আদালত চত্ত্বরে আইনজীবীদের বিক্ষোভ

চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় নিজেদের স্থাপনা টিকিয়ে রাখতে সোচ্চার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। আদালত ভবন এলাকাটি পরীর পাহাড় নাকি কোর্ট হিল- এ নিয়ে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন ও আইনজীবীদের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে চলছে দ্বন্দ্ব। এর রেশ ধরে আজ মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) আদালত চত্ত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি করেছেন আইনজীবীরা।

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির এই দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। এ নিয়ে বিরোধের জেরে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে প্রায় প্রতিদিনই সরগরম থাকছে আদালত ও সরকারি প্রশাসনের অসংখ্য অফিস বেস্টিত ঐতিহাসিক এই এলাকাটি।

এই পাহাড়ে রয়েছে আদালত ভবন, জেলা আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন স্থাপনা, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অসংখ্য অফিস। তবে এখানে আইনজীবীদের ৫টি ভবনসহ বেশ কিছু স্থাপনাকে অবৈধ চিহ্নিত করে উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করলে বাধে বিপত্তি। প্রশাসনের এ উদ্যোগের বিরুদ্ধে ডাকা প্রতিবাদ সমাবেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন আইনজীবীরা।

আদালত ভবনকে ঘিরে গড়ে উঠা আইনজীবী ভবনগুলোকে যেকোন মূল্যে অক্ষত রাখতে হবে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন হঠকারি সিদ্ধান্ত থেকে ৭ দিনের মধ্যে সরে না এলে লাগাতার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন আইনজীবী নেতারা।

প্রবীণ আইনজীবী ও মহানগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চাকরি করেছেন ভালো করেছেন। তবে এটা চট্টগ্রাম, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর না। জেলাপ্রশাসকের পদবী সম্মানের পদবী, আপনি এই পদবীকে অসম্মান করছেন। নাহয় আপনি আমাদের পানির লাইন কাটতে আসতেন না। আপনি ক্ষমতা দেখান। এরকম ক্ষমতা কত দেখলাম। কত ক্ষমতা এমন চলে গেছে। ক্ষমতার বাহাদুরি করবেন না। আজকে ডিসি আছেন। কাল বদলি করলে সচিবালয়ে টিনের ছাউনিতে টুলে বসে চাকরি করতে হবে।

তিনি বলেন, সিআরপিসি ক্ষমতায় আপনি প্রভাব দেখান। সিআরপিসি ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হলে আপনি ফিশারি অফিসার। সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করবেন না। বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ রাসেলে নাম করে একটি রাসেল চত্ত্বর করেছেন। এটা যদি ভালোবাসা থেকে করতেন তাহলে মনকে বুঝাতাম। আপনি এটা করেছেন আইনজীবীদের দমাতে। শেখ রাসেলের নাম করে এসব করতে দেওয়া হবে না। সরকারিভাবে আপনাকে যতটুকু দেওয়া হয়েছে ততটুকু করেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এইচএম জিয়াউদ্দিন বলেন, উনি (জেলাপ্রশাসক) গত বছর মন্ত্রণালয়ে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। সেখানে বলেছেন আমরা আইনজীবীরা সন্ত্রাসী কায়দায় জায়গা দখল করেছি। সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছি। আমরা সেই চিঠির প্রতিটি শব্দের, প্রতিটি লাইনের জবাব আইন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছি। আমরা বৈধভাবে বিদ্যুতের লাইন চালু করতে গিয়েছি। তিনি সন্ত্রাসী কায়দায় বিভিন্ন গাড়ি নিয়ে মহড়া দিয়েছেন।

আইনজীবীদের এ নেতা আরও বলেন, তাঁর ছাত্র রাজনীতির কোন ব্যাকগ্রাউন্ড নাই। তিনি একজন পিউর আমলা। কিন্তু তিনি আজ চট্টগ্রামে চাকরি করতে এসে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন। তিনি ভুলে গেছেন এই চট্টগ্রাম প্রীতিলতার চট্টগ্রাম। এই চট্টগ্রাম থেকেই কিন্তু এরশাদ সরকার পতনের আন্দোলন হয়েছে। উনাকে এসব ভুলে গেলে চলবে না। আপনি ঢাকা থেকে সচিব এনে আমাদের হুমকি দিবেন না। আপনি তাদেরকে উপহার দেন। আমরা সে উপহারের হিসাব চাই। সচিবদের প্যাকেট দেন, সেই প্যাকেটের টাকা কোত্থেকে আসে সেটাও জানতে চাই।