সৌদি আরবে ঈদ উদযাপন

সৌদি আরব প্রতিনিধি:: অফুরন্ত রহমত বরকত মাগফিরাত এবং নাজাতের মাস রমজান শেষ হয়ে মধ্যেপ্রাচ্য মাসব্যাপী রোজা পালনের পর ঈদের আনন্দ উৎসবে জেগে উঠলো মুসলমানরা আজ। পবিত্র রমজান মাস শেষ হওয়ার পর শাওয়াল মাসের পহেলা তারিখে যে ঈদ উত্সব অনুষ্ঠিত হয় সেটাই হলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ শব্দের অর্থ খুশি বা আনন্দ। রমজান মাসের রোজাগুলো আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুযায়ী পালনের পর আনন্দের একটি দিন ঈদ ।

ঈদের আনন্দ শুধু খাওয়া-দাওয়া আর সদকায়ে ফিতরের মত এবাদত আদায়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। এর এবাদতের সীমানা আরও ব্যাপক। তাই ঈদের দিন সকালে এলাকার সব মুসলমান মিলে নিকটস্থ ঈদগাহে মিলিত হয়ে জামাতের সাথে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করেন। ধনী-দরিদ্র, ছোট-বড়, আমির ফকির, নির্বিশেষে সবাই একই কাতারে শামিল হয়ে ঐক্যের এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সকলে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে মাথা নত করে।

অন্যদিকে সৌদি আরবে যথাযথ মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়েছে ।

স্থানীয় সময় ৫ টা ৩০ মিনিটে সৌদি আরবের জাতীয় মসজিদ রিয়াদের ধীরাতে প্রথম ঈদের জামায়েত অনুষ্ঠিত হয় যেখানে ইমামতি করেন ড. আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল শেইখ।

এছাড়াও পবিত্র মক্কার হারাম শরিফ, মদিনার মসজিদে নববীসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রদেশের বড় বড় মসজিদ এবং ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইদুল ফিতরের জামাত ।

যে জামাতে এক সাথে একই কাতের নামাজে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দলবেঁধে সামিল হয়েছেন সৌদি আরবে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা ।

নামাজ শেষে রেওয়াজ অনুযায়ী একে অন্যের সাথে কুলাকুলি করে ঈদের শুভেচ্ছে বিনিময় করেন।

প্রবাসীরা প্রবাসের মাটি থেকে শুভেচ্ছা জানান দেশে থাকা তাদের স্বজন-প্রিয়জন তার সাথে দেশ-বিদেশের সকল প্রবাসীদের।

 

সৌদি আরবে আজ উদযাপিত হচ্ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ইদুল ফিতর। ঈদের নামাজ, নতুন পোশাক, ঐতিহ্যবাহী খাবার, অসহায়দের সাহায্য আর প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটিয়েই সৌদি আরবে খুশির এই দিনটি উদযাপন করা হয়। ঈদ উপলক্ষে দেশটিতে তিন দিন সরকারি ছুটি থাকে।

ঈদকে কেন্দ্র করে বাড়ি-ঘর সাজানো, ঈদ সেলামি, ভালো খাবার-দাবারের আয়োজন, অতিথি আপ্যায়নসহ নানা আয়োজন থাকে সৌদি আরবে।

ঈদের নামাজ শেষে পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় সৌদিবাসী।আমাদের দেশের সালামির মতো এ সময় প্রিয়জন বিশেষ করে শিশুদের দেওয়া হয় অর্থ, খেলনা ও নতুন পোশাকের মতো বিভিন্ন উপহার। এমনকি অমুসলিমদের উপহার দিতেও তারা ভোলে না।

ঈদের নামাজ শেষে বাড়িতে বিশেষ খাবার রান্না হয়। তৈরি হয় ভেড়ার মাংস আর টমেটোর সমন্বয়ে তৈরি সুস্বাদু ঐতিহ্যবাহী খাবার মুগালগাল। আরও তৈরি করা হয় মসলাযুক্ত মাংসের সঙ্গে গম দিয়ে তৈরি জারেশ। সঙ্গে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী আরব দেশের মিষ্টি জাতীয় খাবার তো রয়েছেই।

ঈদের দিন সৌদি মুসলিমরা অসহায় ও দুস্থদের সাহায্য করে থাকে। এটা দেশটির ঈদ উদযাপনের অংশ। মানুষের মাঝে উদারতার কোনো কমতি থাকে না এই দিনে। এদিন তারা বাজার থেকে বেশি পরিমাণে চাল কিনে আনে। আর তা বাড়ির প্রবেশ দরজার বাইরে রেখে দেয়। যেন অসহায় ও অভাবগ্রস্ত মানুষ তা নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে পারে। এছাড়াও এই দিনটিতে গরিবদের মধ্যে খাবার বিতরণও করা হয়।

ঈদ উপলক্ষ্যে এই দিনে অনেক দোকানি ক্রেতাদের জন্য বিশেষ ছাড়া দেন।

এই দিনে পুরুষরা কান্দর নামের সাদা পোশাক পরিধান করে মাথায় দেয় গাহফিহ নামের টুপি। নারীরা এই দিনে থাউব নামের বিশেষ পোশাক পরে থাকে।

ঈদের সন্ধ্যায় সৌদিবাসী তাদের সেরা ফ্যাশনেবল পোশাক, সাধারণত ঈদের জন্য কেনা নতুন জামাকাপড় পরে বাইরে যায়। এ সময় তারা ঈদ উপলক্ষ্যে আয়োজিত আতশবাজি দেখে এবং একে অপরকে ঈদের শুভেচ্ছা জানায়।

পবিত্র মাসের শেষ উপলক্ষ্যে সৌদি জুড়ে বেশ কয়েকটি কনসার্ট এবং ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়।অনেকেই বাইরে ঘুরতেও যায়।