মায়ের কাছে খোলা চিঠি।

শ্রদ্ধাভাজনেষু মা জননী,
শতকোটি সালাম ও কদমবুচি জানবেন। প্রত্যাশা ভালো আছেন। বাড়ি থেকে যান্ত্রিক নগরে আসার পর থেকে মা তোমার কথা মনে পড়ছে। পাকুড় গাছে কুহ্ ক্হ্ ুকুহ কোকিলের কুহুতান। জানালার ফটক দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদের উঁকি ঝুঁকি। টক টক দরজা নাড়ার শব্দ। এই বুঝি আমার মা মিষ্টি কন্ঠে ডাকছে, কিরে দুষ্টু এখনও সকাল হয়নি ? বেলা অনেক বয়ে গেছে। দরজা খুলে দেখি মা তুমি দাঁড়িয়ে আছো। বাড়িগেলে তোমার স্নেহ ভরা মুখ টা দেখে, পেট ভরে যেত। মা সকাল বেলা তোমার স্নেহ ভরা মুখ দেখার মধ্যে একটা সুখ আছে তৃপ্তি আছে। বাড়ি থাকলে সেটা উপভোগ করি। মা তুমি বলো, দূসর যান্ত্রিক নগরে এসব কি উপভোগ করা যায়। তোমার ছবিটা বিছানার পাশে রেখে আমি ঘুমাই। ঘুম ভাঙ্গলে তোমার হাসি মাখা মুখটা দেখতে পাই। মা সেদিন বাড়িতে এতো ভোজনরসদের আয়োজন করেছিলে তা ভুলতে পারছি না। ডাবের পানি, নারিকেলে চিড়া, চিতোই পিঠা, পুলি, পায়েশ, সজনে ডাটার ভরি, কাতলা মাছের মুরি গন্ড, দেশি মুরগী, মেজাবানী গোশ, আরো কত কি ? আমার পাশে বসে সারাক্ষন আমাকে এটা ওঠা পাতে তুলে দিয়ে খাওয়ালে । পাশে বসে থেকে নিজে কিছু খাওনি আমি জোর করে দু এক,টি লোকমা খাইয়ে দিলাম তোমাকে। বার বার বলছিলা, তুই খেলে আমার খাওয়া হবে। সত্যি মায়েরা এমনই হয়। বকা দিয়ে বললে, “ঢাকায় ঠিকমত খাওয়া ধাওয়া করিস না। অফিসে গাধার মতো খাটিস তাই না। তোর অডিটের চাকুরীটাকে আমার কাছে বাউণ্ডুলের মতো মনে হয়। তুকে কত বললাম ট্রান্সফার হয়ে চট্টগ্রামে চলে আয়”।
মা তুমি জানো রাজধানী জবের জন্য ক্যারীয়ারের জন্য বড় একটা ফ্ল্যাটফর্ম। তুমি চাও না আমি বড় হয় ? মা আমি জানি আমার উপর তোমার অনেক অভিমান। “মা” তোমার জন্য কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের ‘মা’ উপন্যাসটা কুরিয়ার করেছিলাম পেয়েছো কিনা জানাইও । ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসলে তোমার জন্য কি আনতে হবে বলিও। আমি বাড়ি গেলে তুমি এত ব্যস্ত হয়ে পড় যে নিজের প্রতি খেয়াল রাখো না। সারাক্ষাণ আমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকো। রাতে খাবার পর, গরুর দুধ খেতে দিবে। বিছানা ঘুছিয়ে দেবে, মশারি টাঙ্গিয়ে দেবে, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে। ঘুমিয়ে পড়লে চাদর দিয়ে শরীর ডেকে দেবে। তোমার অকত্রিম আদও আমি যান্ত্রিক নগরে খুব মিস করি। আমার কাছে তোমকে মনে হয়, মা তুমি পৃথিবীর একমাত্র অকৃত্রিম ভালোবাসা ও স্নেহের ব্যাংক হিসাব। যে হিসাবের ভালোবাসা ও স্নেহ কখনো কমে না।
মা তোমার কোমরের ব্যাথাটা কি অবস্থা ? বাড়িতে তোমাকে অসুস্থ রেখে চলে আসতে খুব কষ্ট হয় । তুমি অসুস্থ শরীর নিয়ে বিছনায় খাতরাচ্ছ। মা বিশ^াস করো তোমাকে লিখতে বসে চোখ দুটো জলে ভিজে গেছে, পাশে থাকলে তুমি আমাকে শাড়ি আচঁল দিয়ে চোখের জল মুছে দিতে। মা ও মা ! তোমাকে সেবা করার জন্য কাছে পায় না। তুমি বলো তোমার ঋণ সুদ করার সাধ্যে পৃথিবীর কোন সন্তানের কী আছে ?
আমি বুঝি না আজকাল অনেক বনেদি পরিবারের মায়েদের স্থান হয় বৃদ্ধ আশ্রমে। নিজের স্বামীর ভিটায় এমন কি ছেলের বাসায় ঠাই হয় না মায়েদের। আমি সেই কুলাঙ্গার সন্তাদের ঘৃণা করি। মা আজকালকার কিছু আধুনিক ছেলেরা মা কে গ্রামের বাড়িতে একা রেখে। বউনিয়ে শহরে বসাবাস করে। ওরা জানে না একান্নবর্তী পবিরারের ভালোবাসা কারে বলে।
মা তোমাকে বলা হয়নি, আগামী একুশের বই মেলায় আমার দুটো বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে । তুমি আমার জন্য দো করিও। আমার মাথায় তুমি একটা ফু দিও ! বাতাসে সেই ফু এসে আমার মাথা স্পর্শ করবে। মা বাড়ি থেকে আসার সময় আমার খুব মন কাঁদছিল, তুমি যখন আমাকে এগিয়ে দেয়ার জন্য, পিছু পিছু এসে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলে। আমি দূর থেকে দেখলাম, তুমি শাড়ির আচঁলে মাথা লুকিয়ে ফুঁিপয়ে ফুঁপিয়ে ঢুকরে ঢুকর কাঁদছিলে তাই না। মা জননী !ওহ মা ! মে মাসের দ্বিতীয় রোব বার বিশ্ব মা দিবস দিন টি শুধু তোমার জন্য মা। তোমার জন্য শুধু একদিন কেন, আমার প্রতিটিদিনই তোমার জন্য মা। মা তুমি আমার অলিন্দ্যে ফোঁটা নীল পদ্ম। তোমার পদ্ম শাখায় আজো আগলে রেখেছো। যেভাবে মা পাখিটা রোদ বৃষ্টি এবং গাঙচিলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পালক দিয়ে ছানাকে আগলে রাখে, ঠিক সেরকম। আমি জানি তোমার দোয়ার বৃষ্টি প্রতিনিয়ত বর্ষিত হয় আমার উপর।
মা ! মাগো ! তুমি শরীরের প্রতি যত্ন নিও ঠিকমতো খাওয়া ধাওয়া করবে, ঔষধ খাবে মনে করে। মা তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। মা তোমাকে অনেক ভালোবাসি অনেক। এই যান্ত্রিক নগরে এসে খুব মিস করি মা তোমাকে। লাভ ইউ মা। ভালো থেকো।
তোমার দুষ্টু কোখা-

রশীদ এনাম,

৮ নয়া পল্টন, ঢাকা।