আফগানিস্তানে নাটকে নারীদের অভিনয় নিষিদ্ধ করে আইন

আফগানিস্তানে টিভি নাটকে নারীদের অংশগ্রহণ বা অভিনয় নিষিদ্ধ করে নতুন আইন করেছে তালেবান সরকার। একই আইনে টিভি পর্দায় আসতে হলে একজন নারী সাংবাদিক বা উপস্থাপককে হেডস্কার্ফ পরতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে সেই হেডস্কার্ফ কেমন বা কি ধরনের হবে সে বিষয়ে নির্দেশনায় কিছু বলা হয়নি। সাংবাদিকরা বলছেন, এই আইনটি অস্পষ্ট এবং এর ব্যাখ্যা দাবি রাখে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে দিয়ে ১৫ই আগস্ট দেশটির ক্ষমতা দখল করে তালেবানরা। তারা প্রথমে বা শুরুর দিকে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেকে আশঙ্কায় ছিলেন, আস্তে আস্তে কঠোর বিধিনিষেধের দিকে অগ্রসর হবে তারা। বস্তুত হচ্ছেও তাই।

কারণ, এরই মধ্যে তারা মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল শিক্ষায় নিষিদ্ধ করেছে মেয়েদের। যাও বা খোলা আছে, সেখানে মেয়ে ও ছেলে শিক্ষার্থীদের আলাদা করে শিক্ষাদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মেয়েদের শিক্ষা দানের জন্য শিক্ষিকা বা প্রবীণদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন তাদেরকে টিভি নাটকে অভিনয়ে নিষিদ্ধ করা হলো। এর আগে ১৯৯০ এর দশকে তাদের শাসনামলে মেয়েদের শিক্ষা এবং কাজে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ।

 

এখন আফগানিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তাতে আছে আটটি নতুন আইন। এতে ইসলামিক শরিয়া, আফগানিস্তানের মূল্যবোধ ও আইনের বিরুদ্ধে যায়, এমন সিনেমা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে পুরুষদের শরীরের স্পর্শকাতর অংশ প্রকাশ পায় এমন ফুটেজের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কৌতুক এবং বিনোদন জাতীয় শো’তে ধর্মকে অবমাননা করা হয় অথবা আফগানদের অনুভূতিতে আঘাত হানে- এমন বিষয়কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালেবানরা আরো বলেছে, বিদেশি সিনেমা- যেগুলো বিদেশি সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করে, এমন সিনেমা প্রচার করা যাবে না। এখানে উল্লেখ্য, আফগানিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যেসব সিনেমা বা নাটক প্রচার করে, তার বেশির ভাগেই নেতৃস্থানীয় চরিত্রে থাকেন নারী।

 

আফগানিস্তানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি সংগঠনের সদস্য হুজ্জাতুল্লাহ মুজাদ্দেদি বলেছেন, নতুন এই বিধিনিষেধ অপ্রত্যাশিত। তিনি বলেছেন, কিছু আইন করা হয়েছে যা, প্রাকটিক্যাল নয়। যদি এসব আইন প্রয়োগ করা হয় তাহলে বাধ্য হয়ে অনেক সম্প্রচার চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবে।

এর আগের আদেশে তালেবানরা যুবতীদের ঘরের ভিতর অবস্থান করার নির্দেশ দেয়। এর অর্থ হলো দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যাকে শিক্ষাগ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা। বিশ্বের মধ্যে এমন একমাত্র দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান। ওদিকে রাজধানী কাবুলের মেয়রও মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নারী কর্মীদের বাসায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তালেবানরা বলেছে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ এবং মেয়েদের শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞা অস্থায়ী সময়ের জন্য। দেশে কর্মপরিবেশ এবং পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে এলেই এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।