ভোজ্য তেলের দাম ভ্যাট কমলেও এখনই কমছে না

ভোজ্য তেলের তেলেসমাতিতে অস্থির বাজার। নানা অজুহাতে দফায় দফায় বেড়েছে দাম। আসন্ন রমজানকে কেন্দ্র করেও অসাধু ব্যবসায়ীদের তৎপরতা থেমে নেই। এরই প্রেক্ষাপটে দাম কমিয়ে আনতে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সরকার। তবে সরকারের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে বেশি দামে তেল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরাও বলে আসছিলেন, আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহার না করলে তেলের দাম কমবে না। তাই আসন্ন রমজানকে ঘিরে তেলের দাম কমানোর জন্য দুই স্তরে ২০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার। গতকাল আমদানি পর্যায়েও ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সরকার।

 

তবে এই ভ্যাট কমানোয় তেলের দাম কিছুটা কমলেও তার সুবিধা এখনই পাবেন না ভোক্তারা। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়েছে। এতদিন যে দামে তেল আনা হয়েছিল তা বর্তমান সময়ের চেয়ে কম। তাই ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলেও খুব একটা দাম কমবে না।

ওদিকে, সরকারের নির্ধারিত দর অনুযায়ী বর্তমানে খুচরা বাজারে লিটারপ্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হওয়ার কথা ১৬৮ টাকায়। এছাড়া খোলা সয়াবিন ১৪০ টাকা থেকে ১৪৫ এবং প্রতিলিটার খোলা পাম তেল ১০০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা। তবে বাজারে নির্ধারিত দরে কোনো তেলই বিক্রি করা হচ্ছে না। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, বোতলজাত সয়াবিন লিটারে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খোলা সয়াবিন তেল বাজারে নেই বললেই চলে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে তেলের সংকট রয়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার খোলা তেল বিক্রি নিষেধ করার পর থেকে বাজারে তেলের সংকট চলছে। তবে ভ্যাট কমানোর পর দাম কিছুটা কমলে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়বে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু ভ্যাট কমালেও দাম কতটা কমবে তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন ভোক্তারা।

রাজধানীর বাসাবো বাজারে তেল কিনতে এসে আনোয়ার হোসেন বলেন, শুনছি ভ্যাট কমানো হয়েছে। তবে এখনো বাজারে তেলের দাম বাড়তি নেয়া হচ্ছে। ভ্যাট কমালেও সরকারের উচিত বাজার মনিটরিং করা। তা নাহলে ব্যবসায়ীরা আমাদের থেকে বেশি দামই নেবে।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন সদস্য (বাণিজ্য নীতি) শাহ মো. আবু রায়হান আল-বেরুনী মানবজমিনকে বলেন, রমজানের জন্য যে তেল প্রয়োজন তা ইতিমধ্যে আনা হয়ে গেছে। সেগুলো কোম্পানিরা ভ্যাট দিয়েই নিয়ে আসছে। তবে সেগুলোতে আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট দেয়া লাগলেও কম দামে কেনা হয়েছিল। এজন্য আমরা তেলের দাম ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করেছিলাম। এখন যে তেল বন্দরে রয়েছে সেগুলোর কিছুটা বেশি দামে আমদানি করা হয়েছে। তবে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হলে দাম সমন্বয় হবে। তিনি বলেন, ভ্যাট ও বিশ্ববাজারের অজুহাত দেখিয়ে একটি সিন্ডিকেট তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে তারা সুবিধা করতে পারেনি।

এ বিষয়ে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তাছলিম বলেন, আমদানি পর্যায়ে যে পরিমাণ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে, তেলের দাম একই পরিমাণে কমবে। তবে উৎপাদন ও ভোক্তা পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহারের ফলে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না।
ওদিকে, দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের অস্থিরতার মধ্যে বিদেশ থেকে তিনটি জাহাজে করে আসছে প্রায় ৭৫ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল। দেশের কয়েকটি শীর্ষ ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব আমদানি করেছে। দু’টি জাহাজে ৩২ হাজার টন তেল বন্দরে এসে পৌঁছেছে। এছাড়া ৪২ হাজার টন তেল নিয়ে আরেকটি জাহাজ আসছে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, গত বৃহস্পতিবার অপরিশোধিত সয়াবিনের দু’টি জাহাজ বন্দরের আউটারে এসেছে। ওই দু’টি থেকে খালাস প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অন্য জাহাজটি ১৯শে মার্চ আউটারে আসবে। আমদানিকারকরা বলছেন, এসব সয়াবিন তেল পরিশোধনের পর রোজার আগেই বাজারে ঢুকবে বলে সয়াবিনের সংকট থাকবে না। বন্দর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার এমটি লুকাস নামের একটি মাদার ট্যাংকার এনেছে ১২ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন। এর মধ্যে টিকে গ্রুপের শবনম ভেজিটেবল অয়েল এনেছে পাঁচ হাজার টন, বে শিপিং করপোরেশন এনেছে ২ হাজার ৯৭৫ টন এবং সুপার রিফাইনারি এনেছে ৮ হাজার টন।

একই দিন এমটি প্যাসিফিক রুবিতে এসেছে ২০ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল। এর মধ্যে রয়েছে মেঘনা গ্রুপের মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারির ৭ হাজার টন, সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন সিটি এডিবল অয়েলের ১০ হাজার টন। ৪২ হাজার ৮৫০ টন সয়াবিন তেল নিয়ে যে এমটি স্ট্যাভেঞ্জার পাইওনিয়ার বন্দরে আসছে, তাতে সিটি গ্রুপ ছাড়াও টিকে গ্রুপ, সেনা এডিবল অয়েল, বালাদেশ এডিবল অয়েলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তেল রয়েছে।