জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডকে পেছনে ফেলে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

অবশেষে গলতে চলেছে বরফ। ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএন -কে জানিয়েছেন সৌদি আরব-এর সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ মিত্রের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হয়। কারণ বাইডেন প্রশাসন গত বছর একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। যাতে সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে খাশোগির হত্যার পরিকল্পনার জন্য সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়। তবে পরিস্থিতি এখন বদলেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন যে, ১৯৮১ সালের পর থেকে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির জন্য ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছেন জো বাইডেন। সেইসঙ্গে রাশিয়াকে দমাতে এবং অভ্যন্তরীণ গ্যাসের দাম কমানোর জন্যও প্রচণ্ড চাপ আসছে সরকারের ওপর। ইউক্রেনে ক্রেমলিনের আগ্রাসনের এই নাটকীয় বৈশ্বিক উত্থানের মধ্যে সৌদি আরবের সাথে উষ্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য তার নৈতিক ক্ষোভকে সরিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। খাশোগি হত্যার কথা উল্লেখ করে এক সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, উভয় পক্ষই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের স্বার্থে আমাদের সম্পর্ককে পুনঃস্থাপন করতে হবে।

যদিও সৌদিরা তাদের পক্ষ থেকে খাশোগি মামলাটির নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলেই মনে করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সেকথা তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি এখনো ভুলে যায়নি।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, খাশোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সরাসরি সৌদির প্রিন্সের সামনে উত্থাপন করার পরিকল্পনা করছেন বাইডেন। কারণ পরের মাসেই উভয়ের সাক্ষাতের পরিকল্পনা আছে। মার্কিন প্রশাসনের অভ্যন্তরে কিছু কর্মকর্তা এখনও বিশ্বাস করেন যে খাশোগির হত্যাকাণ্ড- এর মতো এই জঘন্য অপরাধের সাথে যুক্ত থাকার জন্য সৌদি প্রিন্সকে জবাবদিহি করতে আরও কিছু করা উচিত। এদিকে বাইডেনের দুই শীর্ষ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ব্রেট ম্যাকগার্ক এবং আমোস হোচস্টেইন -এর নিরন্তর প্রচেষ্টায় প্রিন্সসহ সৌদি কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা বৈঠকের পর এখন দু দেশের সম্পর্কের বরফ গলার ইঙ্গিত মিলছে।

যদিও বিষয়টি ইতিমধ্যেই ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। খাশোগির বাগদত্তা হ্যাটিস সেঙ্গিজ বাইডেনকে তার নৈতিকতা হারানোর দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি সিএনএন-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এমবিএসের (মোহাম্মদ বিন সালমান) সঙ্গে দেখা করার রাষ্ট্রপতি বাইডেনের সিদ্ধান্ত আমার এবং ন্যায়বিচারের সমর্থকদের অসন্তুষ্ট করেছে।’ মার্কিন প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ ওয়াশিংটনের একজন মানবাধিকার রক্ষক, যিনি খাশোগির ঘনিষ্ঠ বন্ধুও ছিলেন তিনি সিএনএনকে বলেছেন যে ‘খাশোগি হত্যার জন্য এমবিএসকে দায়বদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত রাজকুমারের বিরোধী এবং আরবের ভিন্নমতাবলম্বীদের বড় ধাক্কা দেবে।

শুধু তাই নয় মার্কিন রাষ্ট্রপতির এই খুনিটির নিজ শহরে তাকে শান্ত করতে যাওয়ার অর্থ তার অতীতের জঘন্য অপরাধগুলিকে সমর্থন করা’। মার্কিন কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন যে এমবিএসের সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্তটি রাষ্ট্রপতি বাইডেনের পক্ষেও মেনে নেয়া বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে গোটা বিশ্বর পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য হলো : রাশিয়াকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং রাশিয়ান তেল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে তার যুদ্ধযন্ত্রের জন্য তহবিল বন্ধ করা। এই দুটি উদ্দেশ্য তখনি সাধিত হবে যখন সৌদি আরব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে থাকবে। তাই রাষ্ট্রপতি এবং তার সিনিয়র জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা বিশ্বাস করেন যে খাশোগি হত্যার বিষয়ে সৌদি আরবকে ‘এড়িয়ে যাওয়া’ অদূরদর্শী হবে। হোয়াইট হাউসের বাইরে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমি মনে করি বিশ্ব অর্থনীতির গতিপথ এখন সবকিছুকে চালিত করছে, তাই হোয়াইট হাউস সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

এই পদক্ষেপ আগামী দিনগুলিতে ডেমোক্র্যাটদের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।’ সেক্রেটারি অব স্টেট এন্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার সিএনএন-কে বলেছেন যে আমেরিকা কখনই মার্কিন-সৌদি সম্পর্ককে পুরোপুরি ‘বিচ্ছেদ’ করার চেষ্টা করেনি। তবে পররাষ্ট্র নীতিতে মানবাধিকার যাতে সম্পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয় সেই চেষ্টাই করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেটাই নিশ্চিত করা বাইডেন প্রশাসনের একমাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন ব্লিঙ্কেন।