চা বিক্রেতা বাক-প্রতিবন্ধী ‘মনিষা’ সংসারের খরচ যুগিয়ে যাচ্ছেন কলেজে

বাক-প্রতিবন্ধী মনিষা সাহা। ঠিকমতো কথা বলতে না পারলেও আঠারো বছর বয়সে বাবা-মায়ের একমাত্র ভরসা এই কিশোরী। সকাল সন্ধ্যায় চা বিক্রি করে সংসারের খরচ জোগাড় করতে হচ্ছে তাকে। আবার চালাতে হচ্ছে পড়ালেখাও। মেধার কমতি নেই মনিষার। জয়রামকুড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এদিকে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে চলছেন পিতা মিলন সাহা। অসুস্থ পিতাকে সুস্থ্য করে তুলতে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন মনিষা। রোববার বিকালে মনিষার চায়ের দোকানে গেলে দৈনিক মানবজমিন-এ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানা যায় এমন তথ্য। মনিষা জানান, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান তিনি।

একখণ্ড জায়গা-জমি নেই পরিবারটির। হালুয়াঘাট পোস্ট অফিস রোডে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থেকে চা বিক্রি করে লেখাপড়ার পাশাপাশি অদম্য লড়াই করে চলেছেন আঠারো বছর বয়সী এই মেয়েটি। এদিকে বাবা মিলন সাহা গলায় টিউমারে আক্রান্ত। স্থানীয়দের সহযোগিতায় একবার অপারেশন করেও শেষ রক্ষা হয়নি। পরবর্তীতে আবারও দেখা দেয় স্বাস্থ্যের অবনতি। গলার টিউমারটি আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। এমতাবস্থায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন পরিবারের প্রতিটি সদস্য। কোনো প্রকার উপায়ন্তর না পেয়ে হতাশ হয়ে যান মনিষা। বারবার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা আয় তাকে। চা বিক্রি করে কয়েকটি টাকা পেলেও তা দিয়ে চলে না সংসার। বাসাভাড়া, স্কুল খরচ, সংসার খরচ সবকিছুই যেন নাগালের বাহিরে। এমন দুর্ভোগের মধ্যে নতুন করে সামনে আসে চিকিৎসা খরচ। অপারেশন করতে প্রয়োজন অনেক টাকা। তাই চা বিক্রি করে পরিবারটির জন্যে কিছুটা হলেও ভরসা জুগিয়ে যাচ্ছেন। মনিষা বলেন, আমি সকলের সহযোগিতা চাই। বাবা-মা ছাড়া এই দুনিয়াতে আর কেউ নেই আমার। আমার বাবাকে সুস্থ করতে চাই। প্রতিবন্ধী মনিষার অদম্য লড়াইয়ের সাক্ষী প্রতিবেশীসহ তার শিক্ষকরাও। মনিষার শিক্ষক আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধী হয়েও এই বয়সে অদম্য লড়াই করতে হচ্ছে তাকে। বাবা-মা অসুস্থ থাকায় কষ্ট করে যাচ্ছে মেয়েটি। সকলের সহযোগিতা পেলে হয়তো বাবার চিকিৎসা করাতে পারতো। বাবা-মায়ের চিকিৎসার খরচ যোগাতে পড়ালেখার পাশাপাশি মনিষা সাহার এমন অদম্য পরিশ্রমের বর্ণনা দিয়েছেন জয়রামকুড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাদির। তিনি বলেন, মনিষা সাহা অনেক মেধাবী। তার জন্যে কলেজের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগিতা করা হয়। মনিষার কাছ থেকে কোনো টাকা-পয়সাও নেয়া হয় না। সকলে এগিয়ে এলে একটি পরিবারটি একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারে।