিভার্সিটিগুলো লাভবান হবে।

ইসরাইলের ভিতরকার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনি ইউনিভার্সিটিগুলোর জন্য একটি ভাল আয়ের উৎস। তারা ইউনিভার্সিটিগুলোর কাছে বাসা ভাড়া নেন। ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে তারা অবদান রাখেন।
ওইসব শহরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। এসব কারণে, এসব ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন করা শিক্ষার্থীদের ওপর ইসরাইলের হয়রানি, অনুসন্ধান, জিজ্ঞাসাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। উল্লেখ্য, ইসরাইলি নিরাপত্তা এজেন্সি শিন বেত শুধু ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মনিটরিং করতে একটি বিশেষ ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জালাল বান্না বলেন, এসব শিক্ষার্থী ভূ-তাত্ত্বিক দিক দিয়ে এমন সব এলাকায় বসবাস করেন, যা ইসরাইলের জন্য বড় রকমের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের দেখা হয় সন্দেহের চোখে। ওদিকে ফিলিস্তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা ইসরাইলের ভিতরে অবস্থিত আরব কলেজগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে পড়ার সুবিধা চেয়েছিল। কিন্তু সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইলের শিক্ষামন্ত্রী। ইসরাইলের ভিতরে বসবাস করেন ফিলিস্তিনি ইউনিভার্সিটির একজন লেকচারার। তার নাম আমির আসি। তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি তা সরিয়ে নিতে রাজি নয় ইসরাইল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন লেকচারার ইউসেফ জাবারিন বলেন, ইসরাইলের ভিতরে ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য আরব ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইসরাইল, যেখানে আরবিতে পড়াশোনা দেয়া হবে। একই সঙ্গে তাদেরকে নিরাপত্তার অজুহাতে ফিলিস্তিনি ইউনিভার্সিটিতেও পড়তে দেয়া হয় না।

ওদিকে জেনিনের গভর্নর মেজর জেনারেল আকরাম রাজুব বলেছেন, জেনিন এবং সেখানকার ক্যাম্পে ইসরাইলি সেনাবাহিনী আগ্রাসন চালাচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় জনতার মধ্য বিপর্যয়কর এক প্রভাব পড়ছে। জেনিন এবং সেখানকার শরণার্থী ক্যাম্পে ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পবিত্র রমজান শুরুর আগে নিম্ন আয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য তিনি ২০০ কুপন বিতরণ করেন,যাতে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে সেরকম ৭০০ কুপন প্রয়োজন। অন্রদিকে জেনিন ও ক্যাম্পকে ইসরাইলি সেনারা তাদের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র বানিয়ে নিয়েছে। সেখানে বিভিন্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। ব্যবহার করছে ড্রোনের মতো প্রযুক্তিও।