বঙ্গবন্ধু উপাধির প্রণেতা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাককে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করুন

রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ও কর্মকৃতির মূল্যায়ন অনুষ্ঠানে বক্তারা

‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধির প্রণেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক স্মারকগ্রন্থের প্রকাশনা উৎসব ও কর্মকৃতির মূল্যায়ন অনুষ্ঠান গত ১২ আগস্ট শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। শৈলী প্রকাশনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক ছিলেন অসাধারণ এক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। চারিত্রিক বৈশিষ্টের গুণে সবার কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ড. অনুপম সেন আরো বলেন, দেশের বিখ্যাত মানুষের নামের আগে একটি উপাধি রয়েছে। যেমন চিত্তরঞ্জনের নামের আগে দেশবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আগে বিশ্বকবি, কাজী নজরুল ইসলামের নামে আগে বিদ্রোহী কবি। এই উপাধিতে তাঁরা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত। ঠিক একইভাবে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে উপলব্ধি করে এই উপাধি দিয়েছেন রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক। তিনি বঙ্গবন্ধুকে খুব ভালোবাসতেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল ছিলেন। বিশ্বের বুকে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু থাকবে। একইসাথে বঙ্গবন্ধু নামের উপাধির প্রণেতা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক। তাঁর মতো একজন দেশপ্রেমী মানুষের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দরকার।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. মোঃ আবদুল করিম, আগরতলা থেকে প্রকাশিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবার্ষিকী আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক ড. দেবব্রত দেবরায়। স্বাগত বক্তব্য দেন স্মারকগ্রন্থের সম্পাদক, চট্টগ্রাম একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক, সাহিত্যিক রাশেদ রউফ। আবৃত্তিশিল্পী আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের বন্ধু শাহজালাল ফিরোজ, পুত্র সাদিদ রেজা চৌধুরী, স্ত্রী নাজনীন চৌধুরী, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বন্ধু ডা. মঈনুল ইসলাম মাহমুদ, গান পরিবেশন করেন সীমা পুরকায়স্থ, বৃন্দ আবৃত্তি করেন উঠোন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শিল্পীরা।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. মোঃ আবদুল করিম বলেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক একজন অসাধারণ সংগঠক ছিলেন। তাঁর লেখা পড়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রশংসা করেছিলেন। ঢাকা কলেজ প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনের সভাপতি, চট্টগ্রাম সমিতিসহ অসংখ্য সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আরো বলেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক চট্টগ্রাম সমিতির জন্য, চট্টগ্রামের জন্য এবং দেশের জন্য অনেক কিছু দিয়েছেন। তাঁর অসামান্য কাজের স্বীকৃতি দরকার। এই অনুষ্ঠানে তাঁর জন্য রাষ্ট্রীয় যে স্বীকৃতির দাবি উঠছে সেই স্বৃীকতি প্রদানের উদাত্ত আহবান জানাই।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক বলেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সবসময় মানুষের উপকার করতেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর উপাধি দিয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন।
বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এন্ড অডিটর জেনারেল মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী বলেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনুকরনীয় ও অনুসরণীয়। তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের আস্ফালন ছিল না। তিনি খুব ধীরে সুস্থে কাজ করতেন। তিনি হাত পা ছুঁড়ে নেতৃত্ব দেননি। তিনি চোখ দিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের কাছে আমি অনেক কিছু শিখেছি। যা অনুকরণ করার মতো। কাজের ব্যস্ততার কারণে আমার অফিসে কাউকে সময় দিতাম না। কিন্তু মুশতাক ভাই আসার খবর পেলে তার জন্য সময় বের করে রাখতাম। কারণ তার স্বার্থে নয় আমার স্বার্থে আমি তাকে সময় দিতাম। তিনি মন উজাড় করে মানুষের সেবা করতেন। তাঁর মতো মানুষ সমাজের বিরল।
ড. দেবব্রত দেবরায় বলেন, মুশতাক ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি স্মারকগ্রন্ত প্রকাশ করতে পেরেছিলাম। বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও তিনি প্রতিদিন আমাদের কাজের খোঁজ খবর নিয়েছেন, কাজে সাহস দিয়েছেন।
শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ বলেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের মধ্যে ব্যত্তিত্বের বৈশিষ্ট ছিল। তিনি ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী এক মহান সংগঠক। বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়ে তিনি ইতিহাসের অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। তিনি রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাককে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত (মরণোত্তর) করার জন্য দাবি জানান।
অধ্যক্ষ ড. আনোয়ার আলম বলেন, রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাক দেশকে ভালোবেসেছেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং সংস্কৃতির বিকাশে ভূমিকা রেখেছেন। তিনি মৃত্যুর আগের রাতেও অনেক জনের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কয়েকঘণ্টা পর তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধি দিলেও সেই উপাধির স্বীকৃতি চাননি। কারণ তিনি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসেছেন।
অনুষ্ঠানে স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ। এসময় ছিলেন স্মারকগ্রন্থেও নির্বাহী সম্পাদক লেখক শহীদুল ইসলাম শহীদ, সহযোগী সম্পাদক বিপুল বড়ুয়া, শৈলী থেকে প্রকাশিত ৫ পত্রিকার সম্পাদক যথাক্রমে শিল্পশৈলী সম্পাদক নেছার আহমদ, শৈলী সাহিত্য বুলেটিন সম্পাদক আজিজ রাহমান, শৈলী টিভি সম্পাদক আয়েশা হক শিমু, ছড়াশৈলী সম্পাদক কাসেম আলী রানা, অনন্য ধারা সম্পাদক রুনা তাসমিনা। ছিলেন চট্টগ্রাম একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অরুণ শীল, সাংস্কৃতিক সংগঠক মহসীন চৌধুরী, সংগঠক এম. কামাল উদ্দিন প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সমিতি -ঢাকার সাবেক সহসভাপতি মারুফ শাহ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিউল ইসলাম মহিম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন খান, অর্থ সম্পাদক মোঃ নাছের (নাছির), সাবেক অর্থ সম্পাদক মো: শাহ আলম, নির্বাহী সদস্য সাইফুদ্দিন আহমদ বাবুল, জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।