ব্যাটিং! বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন এখন আক্ষেপের নাম

ব্যাটিং! বাংলাদেশ ক্রিকেটে যেন এখন আক্ষেপের নাম। কোনোভাবেই ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন না টাইগার ব্যাটাররা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল এই ব্যাটিং। বোলাররা কখনো প্রতিপক্ষকে অল্পতে বেঁধে রেখে দেখায় জয়ের পথ কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত মানতে হয়েছে হার। গতকাল পাকিস্তানের বিপক্ষেও সেই লেজেগোবরে ব্যাটিং অব্যাহত রাখলো টাইগাররা। বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল ব্যর্থদের। লিটন দাস, সৌম্য সরকারদের জায়গা নিয়েছেন সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্তরা। কিন্তু বদলায়নি ব্যর্থতার চিত্র।
গতকাল দলীয় মাত্র ৬১ রানে বিদায় নেয় টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত লেজের ব্যাটাররা ভরসা হয়ে এনে দেন লড়াইয়ের পুঁজি। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়োন্টিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ থামে ১২৭/৭-এ। এই পুঁজি নিয়েই বোলাররা লড়াই জমিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তান জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে।
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৬ রান আসে আফিফ হোসেনের ব্যাটে থেকে। বিশ্বকাপে টানা ৮ ম্যাচে ব্যর্থ এই তরুণ দেশের মাটিতে ব্যাট হাতে ফেরার ইঙ্গিত দেন। কিন্তু স্টাম্পিং আউট হয়ে মাঠে মারা যায় তার বড় ইনিংসের সম্ভাবনা। ৩০ রানে অপরাজিত ছিলেন শেখ মেহেদী হাসান। ২৮ রান করে আউট হন নুরুল হাসান সোহান। ক্রিজে থিতু হয়েও তারা কেউই দলকে বড় সংগ্রহ উপহার দিতে পারেননি। তবে এই ক’জনের ব্যাট হেসেছিল বলেই হয়তো মান রক্ষা হয় বাংলাদেশের। নয়তো টস জিতে আগে ব্যাট করা বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি টেকেনি ৭ বলের বেশি। পাক পেসার হাসান আলীর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো নাঈম শেখ ১ রান করে। বেশ চমক জাগিয়ে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হওয়া সাইফ হাসানও ব্যর্থ। নিজের প্রথম ম্যাচে কোনো ছাপই ফেলতে পারেননি তিনি। কখনোই টি-টোয়েন্টির উপযুক্ত ব্যাটসম্যান বলে বিবেচিত না হওয়া এই ডানহাতি অভিষেকেও নড়বড়ে। সাইফ আউট হন মাত্র ১ রান করে। মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়রের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের কিছুটা সুইং করা বলে ক্যাচ দেন স্লিপে।
অন্যদিকে সিরিজ শুরুর আগে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের বার্তা দেয়া নাজমুল হোসেন শান্তও ব্যর্থ। এই নিয়ে তৃতীয় দফা টি-টোয়েন্টি দলে ডাক পেয়ে শান্ত থামেন ১৪ বলে ৭ রান করে। ওয়াসিমের দ্বিতীয় শিকার হন শর্ট বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৩ উইকেটে মাত্র ২৫ রান। আশা দেখিয়ে আরেক দফা হতাশ করলেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়ায়দও। তবে তাকে দুর্ভাগাই বলতে ভবে, মোহাম্মদ নওয়াজের হাল্কা টার্ন করা বল বেরিয়ে যাওয়ার আগে চুমু খেয়ে যায় স্টাম্পে। যা খেয়ালই করতে পারেননি ব্যাটসম্যান কিংবা আম্পায়ারদের কেউই। আত্মবিশ্বাসী উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের আপিলের প্রেক্ষিতে টিভি রিপ্লে দেখে আউট দেন আম্পায়ার।
অবশেষে ৪০ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করেন আফিফ। ১১তম ওভারে মোহাম্মদ নওয়াজকে হাঁকান টানা ২ ছক্কা। কিন্তু আবারো তাড়াহুড়া করতে গিয়ে শাদাব খানের গুগলি বুঝতেই পারেননি তিনি। বল তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় উইকেটকিটপারের হাতে। স্টাম্পড হন, থামেন ৩৪ বলে সমান ২ টি করে চার-ছক্কায় ৩৬ রান করে। সেই সময় মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত একশই ছুঁতে পারবে না বাংলাদেশ।
এরপর অবশ্য বাংলাদেশের শত রান ছাড়ানো যে সংগ্রহ তাতে বড় অবদান নুরুল হাসান সোহান ও শেখ মেহেদীর। দুজনে মিলে জুটিতে যোগ করেন ২৪ বলে ৩৫ রান। সোহানের ব্যাটে আসে ২২ বলে ২৬ রান। শেষ পর্যন্ত শেখ মেহেদীর ২০ বলে ৩০ রানের অপরাজিত ইনিংস। শেষ বলে তাসকিনের ছক্কায় বাংলাদেশের স্কোর বোর্ডে ৭ উইকেটে ১২৭। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট হাসান আলীর। দুই উইকেট নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। একটি করে শিকার মোহাম্মদ নওয়াজ ও শাদাব খানের।