“একাত্তরের শহিদ ছবুর” বই যখন একটি ইতিহাস !

রশীদ এনাম জন্ম ২ অক্টোবর ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডে। ইশকুল বেলা থেকে লেখালিখি শুরু করেন রশীদ এনাম। শৈশবের পুরোটা কেটেছে নিজভূমে কখনও দাদা বাড়ি কখনও নানা বাড়ি সুচক্রদণ্ডী গ্রামে। ছোট বেলায় জন্মের পর নিজের মা অসুস্থ হয়ে পড়লে ফুফু মায়ের কাছে বড় হন। ফুফু মাকে তিনি মা বলে ডাকতেন।
কৃতিত্বের সাথে পটিয়া আবদুস সোবহান রাহাতআলী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও পটিয়া সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ^বিদ্যালয় কলেজ হতে হিসাব বিজ্ঞানে(সম্মান) ও চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ হতে হিসাব বিজ্ঞানে এম কম পাস করার পর কর্মজীবন শুরু করেন বাংলা লিংকের গ্রাহক সেবা কর্মকর্তা হিসেবে। বর্তমানে একটি প্রাইভেট ব্যাংকে জ্যৈষ্ঠ প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। দুরন্ত দস্যিপনায় বেড়ে উঠা ছেলেটি সখের বশে লিখতেন। পেশা তাঁর ব্যাংকিং এর বাহিরে আবেগ এবং অন্য একটি জগত হলো লেখালিখি এবং সংগঠন। শৈশবে একবার টুং টাং বেল বাজিয়ে আইসক্রিম ওয়ালা কে দেখে স্বপ্ন দেখেছিলেন আইসক্রিম ওয়ালা হওয়ার। হা হা হেসে বলেন হয়ে গেলাম লেখক ও ব্যাংকার। কাছের বন্ধুদের আড্ডার প্রাণবন্তমুখ এই তরুণ লেখককে চিনে একজন স্বপ্নবাজ গল্পকার ও প্রকৃতি প্রেমী হিসেবে। চট্টগ্রামের একটি দৈনিক পত্রিকায় পটিয়া প্রতিনিধি হিসেবে বেশ কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছেন। ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিষয়ক ফিচার লিখতেন চট্টগ্রামের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায়। এছাড়াও জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে তাঁর ছোট গল্প ও ফিচার ছাপা হয়। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত শিশু কিশোর জনপ্রিয় পত্রিকা টইটম্বুরের সদস্য ও ঢাকার সমন্বয় সহকারী হিসেবে সম্প্রতি নিয়মিত লিখছেন ইতিহাসের খসড়া ম্যাগাজিনে, শুধু লিখালিখিতে থেমে নেই।
সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য ভালোবাসার হাত বাড়িয়েছেন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের প্রতিও। নিষ্পেষিত পরিবারের শিশুদের জন্য চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় ‘বর্ণের হাতে খড়ি’ নামে একটি হেল্পলেস চাইল্ড ইসকুল করেছেন। বর্ণের হাতে-খড়ি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক লেখক নিজেই। একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবেও বেশ সুনাম রয়েছে বন্ধু মহলের কাছে। পটিয়ায় নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন, মাতাবিস(মাদক ও তামাক বিরোধী সংগঠন)। পটিয়া সৃজনশীল সাহিত্য গোষ্ঠী মালঞ্চের সংগঠক এবং পটিয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নেজাম স্মৃতি স্পোটিং ক্লাবের সাবেক সাধারন সম্পাদক। পটিয়া ক্লাব, চট্টগ্রাম সমিতি ও চট্টগ্রাম একাডেমীর আজীবন সদস্য এছাড়াও নিরলসভাবে কাজ করেছেন, প্রথম আলো চট্টগ্রাম জেলা বন্ধুসভায় ও বাংলাদেশ গণিত অলম্পিয়াডে। প্রতিবন্ধীদের অধিকার অর্জনে নিবেদিত সংগঠন বি-স্ক্যান(বাংলাদেশ সোসাইটি ফর চেঞ্জ এন্ড এডভোকেসী নেক্সাস) এর নির্বাহী সদস্য। ২০১৬ সালে একুশের বই মেলায় বলাকা প্রকাশন থেকে “একাত্তরের শহীদ ছবুর” নামে ১৪ বছর গবেষণা করে একটি বিস্মৃত অধ্যায় তুলে আনেন পাঠকের সম্মুখে। শহীদ ছবুর রোড সবাই চিনত কিন্তু শহীদ ছবুরকে কেউ চিনত না জানত না। বইটি প্রকাশিত হওয়ার বেশ পাঠক নন্দিত হয়। বইটি কেন্দ্র করে একাত্তরের শহীদ ছবুর ফেসবুক গ্রুপ প্রতিষ্ঠা হয়। এ গ্রুপে বর্তমানে সদস্য সংখ্যা প্রায় দুই হাজারেরও অধিক। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে শহীদ ছবুর সরাকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় পটিয়া হাইদগাও কেলিশহর এলাকায়। শহীদ ছবুর ফেসবুক গ্রুপ থেকে দাবী জানানোর শহীদ স্মৃতি বিজড়িত রাহাত আলী ইশকুল মাঠে এবং পটিয়া শেয়ান পাড়া শহীদ ছবুরের গ্রামে পশ্চিম পটিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়। এবং লেখকের নিজ পরিকল্পনায় শহীদ ছবুর ফেসবুক গ্রুপ, টইটম্বুর ও ইতিহাসের খসড়া পরিবারের সহযোগিতায় ২০১৯ সালে ২৮ মার্চ পটিয়া প্রথম শহীদ ছবুর শিশুতোষ পাঠাগার প্রতিষ্টা করা হয় ঐ দিনে শহীদ ছবুর পরিবারকে পটিয়ায় প্রথম সম্মাননা প্রদান করা হয়। সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ হলো শহীদ ছবুর ১৯৭১ সালে ২ অক্টোবর শহীদ হওয়ার পর কোন ধরনে শহীদ ভাতা পায়নি। ৫১ বছর পর শহীদ ছবুরের নাম গত ১৯ মে ২০২২ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণালয় গেজেটভুক্ত করেন। সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ শহীদ পরিবার অবশেষে ভাতা পেতে যাচ্ছেন। শহীদ ভাতা শহীদ ছবুরের পরিবারের
নাতী পর্যন্ত পাবে। শহীদ ছবুর পরিবার কৃতজ্ঞতা চিত্তের সাথে লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্বিকার করে বলেন যে, রশীদ এনাম শহীদ ছবুর কে নিয়ে প্রথম লিখেছেন এবং তা গবেষণাধর্মী বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর শহীদ ছবুর সম্পর্কে অনেকে জেনেছে নতুন প্রজন্ম চিনেছে শহীদ ছবুরকে। আমাদের ভাই শহীদ ছবুর শহীদ হওয়ার পর আমরা কখনও ভাতা বা সহযোগিতা পায়নি। চলতি বছরে আমাদের পরিবার শহীদ ছবুর ভাতা পেয়েছি। ইশকুল, শহীদ মিনার পাঠাগার সবকিছু হয়েছে বই প্রকাশের কারনে। লেখকের ২০১৮ সালে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলা ও রূপকথার গল্প নিয়ে পরির দিঘিতে ভূতের জাহাজ প্রকাশিত হয় টইটম্বুর প্রকাশন থেকে বইটি ছিল ২০১৮ সালে টইটম্বুর প্রকাশনে সর্বাধিক বিক্রিত বই। বইটি মুল মেসেজ ছিল প্রকৃতি জ্ঞান ও একান্তবর্তী পরিবারের বন্ধন এবং রূপকথার গল্প । ২০২০ সালে চট্টগ্রামের নিজস্ব সাংস্কৃতি মেজবান নিয়ে গবেষণা ও রম্যরচনা “ চাটগাঁইয়া মেজ্জান” ও আদিগন্ত প্রকাশন থেকে শিশুতোষ রচনা ভূতের পেন্সিলে আঁকা ছোট কাকুর গল্প। বই দুটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। লেখক “চাটগাঁইয়া মেজ্জান” বইয়ের বিক্রির মুনাফার সম্পুর্ন টাকা করোনাকালীন পটিয়া পৌরসভা গাউছিয়া কমিটির হাতে তুলে দেন লাশ দাফন কাফন করার জন্য। শুধু তাই নয় লেখক প্রকৃতি ও শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর প্রত্যেকটি বই এক একটি ইতিহাস। তিনি শিশুদের হাতে মোবাইল যন্ত্র না দিয়ে বই তুলে দেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন। চলতি বছরে ২০২২একুশের বই মেলায় প্রকাশিত হতে যাচ্ছে শিশুতোষ ও কিশোর গল্প নিয়ে “রেল লাইনে পাথর ভূত লেখকের ” বইটির মুল বার্তা হলো, চলন্ত ট্রেনে বা যানবাহনে পাথন না ছুড়ার আহবান। পাথর ছোড়া বা নিক্ষেপ করা বিপদগামী শিশু কিশোরদের জন্য আনন্দের কিন্তু তারা জানে না তাদের ছোড়া পাথর যে কারও পরিবারের জন্য সারা জীবনের জন্য কান্নার। লেখক স্বপ্ন দেখেন, শিশুদের জন্য একটি সুন্দর সাজানো নিরাপদ পৃথিবী যেখানে থাকবে প্রকৃতি, জ্ঞান, একান্নবর্তী পরিবারের ভালোবাসার বন্ধন। হেসে খেলে বড় হবে শিশুরা। শিশুদের কে প্রতি বছর প্রকৃতি কাছে নিয়ে যাবেন। প্রকৃতি মতো সবুজ হবে শিশুদের মন। লেখা লিখিটা তাঁর কাছে একধারনের মনে পাগলামী ছাড়া আর কিছু না মনে যখন যা আসে তাই লিখে যান তিনি। তবে লেখা লিখি কিন্তু সবাই পারে না। লিখতে হলে প্রচুর পড়তে হবে। আজকাল ইউ পোকারাও পাখি হতে চাই সব শালারাও কবি লেখক হতে চাই। বই পড়ার কোন বিকল্প নেই বই মনের দাওয়াই। বর্তমান পাঠকদের কে আনন্দের সাথে বই পাঠ করার অনুরোধ করেছেন। ক্লাব সংগঠন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদেরকে গটি বাটি না দিয়ে বই উপহার দেয়ার জন্য উধ্বার্থ আহবাহন করেছেন লেখক এবং প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুতোষ পাঠাগার স্থাপন করার জন্য আহবান জানান তিনি। লেখক নিজের বাবা মা কে নিবেদন করে নিজভূমে স্থাপন করেছেন মায়ের বাগান। মায়ের বাগানটি শুভ উদ্ধোধন করেন দেশবরেণ্য চিত্র শিল্পী প্রফেসর সবিহ্ উল আলম। লেখকের রঙিন স্বপ্ন চট্টগ্রামের নিজস্ব সাংস্কৃতি ‘মেজবান’ জাদুঘর প্রতিষ্টা করা। যেখানে থাকবে মেজবানের আদি ইতিহাস, মেজাবানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, রসুই ঘরের হাড়ি পাতিল, রন্ধন শিল্পীদের জীবনকর্ম। লেখক সবার উদ্দেশ্য বলেন সবার নিজস্ব সাংস্কৃতি হৃদয়ে আকড়ে ধরবেন। বাবা মা ও শিক্ষককে সম্মান করতে হবে সবার আগে। বাবা মাকে কখনও কষ্ট দেয়া যাবে না। পৃথিবীর কোন সন্তান যেন বাবা মা কে বৃদ্ধ আশ্রমে না পাঠায়।