অপরাধ প্রমাণ হলে লঞ্চ মালিক হামজার সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা হতে পারে

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় লঞ্চ মালিক হামজালাল শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল র‌্যাব কেরানীগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে এখনো তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়নি। আদালতের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন মঙ্গলবার নৌ আদালতে তাকে হাজির করতে পারে। এর আগে গত রোববার লঞ্চের মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করলে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়না ইস্যু করেন। পরোয়ানা প্রাপ্তরা হলেন লঞ্চের মালিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল আরাফ অ্যান্ড কোম্পানির ৪ মালিক মো. হামজালাল শেখ, মো. শামিম আহম্মেদ, মো. রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি, লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার মো. রিয়াজ সিকদার, ইনচার্জ মাস্টার মো. রিয়াজ শিকদার, ইনচার্জ ড্রাইভার মো. মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় মাস্টার মো. খলিলুর রহমান ও দ্বিতীয় ড্রাইভার আবুল কালাম।

নৌযানটিতে পর্যাপ্তসংখ্যক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পর্যাপ্তসংখ্যক লাইফ বয়া, পর্যাপ্তসংখ্যক বালির বাক্স ও বালতি না থাকা, ইঞ্জিন রুমে বাইরে ও অননুমোদিতভাবে অনেকগুলো ডিজেল বোঝাই ড্রাম, রান্নার জন্য সিলিন্ডার গ্যাসের চুলা থাকার অভিযোগে আইএসও ৭৬ ও এর সংশোধনী ২০০৫ এর ৫৬, ৬৬, ৬৯ ও ৭০ ধারার পরিপন্থি বিধায় উল্লেখিত লঞ্চের ৪ স্টাফের বিরুদ্ধে এবং আইএসও ৭৬ এর ৫৬, ৬৬, ও ৭০ ধারার পরিপন্থি অপরাধের জন্য নৌযান মালিকদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে এসব ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হলে স্টাফ ও মালিকদের কী শাস্তি হতে পারে। মেরিন কোর্ট আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অপরাধ প্রমাণিত হলে বিচারক সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড অনাদায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা (১০ হাজার টাকার নিচে নয়) অথবা উভয় দণ্ড দিতে পারবে।

কথা হয় মেরিন কোর্টের আইনজীবী এম.বি.বি. সালাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, যেসব ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই ধারার অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিচারক সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড অনাদায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা (১০ হাজার টাকার নিচে নয়) অথবা উভয় দণ্ড প্রদান করতে পারবে। দুর্ঘটনা রোধে এই আইনে শাস্তি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করি। লঘু দণ্ড হওয়ার কারণে অনেক মালিকই নিয়মকানুনের তোয়াক্কা করে না। মেরিন কোর্টের আরেক আইনজীবী মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন মানবজমিনকে বলেন, এই আইনে আদালত সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পারেন। যা খুবই অপ্রতুল। এই ধারাটিও সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-নিরাপত্তা অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ অধ্যাদেশের ৫৬ ধারায়, বিস্ফোরণ, অগ্নি ইত্যাদির নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে অগ্নিকাণ্ড, বিস্ফোরণ বা সংঘর্ষ ইত্যাদি প্রতিরোধের জন্য নিয়মানুযায়ী জীবনরক্ষাকারী যন্ত্রপাতি, অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম এবং অন্যান্য সরঞ্জাম দ্বারা সজ্জিত বা প্রস্তুত না করা পর্যন্ত কোনো অভ্যন্তরীণ নৌযান বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে অভ্যন্তরীণ নৌযাত্রায় বা কাজে ব্যবহৃত হইবে না।

৬৬ ধারায় সনদপত্র ইত্যাদি ব্যতীত নৌযান চালানোর দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া যাইবে, যদি তিনি-(ক) এমন কোনো ব্যক্তিকে একটি অভ্যন্তরীণ নৌযানের মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার বা ইঞ্জিন চালক হিসেবে নিয়োগ করেন, যাহার উপযুক্ত ও বৈধ যোগ্যতার সনদপত্র বা লাইসেন্স থাকা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নহেন। (খ) যথোপযুক্ত বৈধ যোগ্যতার সনদপত্র বা লাইসেন্সের উপযুক্ত না হইয়া বা যোগ্যতার সনদপত্র বা লাইসেন্স না পাইয়া এরূপ নৌযানের কোনো নৌ-যাত্রার মাস্টার, ইঞ্জিনিয়ার বা ইঞ্জিন চালক হিসেবে কাজ করেন।

৬৯ ধারায় বিপজ্জনক মালামাল ইত্যাদি বহন করার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান করা হইবে, যদি তিনি ৫৭ নং ধারার ২ উপধারা ভঙ্গ করিয়া কোনো অভ্যন্তরীণ নৌযানে নিজের সঙ্গে কোনো বিপজ্জনক মালামাল নিয়ে যায়, ডেলিভারি দেয় বা বহন করিবার জন্য সম্মতি দেয় এবং এই ধরনের বহনকৃত বা সরবরাহকৃত মালামাল সরকার বাজেয়াপ্ত করিবে।

৭০ ধারায় বলা হয়েছে অসদাচারণ ইত্যাদির দরুন জাহাজ বিপদাপন্ন করিবার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। (১) কোনো অভ্যন্তরীণ নৌ-যানের যেকোনো পদে নিযুক্ত কর্তব্যরত কোনো ব্যক্তি পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রাপ্ত হইবে, যদি ইচ্ছাকৃত শৃঙ্খলা ভঙ্গ কর্তব্য অবহেলা-(ক) এইরুপ কোনো কর্ম করে যাহার দরুন নৌযান ডুবিয়া যায়, ধ্বংস অথবা কোনো অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা সেই নৌযান বা অন্য কোনো নৌযানের আরোহীর জীবন বা অঙ্গহানির আশঙ্কা বা কোনো সম্পত্তি ধ্বংস বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; অথবা-(খ) তাহার এইরুপ করণীয় কোনো কর্তব্য সম্পাদন করিতে অস্বীকার করে বা ব্যর্থ হয়, যাহা করিলে কোনো নৌযান ডুবিয়া যাইতে কোনো ব্যক্তির জীবন বা অঙ্গহানি হইতে রক্ষা করা সম্ভব হতো। (২) যেখানে কোনো অভ্যন্তরীণ নৌযান দ্বারা সংঘটিত নৌ দুর্ঘটনার ফলে হলো প্রাণহানি বা কোনো ব্যক্তি আহত বা নৌযানের বা অন্য কোনো যানের কোনো সম্পদ নষ্ট হইয়া থাকে এবং এইরূপ দুর্ঘটনা কোনো নৌযানের ত্রুটি বা অভ্যন্তরীণ নৌযানের মালিক, মাস্টার বা কোনো অফিসার বা ক্রু সদস্যের অযোগ্যতা বা অসাধারণ বা কোনো আইন ভঙ্গের দরুন ঘটিয়া থাকে, তবে ওই নৌযানের মালিক মাস্টার বা ক্রু সদস্য অথবা তাদের প্রত্যেককে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা পর্যন্ত কিন্তু দশ হাজার টাকার নিচে নহে অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডেই দণ্ডিত হতে পারে।

অধ্যাদেশের শাস্তিসংক্রান্ত কয়েকটি ধারা সংশোধন করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের সাবেক প্রসিকিউটিং কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা। তিনি বলেন, অধ্যাদেশে নৌযান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যে শাস্তির বিধান রয়েছে, তা অপর্যাপ্ত। এ ছাড়া পরিদর্শন ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য পরিদর্শকের সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আরও নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন নৌ-আইনজীবীরা।

এদিকে, লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বরগুনার আদালতে হামজালাল শেখকে প্রধান আসামি করে ২৫ জনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছেন বরগুনা সদর উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম। তিনি বালিয়াতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৯টি ধারায় বেপরোয়া নৌযান চলাচল, অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই নৌযান পরিচালনা ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অবশ্য নৌ আদালতের আইনজীবীরা জানান, নৌ দুর্ঘটনার বিচারের মামলা নৌ আদালতের বাইরে হওয়ার সুযোগ নেই। নৌ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অন্য আইনে থানায় বা আদালতে (নৌ আদালত নয়) মামলা হলে অভিযুক্ত মালিক-কর্মচারীরা অনেক ক্ষেত্রে আইনের ফাঁকফোকরের সুযোগে পার পেয়ে যান।

অভিযান-১০ লঞ্চের মালিক হামজালাল গ্রেপ্তার
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিদুর্ঘটনার ঘটনায় লঞ্চ মালিক হামজালাল শেখ (৫৩)কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। কেরানীগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধরা পড়ার ভয়ে সেখানে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। হামজালাল মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থানার মৃত হাজী ওহাব আলী শেখের ছেলে। গতকাল সন্ধ্যায় কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে। লঞ্চে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র ও লাইফ সেভিং সরঞ্জামাদি পর্যাপ্ত ছিল না। লঞ্চে অগ্নিনিরাপত্তা পদ্ধতি, আগুন শনাক্তের যন্ত্র ও সতর্কীকরণ পদ্ধতির দুর্বলতা ছিল বলে জানা যায়। লঞ্চের ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নির্ধারণ যন্ত্র সঠিক ছিল না বলে জানা যায়। লঞ্চের যাত্রীদের অভিযোগ পাওয়া যায় যে, ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকার কারণে চলার সময় বিকট শব্দ হচ্ছিল। চিমনি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে ধোঁয়া বের হচ্ছিল না। তবে অস্বাভাবিক অধিক গতিতে লঞ্চটি চলমান ছিল। এক পর্যায়ে ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হয়। তখন গোটা লঞ্চের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ইঞ্জিন রুম থেকেই লঞ্চে ছড়িয়ে পড়ে আগুন। লঞ্চের লাইফ সেভিং সরঞ্জামাদি যথাস্থানে ও পর্যাপ্ত ছিল না।

কমান্ডার মঈন বলেন, লঞ্চ মালিক হামজালাল আমাদেরকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত যাত্রী চাহিদা তৈরি করতে দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটিতে গত নভেম্বরে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। যাতে দ্রুত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। তার তথ্য অনুযায়ী বিলম্বে ছেড়ে গন্তব্যে আগে পৌঁছানো গেলে লঞ্চে যাত্রীর সংখ্যা বেশি পাওয়া যায়। এ লক্ষ্যে গত নভেম্বরে ওই লঞ্চে ৬৮০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন পরিবর্তন করে ৭২০ হর্স পাওয়ার ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান থেকে ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়নি। একজন সাধারণ মিস্ত্রি/ফিটার দ্বারা ইঞ্জিন পরিবর্তন করা হয়েছে। পূর্বের ইঞ্জিনটি চায়না থেকে তৈরিকৃত ছিল। বর্তমানে জাপানি তৈরিকৃত রিকন্ডিশন ও ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। জাহাজের ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়ে এবং ইঞ্জিন পরিবর্তন পরবর্তী যথাযথ কর্তৃপক্ষ হতে কারিগরি পরিদর্শন, অনুমোদন গ্রহণ করেননি। এ ছাড়া কোনো ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া তার লঞ্চে কর্মরত তিনজন (মাস্টার এবং ড্রাইভার) কর্মচারীর নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কর্তৃক এই জাহাজ চালনার অনুমোদন নেই। তিনি বলেন- লঞ্চে আগুন লাগার ১০ মিনিটের মধ্যে সুপারভাইজার আনোয়ার মোবাইল ফোনে তাকে আগুন লাগার বিষয়ে অবহিত করেছে।

র‌্যাব জানায়, মোবাইল যোগাযোগে যে কথোপকথন হয়েছে তাতে হামজালাল ধারণা করছেন সকল ক্রুরা আগুন লাগার পর জ্বলন্ত ও চলন্ত লঞ্চ রেখে লঞ্চটি ত্যাগ করে। ফলে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটে। তিনি আরও জানান, তার ক্রুদের পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত কেউ হারিয়ে বা মৃত্যুবরণ করেছেন বলে কোনো অভিযোগ পাননি। গ্রেপ্তারকৃত লঞ্চের মালিক যাত্রাপথের সময় কমানোর ব্যাপারে ঘটনার দিন দুপুরে লঞ্চের মাস্টার ও স্টাফদের নির্দেশনা দেন। ইঞ্জিন পরিবর্তনের পর এ পর্যন্ত তিনবার বিভিন্ন গন্তব্যে লঞ্চটি যাতায়াত করেছে। তিনি আরও জানান যে, যাত্রীদের জন্য কোনো লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা ছিল না। শুধুমাত্র তার কর্মচারীদের জন্য ২২টি লাইফ জ্যাকেট ছিল। যাত্রীদের জন্য ১২৭টি বয়া ছিল বলে তিনি দাবি করেন। তবে অধিকাংশ বয়াই যথাস্থানে ছিল না। এ ছাড়া লঞ্চটির কোনো ইন্স্যুরেন্স করা ছিল না বলে তিনি জানান।

র‌্যাব জানায়, মো. হামজালাল শেখ ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘদিন জাপান প্রবাসী ছিলেন। তিনি ২০০০ সালে জাপান থেকে দেশে এসে একটি লঞ্চ ক্রয় করেন। বর্তমানে তার মালিকানাধীন ৩টি লঞ্চ রয়েছে। এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটি ৪ জনের মালিকানাধীন থাকলেও তিনিই মূল মালিক এবং সমস্ত ব্যবস্থাপনা তিনি নজরদারি করতেন বলে জানান।

এর আগে রোববার অগ্নিদুর্ঘটনায় নৌ আদালতে করা মামলায় লঞ্চের চার মালিকসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ জয়নাব বেগম। রোববার সকাল ৯টায় বরগুনার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এডভোকেট নাজমুল ইসলাম নাসির বাদী হয়ে বরগুনা মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলার আবেদন করেন। আদালতের বিচারক মুহাম্মদ মাহবুব আলম আবেদন গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের আদেশ দেন। মামলায় বলা হয়েছে, লঞ্চটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র, বয়া ও বালুর বাক্স ছিল না। এ ছাড়া ইঞ্জিনকক্ষের বাইরে অননুমোদিতভাবে ডিজেলবোঝাই বেশ কয়েকটি ড্রাম রাখা ছিল। ইঞ্জিনকক্ষের পাশে রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার (বিপজ্জনক দাহ্য পদার্থ) রাখা হয়েছিল। একই সঙ্গে লঞ্চটি অননুমোদিত লোকবল দিয়ে পরিচালনা করা হচ্ছিল বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন-লঞ্চটির স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আল আরাফ অ্যান্ড কোম্পানির চার মালিক হামজালাল শেখ, শামিম আহম্মেদ, রাসেল আহাম্মেদ ও ফেরদৌস হাসান রাব্বি, লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার রিয়াজ সিকদার, ইনচার্জ চালক মো. মাসুম বিল্লাহ, দ্বিতীয় মাস্টার খলিলুর রহমান ও দ্বিতীয় চালক আবুল কালাম।