অবশেষে খুলছে শ্রীলঙ্কার অবরুদ্ধ প্রেসিডেন্ট কার্যালয়

বিক্ষোভকারীদের হাতে অবরুদ্ধ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় পুনরায় খুলতে যাচ্ছে। সোমবার (২৫ জুলাই) থেকে কার্যালয়টি খুলবে বলে স্থানীয় একজন পুলিশ কর্মকর্তার বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে রনিল বিক্রমাসিংহে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই অভিযান চালিয়ে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় থেকে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিতাড়িত করে আইশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এরপরই কার্যালয়টি পুনরায় খুলে দেয়া হচ্ছে।

রোববার (২৪ জুলাই) একজন পুলিশ কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ‘সোমবার থেকে প্রেসিডেন্টের অফিস খোলার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা সেখানে যে ক্ষতিসাধন করেছে তার প্রমাণ সংগ্রহ করতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা অফিস পরিদর্শন করেছেন। ৯ মে থেকে চলমান সচিবালয়ের অবরোধ এখন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।’

দেশজুড়ে অর্থনৈতিক সংকটের জেরে চলতি মাসের শুরুতে ঔপনিবেশিক যুগের ভবনটি (প্রেসিডেন্ট কার্যালয়) দখল করে নেয় বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজপাকসেকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী। এরপর প্রথমে তিনি মালদ্বীপ এবং সেখান থেকে সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান। পরে সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান রাজপাকসে।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) রাতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েই বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হন রনিল বিক্রমাসিংহে। তার শপথের কয়েক ঘণ্টা পরই কলম্বোয় আন্দোলনকারীদের ক্যাম্পে অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

এ সময় গ্রেফতার করা হয় অন্তত ১১ জনকে। হতাহত হন অর্ধশতাধিক। অভিযান চলাকালে সেনা সদস্যদের হামলার শিকার হন দুই সাংবাদিক ও দুই আইনজীবীও।

এদিকে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের ওপর ‘বেআইনি বলপ্রয়োগ’ বন্ধ করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, ‘অভিযানের ঘটনা শ্রীলঙ্কার জনগণের কাছে একটি বিপজ্জনক বার্তা পাঠিয়েছে যে দেশটির নতুন সরকার আইনের শাসনের পরিবর্তে নৃশংস শক্তির মাধ্যমে কাজ করতে চায়।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী শনিবার (২৩ জুলাই) এক বিবৃতিতে বলেন, ‘শ্রীলঙ্কানদের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এমন একটি সরকার প্রয়োজন, যা মানুষের মৌলিক অধিকারকে সম্মান করে।’

বিক্ষোভকারীদের ওপর বল প্রয়োগের নিন্দা জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘এটা লজ্জাজনক যে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ ধরনের সহিংস কৌশল অবলম্বন করেছে।’

বুধবারের (২০ জুলাই) প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে মোট ২১৯ ভোটের মধ্যে ১৩৪ ভোট পেয়ে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল বিক্রমাসিংহে। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দুল্লাস আলাহাপ্পেরুমা পান ৮২ ভোট। আর বামপন্থি নেতা অনুরা দেশনায়েক শুধু নিজের দল থেকে পান ৩ ভোট।