ইঞ্জিনের পিস্টন সিলিন্ডার থেকে বিস্ফোরণ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)’র অনুমোদন ছাড়াই ত্রুটিপূর্ণ নতুন ইঞ্জিন দিয়ে চলছিল এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি। পরবর্তীতে ইঞ্জিনের পিস্টন সিলিন্ডার থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে এবং যেটা পুরো লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় লঞ্চের চালক থেকে শুরু করে অন্যান্য দায়িত্বরতরা আগুনের উপস্থিতি টের পেয়ে নিজেদের জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারা চেষ্টা করলে আগুন ছড়িয়ে পড়া থামাতে পারতেন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্যের তদন্ত কমিটির সূত্র এমনটিই জানিয়েছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইঞ্জিন রুমের থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটে। লঞ্চটিতে থাকা আগের যে ইঞ্জিন ছিল তা পরিবর্তন করে নতুন করে আবার একটি ইঞ্জিন লাগানো হয়। সেই ইঞ্জিনের কোনো পরীক্ষামূলক ট্রায়াল না দিয়ে লঞ্চের সঙ্গে সংযোজন করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

নতুন ইঞ্জিনের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কাছ থেকে তারা (লঞ্চ কর্তৃপক্ষ) কোনো অনুমতি নেয়নি। সঙ্গতকারণে নতুন ইঞ্জিনটি সেখানে ঠিক ছিল কিনা এটা তারা প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষা করে দেখেনি। এটাই এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে মূল কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে।

তদন্ত সূত্র জানায়, এতগুলো মানুষের মৃত্যুর পেছনে আরও তো অনেক কারণ নিশ্চয় রয়েছে। সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই সহস্রাধিক মানুষের জীবন নিয়ে নতুন ইঞ্জিন দিয়ে তারা ট্রায়াল কেন দিয়েছে সেটাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নতুন মেশিনটি পুরাতন ইঞ্জিনের সঙ্গে স্যুট করবে কিনা সেটা যদি আগে তারা পরীক্ষা করে দেখতেন এবং বিআইডব্লিউটিএ’র কোনো বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা করতেন তাহলে হয়তো এটা বোঝা যেত অন্য কোনো বিষয় ছিল। এখন মনে হচ্ছে এটা তাদের অনেক বড় একটি গাফিলতি। কেন তারা বিশেষজ্ঞ দিয়ে ইঞ্জিনটিকে টেস্ট (পরীক্ষা) করালেন না এর পেছনে তাদের কী যুক্তি ছিল সেটাও তদন্তের আওতাধীন। যেহেতু এত বড় একটি লঞ্চ সেক্ষেত্রে এই বিশাল বিশাল ইঞ্জিন কোনো পরীক্ষা এবং অনুমোদন ছাড়াই সংযোজন এটা কেন করেছে তারা সেটা প্রশ্নের বিষয়। কারণ, তারা চাইলেই ইচ্ছামতো ইঞ্জিন সংযোজন করতে পারেন না।

তদন্ত সূত্র জানায়, ধারণা করা হচ্ছে লঞ্চে যখন আগুন লেগে যায় তখন হয়তো চালক থেকে শুরু করে আরও যারা দায়িত্বরত ছিলেন তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেননি। অথবা লঞ্চের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার পরে তারা নিজেরা নিজেদের সেফ (বাঁচাতে) করতে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এত বড় লঞ্চটিতে চালক, ক্যাপ্টেন, কর্মচারীসহ দায়িত্বরত লোক থাকার কথা ছিল কমপক্ষে ১৫ জন। হয়তো বা এতগুলো লোক ছিল না। নিশ্চয়ই কম লোক ছিল।

দুর্ঘটনার পরদিনই একটি সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হলেও নতুন করে আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়িয়েছেন তারা। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য নৌ-পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, তদন্তের মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এক সপ্তাহ আগে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলার সুযোগ নেই।

এদিকে লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পঞ্চম দিনে আরও দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কোস্টগার্ড কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, নিয়মিত উদ্ধার অভিযান চালানোর সময় দুপুরে চরভাটারকান্দা গ্রামসংলগ্ন বিষখালী নদীতে এক কিশোরের লাশ ভেসে থাকতে দেখে উদ্ধার করেছি। তার বয়স আনুমানিক ১৫ বছর হবে। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সুগন্ধা নদীর মাঝখান থেকে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা। প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ নামের লঞ্চে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ ৫১ জনের তালিকা দিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।