‘সবাইকে টিকা দিতে ব্যর্থ হলে উদ্ভব হবে নতুন ভ্যারিয়েন্ট’

করোনাভাইরাস নিয়ে আরো সতর্কবাণী শুনিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তিনি বলেছেন, প্রতিজন মানুষকে টিকা দিতে ব্যর্থ হলে তাতে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব ঘটবে। তিনি এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে বৈশ্বিক ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বানে বলেছেন, সামনের বছরে করোনা থেকে মুক্তি এবং অর্থনীতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সবাই হাতে হাত ধরে কাজ করতে হবে।

এমন মুহূর্তকে তিনি ‘ট্রু মোমেন্ট অব রিকভারি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সোমবার তিনি বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি সবাইকে সমতার ভিত্তিতে এবং সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করতে হবে। নতুন ভ্যারিয়েন্টের উদ্ভব হলে তাতে প্রাত্যহিক জীবন যাপন এবং অর্থনীতির ক্ষতি হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন দ্য প্রিন্ট।

ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে ২০২২ বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন।

এতে তিনি বলেছেন, অর্থনীতি, জনগণ ও এই গ্রহের জন্য ভয়াবহ এক জটিল অবস্থার মধ্যে চলছে বৈশ্বিক সব ইভেন্ট। তিনি এ সময় করোনা মহামারিকে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে তুলে ধরেন। এই মহামরিতে গত দু’বছরে বিশ্বে কমপক্ষে ৩০ কোটি ৪০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫৪ লাখ।

আফ্রিকার দেশগুলোর তুলনায় উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে টিকাদানের হার সাতগুন বেশি। এর কড়া সমালোচনা করেন অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তিনি বলেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হলে তা সীমান্ত অতিক্রম করে ছড়িয়ে পড়বে। জীবন ও অর্থনীতিকে স্থবির করে তুলবে। সর্বশেষ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যুত চমকানোর গতিতে। এর ফলে বিভিন্ন দেশে সংক্রমণ বাড়ছে সূচকীয় গতিতে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর হুমকি সৃষ্টি করেছে।

তিনি উদ্বেগ তুলে ধরেন। বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত বছরের শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সব দেশের শতকরা ৪০ ভাগ এবং এ বছরের মধ্যভাগে শতকরা ৭০ ভাগ নাগরিককে টিকা দেয়ার টার্গেট স্থির করেছিল। কিন্তু সেই টার্গেটের ধারেকাছেও নেই বিশ্ব। অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ আরো বলেন, সব দেশকে পরবর্তী মহামারির জন্য অবশ্যই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। তার জন্য মনিটরিং প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ করতে হবে। আগেভাগে শনাক্তকরণ করতে হবে। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা থাকতে হবে। এ জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তৃত্বকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি লাইসেন্স শেয়ার করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতি সংহতি প্রকাশ করার আহ্বান জানান ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর প্রতি, যাতে ‘আমরা এই মহামারি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেতে পারি’। তা করতে গিয়ে কোম্পানিগুলোর ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গ আসে। গুতেরাঁ বলেন, আমরা চাই না কোনো ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি আর্থিক সঙ্কটে পড়ুক বা তারা বিনিয়োগে অক্ষম হয়ে পড়ুক। এমন পরিস্থিতিতে তাদেরকে আর্থিক সমর্থন দিয়ে পাশে থাকার জন্য তিনি উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

গুতেরাঁ আরো বলেন, বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন, যাতে এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তা সব দেশের জন্য পক্ষপাতিত্বহীনভাবে কাজ করে। যখন খুব বেশি প্রয়োজন পুনরুদ্ধারে তখন বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। বৈশ্বিক সংহতি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের এমন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিতে হবে, যা উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যোগ্য। এর অর্থ হলো জরুরি ভিত্তিতে ঋণ পুনর্গঠন, দীর্ঘমেয়াদে ঋণ ব্যবস্থার সংস্কার।