উ. কোরিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য জাতিসংঘের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোর পর উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরো অবরোধ দেয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বুধবার এ কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের রেজ্যুলুশন উপেক্ষা করে ধারাবাহিক বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে পিয়ংইয়ং। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে তারা। এসব পরীক্ষার প্রতিটিই চালানো হয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলুশন লঙ্ঘন করে।

তাই জাতিসংঘের অবরোধ দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র। টুইটারে এসব কথা বলেছেন থমাস-গ্রিনফিল্ড। এর আগে উত্তর কোরিয়ার ৬ কর্মকর্তা, একজন রাশিয়ান ও রাশিয়ার একটি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ওয়াশিংটন।

এর কারণ, এসব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির যে কর্মসূচি তার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তারা কিনেছে রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

ওদিকে লিন্ডা-গ্রিনফিল্ড আলাদা এক টুইটে লিখেছেন, উত্তর কোরিয়া অব্যাহতভাবে যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, পারমাণবিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে, তার প্রেক্ষিতে আমাদের উদ্বেগ আমরা তুলে ধরেছি। জাতিসংঘের সব সদস্য দেশের প্রতি আমাদের আহ্বান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের রেজ্যুলুশনের অধীনে সবাই যেন তাদের বাধ্যবাধকতা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কূটনীতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ৫ জন কর্মকর্তার নাম প্রস্তাব করেছে। তাদের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার কথা বলা হয়েছে। বিষয়টিতে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ক কমিটিতে সর্বসম্মতভাবে একমত হতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে রাশিয়া ও চীন। তারা এ প্রস্তাবে ভোট দেবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যদি তারা এতে ভোট না দেয় বা নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবে একমত না হয়, তাহলে এ প্রস্তাব মাঠেই মারা যেতে পারে।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে পিয়ংইয়ং। রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন এই পরীক্ষা তদারকি করছেন। বলা হয়েছে, ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল হাইপারসনিক। এমন অস্ত্র সবাইকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিরক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে। এমন অস্ত্র আছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার হাতে। উত্তর কোরিয়া এমন অস্ত্রের প্রথম পরীক্ষা চালিয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তারপর তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, সেটা ছিল হাইপারসনিক।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কারণে ২০০৬ সালে প্রথম তাদের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয় জাতিসংঘ। অসৎ উদ্দেশে পরিচালিত এসব কর্মসূচিতে অর্থায়নের ধারাকে থামিয়ে দিতে পরের বছরগুলোতে তা আরো কঠোর করা হয়েছে। এক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে উদ্যোগ নেন। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে তিনি হ্যানয়ে বৈঠক করেন। তা থেকে ধারণা করা হয়েছিল কাজ হচ্ছে। কিন্তু না। কিছুদিন পরে আবার একই ধারায় পরীক্ষা চালিয়ে যেতে থাকে উত্তর কোরিয়া।

প্রায় এক বছর আগে ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনিও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ২০২১ সালের প্রথম অর্ধেকাংশে পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উন্নয়ন অব্যাহত রাখে উত্তর কোরিয়া।