যুদ্ধের মধ্যেই ইউক্রেনীয়দের ‘ইউরোপীয় স্বপ্নে বাঁচার’ সুযোগ

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ডনবাসে রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়ে চলেছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। এদিকে রাজধানীতে কিছুটা উৎসবমুখর পরিবেশ।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও খুশি, কেননা ইউক্রেনীয়রা ‘ইউরোপীয় স্বপ্নে বাঁচার’ সুযোগ পেতে যাচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রার্থী সদস্য হিসেবে সুপারিশ করেছে। এর মাধ্যমে দেশটির ইউরোপীয় ব্লকে একটি বড় ধাপ সম্পন্ন হলো।

অপরদিকে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত কিয়েভে আকস্মিক সফর করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউক্রেন সফরে এলেন বরিস। তার সফরকে কেন্দ্র করে ইউক্রেনের প্রার্থী সদস্য হিসেবে সুপারিশের বিষয়ে দুয়ে দুয়ে চার মেলাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন শুক্রবার (১৭ জুন) এ সুপারিশের কথা জানান। যুদ্ধ চলাকালীন এমন সংবাদ ইউক্রেনের জন্য কার্যত উৎসবের সমান।

রাশিয়ার আগ্রাসন ও এর পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ একটি নাটকীয় ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিয়ে ইউক্রেনকে তাদের ব্লকে যোগদানের জন্য প্রার্থী হতে সুপারিশ করে। আগামী সপ্তাহে একটি সামিট রয়েছে। এতে ইইউ নেতারা ইউক্রেন ও তার প্রতিবেশী দেশ মলদোভার জন্য ব্লকের নির্বাহীর সুপারিশগুলোকে সমর্থন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইইউ প্রার্থী সদস্য হিসেবে সুপারিশ পাওয়ার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একটি টুইট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন- ইউক্রেনীয়দের সাহসিকতা ইউরোপের জন্য ‘স্বাধীনতার একটি নতুন ইতিহাস তৈরি করা ও শেষ পর্যন্ত ইইউ এবং রাশিয়ার মধ্যে পূর্ব ইউরোপের ধূসর অঞ্চলটি সরিয়ে ফেলার’ সুযোগ এসেছে।

পরে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, এখনও ইইউ সদস্য দেশগুলোর সিদ্ধান্ত দেখা বাকি রয়েছে। এখন থেকে আপনারা সত্যিকারের শক্তিশালী ইউরোপীয় শক্তি, ইউরোপীয় স্বাধীনতা ও ইউক্রেনের সঙ্গে ইউরোপীয় উন্নয়ন কল্পনা করতে পারেন।

এএফপির খবরে বলা হয়, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন শুক্রবার ইউক্রেনকে ইইউ প্রার্থী সদস্য হিসেবে সুপারিশের ঘোষণা দেন। তিনি যখন ঘোষণা দেন, ইউক্রেনের সমর্থনে দেশটির পতাকার রঙে পোশাক পরিধান করেছিলেন তিনি। একটি ছবিতে দেখা যায়, উরসুলার পরনে নীল জামা, তার ওপর হলুদ ব্লেজার চড়িয়েছিলেন তিনি।

উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেন, ইউক্রেনীয়রা ইউরোপীয় দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মরতে প্রস্তুত। তাই আমরা চাই তারা আমাদের সঙ্গে ইউরোপীয় স্বপ্ন নিয়ে বাঁচুক।

তিনি আরও বলেন, নিজেদের পথ নির্ধারণের অধিকার ইউক্রেনের রয়েছে। তবে ইইউ’র প্রত্যাশা একেবারে স্পষ্ট। প্রত্যেক সার্বভৌম রাষ্ট্রের অধিকার রয়েছে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের। ইউরোপীয় কমিশন ইউক্রেন ও মলদোভাকে প্রার্থী সদস্য হিসেবে স্বাগত জানাচ্ছে।
খবরে আরও বলা হয়েছে, ব্রাসেলসের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অগ্রসর হওয়ার সময়টিতে ডনবাসের পূর্বাঞ্চলে তীব্র লড়াই অব্যাহত ছিল। অঞ্চলটিতে রাশিয়া নিজেদের শাসন দৃঢ় ও প্রসারিত করার চেষ্টা করছে। এরমধ্যেই শুক্রবার কিয়েভ সফর করেন বরিস জনসন।

কিয়েভে পৌঁছানোর পর নিজের টুইটে সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রিটেনের এই প্রধানমন্ত্রী। জেলেনস্কির সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লেখেন- দ্বিতীয়বার কিয়েভে এসে ভালো অনুভব করছি।

বরিসের সফরের বিষয়ে টুইটারে জেলেনস্কি লেখেন, ইউক্রেনের প্রতি ব্রিটেনের সমর্থন যে দৃঢ় ও অটল; তা অনেক দিনই প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের দেশের মহান বন্ধু বরিস জনসনকে আবার কিয়েভে দেখে আমরা আনন্দিত।

এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনে ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত কঠিন ছিল। তবে তা করতে আমাদের বাধ্য করা হয়েছে।

অপরদিকে তিনি নিজেদের সিদ্ধান্তকে সঠিক জাহির করতে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি অভিযোগে ভরা বক্তৃতা দেন। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন। ইইউ’র বিষয়টিও এড়িয়ে যেতে চাইছেন পুতিন।

তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু নেই। এটি কোনো সামরিক ব্লক নয়। অর্থনৈতিক ইউনিয়নে যোগদান করতে যেকোনো দেশেরই অধিকার রয়েছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ইউক্রেনের ইইউতে যোগদানের বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করছে। বিশেষ করে, ২৭ সদস্যের ব্লকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। সে দিকেই নজর রেখেছে ক্রেমলিন।