প্রস্তুতি সম্পন্ন, বঙ্গবন্ধুকন্যার অপেক্ষায় চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে রবিবার (০৪ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের জনসভায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জনসভা ঘিরে বদলে গেছে বন্দরনগরীর চিত্র। নগরজুড়ে সাজসজ্জা ও লাইটিং করা হয়েছে। উৎসবের আমেজ শহরের প্রতিটি প্রান্তে। জনসভা ঘিরে নগরীর মানুষের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতারা পৌঁছে গেছেন। জনসভার মঞ্চ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে। ৮৮ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৬০ মিটার লম্বা এই মঞ্চে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন।

এর আগে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ চট্টগ্রামের এই ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রী বিশাল জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামের এই জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামবাসীকে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্প উপহার দেবেন বলে আশা নগরবাসীর।

নেতাকর্মীদের প্রচার-প্রচারণা

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে গত এক মাস ধরে চট্টগ্রামজুড়ে চলছে প্রচার-প্রচারণা। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। ঘোড়ার গাড়ি, নৌকার আদলে গাড়ি, একাধিক পিকআপ একসঙ্গে, সাইকেল র‌্যালি, মোটরসাইকেল র‌্যালিসহ নানাভাবে জনসভার প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। সেইসঙ্গে নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে মাইকিং এবং বিভিন্ন যানবাহনে করে মাইক বাজিয়ে প্রচারণা চালানো হয়। ইতোমধ্যে নগরী ছেয়ে গেছে পোস্টার, ব্যানার, পেস্টুন ও তোরণে। বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ।

সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন

জনসভা ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছেন আয়োজকরা। প্রস্তুত হয়েছে নৌকার আদলে জনসভার মঞ্চ। মঞ্চটির দৈর্ঘ্য ৮৮ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট। মূল মঞ্চের সামনে থাকবে ১৬০ মিটার লম্বা একটি নৌকা। এই মঞ্চে একসঙ্গে ২০০ অতিথি বসতে পারবেন। সমাবেশস্থল ছাড়াও নিউমার্কেট, কদমতলী, সিআরবি ও টাইগারপাসসহ আশপাশের এলাকায় থাকবে ৩০০ মাইক।

উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা
জনসভার সময়

সকাল ৮টায় পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় প্রবেশের গেট খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে নেতাকর্মীরা মাঠে প্রবেশ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা আড়াইটায় সভাস্থলে আসার কথা রয়েছে। তিনি বিকাল ৩টায় ভাষণ শুরু করবেন।’

জনসভার নিরাপত্তায় ১০০ সিসি ক্যামেরা

জনসভার নিরাপত্তায় পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও আশপাশের এলাকায় ১০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নিয়ে কোনও হুমকি নেই। তবু সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১০০ সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।’

জনসভার স্থান পরিদর্শন

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জনসভার স্থান পরিদর্শন করেন। তারা শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এর মধ্যে সকাল ১০টায় জনসভার স্থান পরিদর্শন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহম্মদ এমপি, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রনহমান, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, উত্তর জেলা সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়
দুপুরে জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আব্দুর রহমান, উপ-দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

মেডিক্যাল বুথ

জনসভায় চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে থাকবে তিনটি মেডিক্যাল বুথ। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘জনসভায় তিনটি মেডিক্যাল বুথ থাকবে। যেখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য সহকারী থাকবে। এসব মেডিক্যাল বুথ থেকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। পাশাপাশি থাকবে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস। কাউকে হাসপাতালে আনার প্রয়োজন হলে এসব অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ব্যবহার করা হবে। এছাড়া জনসভার মাঠে দুটি অস্থায়ী হাসপাতালসহ থাকবে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে ১০ সদস্যের আরও তিনটি মেডিক্যাল টিম।’

আবহাওয়া

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিত চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকবে। এরপর রোদের দেখা মিলবে। বিকালের দিকে পুনরায় হালকা কুয়াশা দেখা যাবে। সন্ধ্যায় কুয়াশা কেটে গিয়ে হিমেল হাওয়া বইতে থাকবে।’

আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জনসভার স্থান পরিদর্শন করেন
দায়িত্বে সাড়ে সাত হাজার পুলিশ

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে থাকবে কঠোর নিরাপত্তা বলয়। জনসভা ও এবং আশপাশে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে সাড়ে সাত হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। জনসভা ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে আমাদের।’

পাঁচ লাখ চকলেট বিতরণ করবে ছাত্রলীগ

পলোগ্রাউন্ড মাঠের জনসভায় আগত নেতাকর্মীদের মাঝে পাঁচ লাখ চকলেট বিতরণ করবেন চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মায়মুন উদ্দীন মামুন বলেন, ‘জনসভায় আগত লোকজনের মাঝে পাঁচ লাখ চকলেট বিতরণ করা হবে। এজন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছি। চট্টগ্রাম কলেজ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সকালে মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেবেন।’

আলপনা

প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আগমন ঘিরে নগরীর সিআরবি সাত রাস্তার মাথা এলাকায় এবং সমাবেশস্থলের আশপাশে আলপনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার তারা এসব আলপনা আঁকেন। চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্র আবু নাহিদ বলেন, ‘চারুকলা ইনস্টিটিউট মূল ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবিতে ২০ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। মূল ক্যাম্পাসে চারুকলা ইনস্টিটিউট ফিরিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এ আলপনা আঁকা হয়েছে।’

জনসভার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন কেন্দ্রীয় নেতারা
খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পলোগ্রাউন্ড মাঠে আগমণ উপলক্ষে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে এবং শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনায় মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে শনিবার বাদ আসর কদম মোবারক শাহী জামে মসজিদে এ আয়োজন করা হয়। এতে ৭৫’র ১৫ আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে জনসভা সম্পূর্ণ করার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া কামনা করা হয়।

এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দীন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ও মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সফর আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক চৌধুরী হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘শুধু পলোগ্রাউন্ড ময়দান নয়, সারা চট্টগ্রাম নগরীকে জনসমুদ্রে পরিণত হবে। প্রিয় নেত্রীকে দেখতে লাখ লাখ মানুষ আসবে। এতে সভাস্থল ছাপিয়ে আশপাশের এলাকাও জনসমুদ্রে রূপ নেবে।’