বিভিন্ন সাবানের ধরনে মিলবে ত্বকের নানা সমস্যার সমাধান

সারাদিনের ধুলাবালি, ঘাম আর ক্লান্তিকে ছুটিতে পাঠাতে গোসলের বিকল্প নেই। আর পরিপূর্ণ একটি গোসল সাবান ছাড়া কল্পনাই করা যায় না। এই সাবান শুধু পরিষ্কার করার কাজই নয়, ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বাজারে বিভিন্ন ধরন ও গুণগতমানের সাবান পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের সাবানই ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছে, সৌন্দর্য ধরে রাখতে ত্বক অনুযায়ী সাবান ব্যবহার করা প্রয়োজন।

ত্বকের সমস্যার প্রধান কারণ হলো পিএইচ স্তর। সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে তৈরি সাবানগুলোর পিএইচ মাত্রা ৯ থেকে ১১-র মধ্যে থাকে, যা ত্বকের পিএইচ মাত্রা বাড়িয়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই কোন সাবান কোন ধরনের ত্বকের জন্য প্রয়োজন, সেটা না বোঝে সাবান ব্যবহার ত্বকের নানা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আরও পড়ুন: গরমে ত্বক ও চুলের যত্নে বাটারমিল্ক

তাই ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে ত্বক বিশেষজ্ঞরা। আসুন জেনে নিই কোন ধরনের সাবান ত্বকের কোন সমস্যায় ব্যবহার করা প্রয়োজন।

অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান: ট্রাইক্লোসান বা ট্রাইক্লোকার্বনের মতো অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে এসব সাবানে। এর পিএইচ মাত্রা ৯-১০-এর মধ্যে থাকে। এই সাবান তরল বা কঠিন বার আকারে বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

অ্যান্টি-ব্রন সাবান: বর্তমানে সাবান তৈরির বিভিন্ন কোম্পানি অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, এক্সফোলিয়েটিং এবং কমেডোলাইটিক বৈশিষ্ট্যসহ বিভিন্ন ধরনের সাবান বাজারে নিয়ে এসেছে। এসব ব্রনরোধী সাবানগুলো মুখ, বুক এবং পিঠের ব্রনের স্থানে ব্যবহার করা যায়। ত্বকে ব্রনের সমস্যা না চাইলে বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এই সাবানকে নিয়মিত গোসলের সঙ্গী করে নিতে পারেন।

ভেষজ সাবান: বিভিন্ন ধরনের সাবানের মধ্যে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সাবান হিসেবে ধরা হয় ভেষজ সাবানগুলোকে। এসব সাবানে সাধারণত থাকে ক্যামোমাইল, ল্যাভেন্ডার, পেপারমিন্ট, স্পিয়ারমিন্ট, ওটমিল এবং অ্যাভোকাডোর মতো ভেষজ উপাদান।

ময়েশ্চারাইজিং সাবান: এ ধরনের সাবান ত্বককে আর্দ্র করে। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য এ ধরনের সাবান বিশেষ উপকারী। ক্রিম, কোকো বাটার, নিউট্রাল ফ্যাট, ল্যানোলিনের মতো উপাদান থাকায় এই সাবানে তেলের পরিমাণ বেশি থাকে। সাবানে ক্ষারীয় ভাব বেশি থাকলেও ময়েশ্চারাইজিং সাবানগুলোতে ক্ষারের পরিমাণ কম।

ত্বক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্বকের যত্নে বিভিন্ন ধরনের সাবানই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গোসলে ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বক সব ধরনের সাবানেরই সুফল পায় যা ত্বককে করে তোলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল।

বিভিন্ন ধরনের সাবান ব্যবহারের পাশাপাশি গুরুত্ব দিতে হবে ত্বকের ধরনের ওপরও। ত্বক সাধারণত তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র এবং সংবেদনশীল এই চার ধরনের হয়ে থাকে। তাই এসব ত্বকের ধরন বোঝেও সাবান নির্বাচন করা উচিত। যেমন-

তৈলাক্ত ত্বকের জন্য: অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল সাবান বা ল্যাভেন্ডার, ক্যামোমাইল এবং থাইমযুক্ত নির্দিষ্ট ফেস ক্লিনজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা উচিত।

শুষ্ক ত্বকের জন্য: অ্যালোভেরা, কোকো মাখন, অ্যাভোকাডো বা উদ্ভিজ্জ তেল রয়েছে এমন সাবানগুলো সেরা হিসেবে বিবেচিত।

আরও পড়ন: রূপচর্চায় ৩ উপাদান মারাত্মক বিপদ ডেকে আনে!

মিশ্র ত্বকের জন্য: খুব বেশি শুষ্ক বা তৈলাক্ত নয় এমন ত্বককে বলা হয়ে থাকে মিশ্র ত্বক। এসব ত্বকের জন্য গ্লিসারিনযুক্ত সাবান বিশেষ উপকারী।

সংবেদনশীল ত্বকের জন্য: ত্বক যদি খুব সংবেদনশীল এবং সংক্রমণপ্রবণ হয় তবে সেই ত্বককে সংবেদনশীল হিসেবে ধরা হয়। এসব ত্বকের জন্য সাধারণত ভিটামিন ই এবং জোজোবা তেলযুক্ত সাবানগুলো ভালো কাজ করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিমিত সাবানের ব্যবহারে এর সুফল পাওয়া গেলেও সাবানের অতিরিক্ত ব্যবহারে ত্বকে শুষ্কতা, র‌্যাশ ও জ্বালাপোড়া হতে পারে। তাই সাবান পরিমিত ব্যবহারের ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ত্বকের বিশেষ সুরক্ষায় সাবান দিয়ে গোসলের পর ত্বকে অলিভ ওয়েল অথবা বডি লোশন ব্যবহার করতে পারেন।