পেকুয়া প্রতিনিধি:
চকরিয়া উপজেলার নিকটবর্তী এলাকা লামা উপজেলার আজিজ নগর ও চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নে মাদক স¤্রাট ও বনখেকো তোফাইল আহমদ ফের বেপরোয়া হয়ে ওঠছেন। সদ্য ২বছর সাঁজা ভোগ করে জেল থেকে বের হয়ে তার ভাই মোরশেদ ও প্রতিবেশি শাহাজাহানকে দিয়ে পাহাড়ের গাছ নিধন অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে চকরিয়া-কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে বন মামলা, থানা মামলাসহ অর্ধশত মামলা থাকলেও পুলিশের চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে মাদকের পাশাপাশি পাহাড়ের গাছ নিধন অব্যাহত রাখলেও বনকর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অসহায়।
একাধিক মামলার আসামী তোফাইল ও তার সহযোগিতের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কয়েকবার পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও কার্যত তার বাহিনী আরো বেপরোয়া হয়ে মাদকসহ পাহাড়ের গাছ নিধন অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও স্থানীয় ভোক্তভোগিরা স্থানীয় থানা ও আদালতে মামলা দায়ের করলে তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন।
সূত্রে জানা গেছে, মাদক ও গাছ খেকো হারবাং কলাতলি এলাকার আহমদ কবিরের পুত্র মো: তোফাইল আহমদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় জি.আর ৫টি, চকরিয়া আদালতে বন মামলা ১৬টি, লোহাগাড়া থানায় জি.আর মামলা ৪টি, লাম থানায় জি.আর ৩টি, চন্দনাইশ থানায় জি.আর ১টি, চট্টগ্রাম আদালতে ৯টি বন মামলা চলমান রয়েছে। সদ্য আদালত থেকে ২বছর সাজা ভোগ করে বের হয়েছেন। এছাড়াও তার সহযোগিসহ চকরিয়াসহ আরো কয়েকটি থানা ও আদালতে ২০টির অধিক মামলার আসামী তোফাইল তার বাহিনীকে আরো বেশি শক্তিশালী ভাবে গড়ে তুলতে চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে সেগুণ, গর্জন, মেহগনি ও আকাশমণিসহ বনবিভাগের কাজ নিধন করে চলছে। যে কাজে ব্যবহার করছেন তার ভাই মোরশেদ ও শাহাজাহান নামের এক ব্যক্তি।
সূত্রে আরো জানা গেছে, বনবিভাগের গাছগুলো মাসিক মাসোহারায় চকরিয়া-পেকুয়া-বাঁশখালী ছাড়াও আনোয়ারা হয়ে চট্টগ্রাম পাচার করে চলছে তোফাইল গং। যার কারণে বনবিভাগের গাছ শূন্যের কোটায় হয়ে পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় জলবায়ুর মারাত্মক প্রভাবের কারণে প্রাকৃতিক দূর্যোগও ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। এছাড়াও গাছের গাড়ির সাথে মাদকের বড়বড় চালাও দিয়ে থাকেন তিনি। এমন অভিযোগ স্থানীয় এলাকাবাসীর।
এসব মাদক হাতের নাগালে পেয়ে ধ্বংসের ধারপান্তে পতিত হচ্ছে যুব সমাজ। মাদক সেবন করতে গিয়ে অনেক কিশোর, তরুণ জড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন অপরাধে। হারবাং-আজিজনগর একই সীমা রেখায় অবস্থিত হওয়ায় আজিজনগর মগপাড়া তৈরি বাংলা মদের ডিপো থেকে সড়ক পথে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, রাঙ্গুনিয়া, কর্ণফুলী, বাঁশখালী ও আনোয়ারাসহ চট্টগ্রাম মহানগরের মাদকের বিভিন্ন আখঁড়ায় পাচার করছে প্রভাবশালী মহলটি। মাঝেমধ্যে এসব মাদকের চালান পুলিশের হাতে মাঝপথে আটক হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, মাদকের গডফাদার ও অর্ধ শতাধিক মাদক-বন মামলার আসামী তোফাইল আহমদ মাদকসহ পুলিশের হাতে কয়েকবার হাতেনাতে গ্রেফতার হয়ে কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসলে ফের নির্ভয়ে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য বেচাকেনা করছে। এসব মাদকের চালান থেকে মাসে কোটি টাকার বানিজ্য করছে এ সিন্ডিকেট। আজিজনগর থেকে দীর্ঘদিন ধরে তোফাইলের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা অব্যাহত থাকায় এলাকায় নিত্যদিন বেড়ে চলছে নানা অপরাধ। এতে স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা উদ্ধিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তাই যেকোন মূল্যে হারবাং ইউনিয়নের কলাতলী ৯নং ওয়ার্ডের মাদকের গডফাদার বহু অপকর্মের হোতা তোফাইলকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন সচেতন এলাকাবাসী। র্যাবের অভিযানে তোফাইল সহ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হলে হারবাং-আজিজনগর এলাকার মাদকের হাট বন্ধ হবে বলে মনে করেন উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ।
এদিকে বন কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া, বাঁশখালী ও কক্সবাজার জেলার চকরিয়া বনভূমিতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য। এসব বনভূমিতে গাছ কাটা, পাচার করা, বন্যপ্রাণী ধরা, শিকার ও হত্যা করা তার নিত্য ব্যাপার। বনবিভাগের মামলার কারণে তার সাঁজা হলেও ফের বের হয়ে আবারো অপকর্ম শুরু করেছে। এছাড়াও সরকারী বনভূমি দখল করে হাজার হাজার একর ভূমিতে অবৈধ বসতি গড়ে তুলছেন তিনি। যার কারণে উজাট হচ্ছে সরকারী বনভূমি। লিখিত অভিযোগে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয় তাকে আইনের আওতায় আনারও দাবী জানান।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তোফাইল আহমদের ব্যবহৃত মোঠোফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও তার বাড়িতে গিয়ে তার ঘর তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
চিরিঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাঈদুল ইসলাম বলেন, তোফাইলের বিরুদ্ধে অনেক মামলা চলমান রয়েছে। বেশিরভাগ বন মামলা। তিনি গাছ পাচার করে থাকেন পুলিশের চোঁখকে ফাঁকি দিয়ে। তার কাছ থেকে কোন ধরণের মাসোহারা আমার কার্যালয় নেয়না।
চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাদক ব্যবসার ব্যাপারে কোন ছাড় নেই। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ অভিযান চালাবে। তবে গাছ পাচারের বিষয়ে আমরা অবগত নয়।