আবু সাঈদ ভূঁইয়া, মিরসরাই :: 
মিরসরাইয়ের সাগরে ডুবে যাওয়া ড্রেজার থেকে দুর্ঘটনার প্রায় ৬৩ ঘন্টার পর উদ্ধার হলো নিহত আট শ্রমিকের সর্বশেষ মৃতদেহটি। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বশর হাওলাদার (৩৫) এর লাশ উদ্ধারের পর উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে শাহিন মোল্লার (৩৫) ও সাড়ে ৯টায় তারেক মোল্লার (২৮) লাশ উদ্ধার করা হয়।
গত সোমবার উপজেলার ১৬ নং সাহেরখালি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ৩ নং বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে ৫০০ ফুট দুরত্বে সাগরের মাঝে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন রাখা ছিল। রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর কবলে সেখান থেকে আট শ্রমিক নিখোঁজ হন।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার রাতে নিখোঁজ হওয়ার পর মঙ্গলবার রাত ৯টায় প্রথম উদ্ধার করা হয় রহমান ফকিরের ছেলে মো. আল-আমিন ফকির। পরদিন বুধবার সকালে একসাথে উদ্ধার হয় আনিচ মোল্লার এক ছেলে ইমাম হোসেন মোল্লা, আব্দুল হক মোল্লার ছেলে মাহমুদ মাহমুদ মোল্লা, সেকান্দার বারির ছেলে মো. জাহিদ বারি। একইদিন রাত ১১টায় উদ্ধার হয় নুরু সরদারের ছেলে আলম সরদার। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে উদ্ধার হয় আনিচ মোল্লার আরেক ছেলে শাহিন মোল্লা, ইউসুফ আলী হাওলাদারের ছেলে বশর হাওলাদার ও সর্বশেষ রহমান খানের ছেলে তারেক মোল্লা। তারা সবাই পটুয়াখালী জেলা সদরের জৈনকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স এর উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ড্রেজারডুবিতে নিখোঁজ ৮ জন শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লাশগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ড্রেজার মেশিন সৈকত-২ এর ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম জানান, ওইদিন ঘটনাস্থলে আরো ৬টি ড্রেজার রাখা ছিল। ঘূর্নিঝড় এর সতর্কতা সংকেত পেয়ে অপরাপর সকল শ্রমিক নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও সমুদ্রে ঢেউ বেশী থাকায় আমাদের শ্রমিকদের আনার জন্য নৌকা ড্রেজারের কাছে যেতে পারেনি।
ড্রেজার থেকে বেঁচে ফেরা শ্রমিক মো. সালাম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে তীব্র বাতাস ও ঢেউয়ে সৈকত-২ নামে তাদের ড্রেজারটি মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে ডুবে যায়। ড্রেজারটির মালিক সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে নিয়োগ দিয়েছে বেপজা। ড্রেজারটিতে থাকা ৯ শ্রমিকের মধ্যে তিনি কিনারে আসতে পারলেও বাকি ৮ শ্রমিক আটকা পড়েন।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, গত তিন দিনের অভিযান শেষে সাগরে ড্রেজারডুবিতে নিখোঁজ সকল শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পর লাশগুলো উদ্ধার হয়েছে। আগে উদ্ধার হওয়া চারজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি চারজনের লাশও পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
