চুলের গল্পস্বল্প

চুল যেমনি ব্যক্তি সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলে আবার নারী ও পুরুষ উভয়কে করে শোভামণ্ডিত। তাই সভ্যতার এই শ্রেষ্ঠ সময়ে চুল নিয়ে গড়ে উঠেছে নানা ইনস্টিটিউট, সেন্টার ও পার্লার। এ ছাড়াও বছরজুড়ে চলে বিভিন্ন রকমের কর্মশালা, সেমিনার। আবার বিশ্বের বিভিন্নস্থানে ডার্মা চিকিৎসকরা মিলিত হচ্ছে চুল সম্পর্কিত মেলায়। যেন চুল নিয়ে একটা যুদ্ধ চলছে বটে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। কারণ মানুষের আছে অতি উন্নত মস্তিষ্ক। অনেকে বলে মস্তিষ্ক পাহারা দেয় চুল, তাকে চারদিকে ঘিরে রেখেছে। চুলের যদি কোনো সংজ্ঞা থাকতো তাহলে এভাবে দেয়া যেত-“চুল হচ্ছে এমন এক উপাদান যা মানব মস্তিষ্ককে চারদিকে সৌন্দর্য বর্ধন ও সুরক্ষার জন্য মাথার উপরিভাগের ত্বককে ঘিরে রাখে বা আবৃত করে রাখে।”সাধারণত চুল নিয়ে মেয়েদের পাশা-পাশি ছেলেরাও চিন্তিত। তবে আজকের যুগে ছেলেরা চুল নিয়ে বেশ সচেতন।

বিশেষ করে ছেলেদের চুল যখন আস্তে আস্তে কমতে থাকে তখন সচেতনতা বেড়ে যায়।

আর চুল নিয়ে গবেষণার যেন শেষ নেই। মানুষের মাথায় চুল কেন সব সময় বাড়তে থাকে। চুল থাকা সত্ত্বেও মাথা কেন ঠাণ্ডা থাকে, এ নিয়েও রয়েছে রহস্য। এই রহস্যগুলোর সঙ্গে চুলের মজার তত্ত্ব রয়েছে। চুল বা লোম হচ্ছে ত্বকের বহিঃস্তরের অবস্থিত ফলিকল থেকে উৎপন্ন হওয়া লম্বা সুতার মতো প্রোটিন উপাদান। চুলের প্রধান উপাদান হছে কেরাটিন। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে যে নরম সুন্দর চুল পাওয়া যায় তাকে ‘ফার’ বা লোম বলে। ত্বকের উপরিতলের কোষ বা এপিডারমাল সেল থেকে চুলের উৎপত্তি। হেয়ার ফলিকল তৈরি হয় এপিডারমাল সেল থেকে। হেয়ার ফলিকলের একেবারে গভীরতম অংশ বা হেয়ার স্তরের বিভাজনে তৈরি হয় নতুন নতুন কোষ। এই নবীন কোষগুলোতে বিশেষ ধরনের প্রোটিন জমতে থাকে। সাধারণ প্রেটিন থেকে কিছুটা আলাদা ও শক্ত। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মাথায় প্রায় এক লাখ চুল থাকে। মানুষের চুল প্রতিদিন ০.৫ মিমি বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মাথায় চুল সমানভাবে বাড়ে না। রাতে চুল খুব ধীরে বাড়ে। সকালে এর গতি বাড়তে থাকে। বেলা ১০-১২টার মধ্যে চুল সবচেয়ে বেশি বাড়ে। কিন্তু দুপুর থেকে চুল বাড়ার গতি কমতে থাকে। বিকালে আবার বাড়ে কিন্তু সন্ধ্যায় গতি কমতে থাকে। চুল বৃদ্ধি পাওয়া ও গজানো শীতকালে থেকে গরমকালে বেশি। মজার ব্যাপার হলো গরমকালে চুল দ্রুত বাড়ে। দৈনিক কিছু চুল স্বাভাবিক ভাবে পড়ে যায় একই ভাবে আবার কিছু গজায়। এখানে জানার বিষয় হলো, চুল পড়া ও চুল গজানোর সমতা যখন থাকে না তখনই চুল পাতলা হতে শুরু করে। দিনে প্রায় ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। অনেক রকম ইনজেকশন বিভিন্ন রোগ, ওষুধের ব্যবহার এবং খাদ্যের ভিন্নতার কারণে সাধারণত চুল পড়ে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, ৯৫ ভাগ চুল পড়ার কারণ জিনগত বা বংশগত। এ অবস্থাকে বলা হয় অ্যান্ডোজেনিক অ্যালেপেসিয়া বা অ্যানড্রোজেন অর্থাৎ পুরুষ হরমোন এ সমস্যার জন্য দায়ী। মূলত এ কারণেই ছেলেদের চুল বেশি বৃদ্ধি পায়। বৃদ্ধ বয়সে চুল ঝরার হার বেশি।

লেখক: হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট ও ডার্মাটো সার্জন চেম্বার: কামাল হেয়ার এন্ড স্কিন সেন্টার বিটিআই সেন্ট্রা গ্র্যান্ড (২য় তলা) গ্রিনরোড, ফার্মগেট, ঢাকা প্রয়োজনে: ০১৭১১৪৪০৫৫৮