আশুরা মুসলিম উম্মাহের অনুপ্রেরণার দিন

পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আশুরা বা মহররমের ১০ তারিখে সংঘটিত হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যা আশুরার মর্যাদা ও মাহাত্ম্যকে শতগুণে বৃদ্ধি করেছে।

এই দিনেই হজরত আদম (আ.)-এর সৃষ্টি, স্থিতি, উত্থান ও পৃথিবীতে অবতরণ ও দীর্ঘ দিন ক্ষমা প্রার্থনা শেষে এদিনই তাঁর তওবা কবুল করা হয়। ফেরআউনের কবল থেকে হজরত মুসা (আ.)-এর মুক্তি, হজরত ইবরাহিম (আ.) -এর বিজয় ও দাম্ভিক নমরুদের পরাজয় ঘটে। হজরত নুহ (আ.)-এর নৌযানের যাত্রা আরম্ভ এবং বন্যা-প্লাবনের সমাপ্তিও আশুরাতেই সংঘটিত হয়েছিল।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যখন আমি তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিখণ্ডিত করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে বাঁচিয়ে দিয়েছি এবং ডুবিয়ে দিয়েছি ফিরাউনের লোকদিগকে তোমাদের চোখের সামনে। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ৫০)

নবীদের ঘটনার বাইরেও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের প্রায় ৫০ বছর পর ৬১ হিজরির ১০ মহররম কারবালায় হুসাইন ইবনে আলী (রা.)-এর শাহাদাতের ঘটনা ঘটে। অন্যায়ের সাথে আপোস না করে সত্যের সামনে পূর্ববর্তী নবী ও হুসাইন রা.-এর দৃঢ় প্রত্যয় মুসলিম উম্মাহকে অনুপ্রাণিত করে প্রতিনিয়ত।

শুধু কারবালায় হজরত হুসাইন রা.-এর শাহাদাতের ঘটনার কারণে নয়, বরং এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ইসলাম এবং ইসলাম পূর্ব সময় থেকে। ফেরআউনের কবল থেকে মুক্তির ঘটনায় কৃতজ্ঞতা স্বরূপ এই দিনে রোজা রাখতেন মূসা আলাইহিস সালাম। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এ দিনে রোজা রেখেছেন এবং অন্যদের রাখতে উৎসাহিত করেছেন।

এ বিষয়ে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনায় এলেন তখন তিনি লক্ষ্য করলেন ইহুদিরা আশুরার দিনে রোজা পালন করছে। তখন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এই দিনে রোজা রাখার তাৎপর্য কি? তারা বললো- এই দিনটির অনেক বড় তাৎপর্য রয়েছে, আল্লাহ হজরত মূসা আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারীদের বাঁচিয়ে ছিলেন এবং ফেরাউন ও তার অনুসারীদের ডুবিয়ে ছিলেন এবং মূসা আলাইহিস সালাম এই ঘটনার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ রোজা রাখতেন আর তাই আমরাও রাখি। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমাদের চেয়ে আমরা মূসা আলাইহিস সাল্লামের আরো বেশি নিকটবর্তী সুতরাং তোমাদের চেয়ে আমাদের রোজা রাখার অধিকার বেশি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আশুরার রোজা রাখতেন এবং অন্যদেরকে এই রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫২০)

আশুরার প্রতিটি ঘটনাই উম্মাহকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনীত দ্বীনের ওপর অবিচল থাকার শিক্ষা দেয়। তাই আশুরার দিনে কোনোভাবেই শরিয়ত সমর্থন করে না এমন কাজ থেকে বিরত থাকা একান্ত কর্তব্য।