আমি

মোহাম্মদ হোসেন

আমাতে আমি মাথা গুঁজে আছি চোখ বুঁজে। আমার প্রেমে আমি যতন করে মগন হয়ে আছি অনেকটা ভূতগ্রস্তের মতো। করোনাকালের এই কঠিন দিনগুলোতে অন্যের দিকে চোখ তুলে তাকাবার মতো পর্যাপ্ত সময় আমার নেই। গোঁফে তা দিয়ে বুদ্ধি পাকাই শুধু আমার নিজের স্বার্থের জন্য। এ নিয়ে কে কী ভাবলো তাতে আমি কান দিই না, প্রয়োজনও নেই।
বাজারে পৌরসভা মার্কেটে আমার একটা কাপড়ের দোকান ছিল। মোটামুটি ভালোই চলতো। কিন্তু এই ব্যবসা এখন মন্দাক্রান্ত ভাইরাসের ভয়ে। আগে থেকেই লাইনঘাট কিছুটা চেনা থাকায় এখন নেমেছি মেডিকেল সামগ্রীর ব্যবসায়। বিশেষ করে করোনার সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রিতে আমি ব্যস্ত সময় পার করছি। বিভিন্ন কোম্পানির নিম্নমানের ও নকল মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার, মেডিকেল গগলস, শীল্ড বুদ্ধি করে বিপুল পরিমাণে কিনে রাখায় এখন অনেক লাভে চড়া দামে বিক্রি করতে পারছি।
যার যেমন মতি তার তেমন গতি। আমার ইচ্ছানুযায়ী মনের মতো একটা অবৈধ আয়ের পথ পেয়ে গেছি, যদিও অনৈতিকতাকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করতাম। এখন করি না। পাটের দড়ি দিয়ে তৈরী শিকেয় সযতেœ তুলে রেখেছি ‘নৈতিকতা’ শব্দটি। আমি অবাক বনে গেছি এই দুর্যোগ মুহূর্তেও দেশে এত এত চাল চোর, তেল চোর, ত্রাণ চোর থাকতে পারে জেনে। ব্যবসায়ীরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে যে যার মতো করে। নাপা আর সিভিট খাইয়ে বেসরকারী ক্লিনিক করোনা রোগীর হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে লাখ লাখ টাকার বিল। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যাপক সংকট দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না কত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে এই খাত থেকে। মোট কথা, যে যেভাবে পারছে দেশটাকে চেটেপুটে খাচ্ছে, লুটেপুটে খাচ্ছে, ইচ্ছে মতো গোয়া মারছে। তো আমি আর বাদ থাকবো কেন ভাই? আমিও খাই। আমি একা সৎ থাকলেই কি ওরাও নাকে খৎ দিয়ে বলবে, ধেত্তেরিকা, যা হওয়ার হয়েছে, ওই মিয়াটা ভালো, আমরাও ভালো হয়ে যাই? নাকি দেশটা তই তই করে মই বেয়ে আকাশে উঠে যাবে?
মানুষের মন কুমারের চাক, পলকে দেয় আঠারো পাক। আমি কিন্তু ওরকম না। খুব মনোযোগ সহকারে আমি আমার কাজ করি, আপন কোলে ঝোল টানি। দেশের ও দেশের মানুষের গোয়া মারায় অদ্ভূত এক আনন্দ আছে। আমি ওটা উপভোগ করি খুব। কী, আপনারা আমাকে মন্দ বলছেন? বলুন না, সমস্যা কী? কুছ পরোয়া নেহি। জীবনের ছন্দ, বেঁচে থাকার আনন্দ আমি খুঁজে পেয়েছি। সময় সুযোগ পেলে আরও বড়ো দান মারবো। সে আশায় বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।