সারা দেশে উপেক্ষিত ১৬ দফা নির্দেশনা, আসছে কঠোর নির্দেশনা

করোনা পরিস্হিতির আবারও অবনতি হয়েছে। টানা এক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে আক্রান্ত-মৃত্যু। ওমিক্রন আতঙ্কের মধ্যে দেশে গত এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবার ১ হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে-যা গত ৯৮ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার পৌঁছেছে ৫ শতাংশের কাছাকাছি। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ১৬ দফা নির্দেশনা।

কিন্তু এই নির্দেশনাগুলো রাজধানীসহ সারা দেশে উপেক্ষিত। অনেকে মাস্ক পরছেন না, স্বাস্হ্যবিধি মানছেন না। তাই সরকারের ১৬ দফা বাস্তবায়নে আসছে কঠোর নির্দেশনা। দুই-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে জানিয়েছেন স্বাস্হ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, করোনাকালে সারা বিশ্বে ২০ থেকে ২৫ ভাগ ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্হ্যসেবা কর্মী কমেছে। বাংলাদেশে এমনিতেই ডাক্তার-নার্স সংকট। এই পরিস্হিতিতে স্বাস্হ্যবিধি না মানার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়লে ভয়াবহ বিপদ হবে। যে চিকিত্সা দেবে সেই ডাক্তার যদি সুস্হ না থাকেন তাহলে কীভাবে মানুষ চিকিত্সাসেবা পাবে? তাই সময় থাকতে এখন থেকেই সবার মাস্ক পরা, স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলাসহ সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার যে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে, তা সবার মেনে চলতে হবে। তাহলে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

স্বাস্হ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্হ্য মন্ত্রণালয় শুধু পরামর্শ দিতে পারে। তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাস্হ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে হেলাফেলাভাব বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনবে। সবারই স্বাস্হ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। স্বাস্হ্যবিধি মানলে নিজে, পরিবার ও দেশ রক্ষা পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিক থাকবে। রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীসহ সকল পেশার মানুষকে স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ও সোসাইটি অব মেডিসিনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর দেশের বর্তমান করোনা পরিস্হিতিতে নিম্নচাপ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, যখন ঘূর্ণিঝড় হবে, তখন ১১ নম্বর সিগন্যালের মতো সংক্রমণের পরিস্হিতির সৃষ্টি হবে। তবে এখন থেকে নিয়ম মানলে কোনো সমস্যা হবে না। সবার মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় পরবর্তী সময়ে কী হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ১৬ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সামনে কঠোর নির্দেশনা আসছে বলেও জানান তিনি।

জনস্বাস্হ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এ বি এম আকতার হামিদ বলেন, সামনে কী পরিস্হিতি হবে তা নির্ভর করছে স্বাস্হ্যবিধি মানার ওপর। স্বাস্হ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে। তবে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনে আক্রান্তদের সাধারণত হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, মৃত্যু ঝুঁকিও কম। দেশে সংক্রমণ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা ওমিক্রনে সংক্রমিত কি না, সেটি জিনোম সিকুয়েন্স করলে বোঝা যাবে। তিনি বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে টিকা নিতে হবে, মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক পরলে ৯০ ভাগ নিরাপদ থাকা যায়। তবে নিয়ম মেনে মাস্ক পরতে হবে। অনেকে নাকের নিচে মাস্ক পরে, আবার অনেকে উলটো করে মাস্ক পরে। এগুলো বিপজ্জনক।

স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে স্বাস্হ্য বিভাগ থেকে ১৬ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব নির্দেশনা না মানলে ক্ষতি কার? সবার। আমেরিকার মতো দেশ এখন করোনা মোকাবিলা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশে ব্যাপক হারে করোনা দেখা দিলে পরিস্হিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তাই সবার স্বাস্হ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

স্বাস্হ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১ হাজার ১৪০ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। এর চেয়ে বেশি রোগী এক দিনে শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ ২৯ সেপ্টেম্বর, সেদিন ১ হাজার ১৭৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর এসেছিল। গত এক দিনে ২৩ হাজার ৪৩৫টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। বুধবার নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ছিল ৪ দশমিক ২০ শতাংশ, গতকাল বৃহস্পতিবার তা বেড়ে ৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ হয়েছে। এর বেশি শনাক্তের হার সর্বশেষ ছিল গত ২০ সেপ্টেম্বর; সেদিন প্রতি ১০০ পরীক্ষায় ৫ দশমিক ৬৭ জনের কোভিড পজিটিভ এসেছিল। এ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৮ হাজার ৯৭ জনের।

স্বাস্হ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সেরে উঠেছেন ১৯৬ জন। তাদের নিয়ে মোট ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৪ জন এ পর্যন্ত সুস্হ হয়ে উঠলেন। গত এক দিনে শনাক্ত নতুন রোগীদের মধ্যে ৯৭৮ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা, যা মোট আক্রান্তের ৮৫ শতাংশের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া সাত জনের মধ্যে পাঁচ জন পুরুষ, তিন জন নারী। তাদের মধ্যে এক জন ঢাকা বিভাগের, চার জন চট্টগ্রাম বিভাগের এক জন রাজশাহী বিভাগের এবং এক জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের মধ্যে ছয় জন সরকারি হাসপাতালে এবং এক জন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্হায় মারা গেছেন।