রুই, কালবাউস, কাতলা, মৃগেল ও গাঙ্গেয় ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন

প্রথমবারের মতো রুই, কালবাউস কাতলা ও মৃগেল ও গাঙ্গেয় ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উন্মোচন করেছে একদল গবেষক। তবে, এর আগে চীনে মৃগেল মাছ ও ভারতে কাতলা মাছের জীবন রহস্য উন্মোচন করা হয়।

বিপন্ন প্রজাতির ডলফিন এবং কার্প জাতীয় মাছের জিনস সিকোয়েন্স করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এনসিবিআই’র ডেটা ব্যাংকে জমা দিয়ে মিলেছে অনুমোদন।

মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) আয়োজিত ভার্চুয়ালি হালদা নদীর ৪টি কার্প জাতীয় মাছ ও ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্স এবং হ্যাচারি সম্বলিত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব তথ্য প্রদান করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) হালদা রিসার্চ অ্যান্ড ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়ার নেতৃত্বে এ গবেষণায় জিনোম সিকুয়েন্স এক্সপার্ট হিসেবে কারিগরি সহায়তা দেন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) অধ্যাপক ড. এ এম এ এম জুনায়েদ সিদ্দিকী। এছাড়া গবেষণা কার্যক্রমে নিউজিল্যান্ড ও চীনের দুই গবেষক ও চবি, সিভাসু ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শিক্ষার্থী রয়েছেন।

গবেষণায় জানা গেছে, দুই বছরে হালদা নদীর ৪টি কার্প জাতীয় মাছ ও মিঠা পানির ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়। বিশ্বে প্রথমবারের মতো রুই, কালবাউস, মৃগেল, কাতল ও গাঙ্গেয় ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য উম্মোচন করা হয়। এতে মোট ৮২ হাজার ৭৮৮টি জিন শনাক্ত করা গেছে। এর মধ্যে রুই মাছের ১৬ হাজার ৬০৯টি, কাতলা মাছের ১৬ হাজার ৫৯৭টি, মৃগেল মাছের ১৬ হাজার ৬০৭টি, কালবাউস মাছের ১৬ হাজার ৬২০টি ও মিঠা পানির ডলফিনের ১৬ হাজার ৩৬৫টি জিন শনাক্ত করা হয়।

অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, ডলফিনের প্রজাতি ‘প্লাটানিস্টা গাঞ্জেটিকা’র পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস করার মাধ্যমে বাংলাদেশে নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়েছে। হালদা নদী বাংলাদেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র বিশুদ্ধ প্রজনন ক্ষেত্র। কার্প জাতীয় মাছ প্রাকৃতিক পরিবেশ ও হ্যাচারিতে বড় হওয়া মাছের জেনেটিক পার্থক্য নির্ণয়ে বিভিন্ন তুলনামূলক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, এরআগে বন্য পরিবেশে বড় হওয়া রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশের কোনো পূর্ণাঙ্গ জিনোম বিন্যাস করা হয়নি। তাই, আমাদের এই গবেষণা হ্যাচারি ও বন্য পরিবেশে বড় হওয়া উক্ত প্রজাতিগুলোর তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইনব্রিডিং সমস্যাসহ পরিবেশগত পরিবর্তন, অসুস্থতা, রোগের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ‘জৈবিক প্রক্রিয়া’ খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে।

তিনি আরও বলেন, মিঠা পানির ডলফিন। যেটাকে আমরা শুশুক বলি, সেটি বিপন্ন জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। ভারতের গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোতে এদের বাসস্থান হওয়ার কথা। ভৌগলিকভাবে হালদা, কর্ণফুলী এবং সাঙ্গু নদীর অবস্থান অনুযায়ী গঙ্গা ও এর শাখা নদীগুলোর সঙ্গে চট্টগ্রামের এই নদীগুলোর কোন সংযোগ নেই। এমনকি অতীতেও সংযুক্ত থাকার কোন প্রমাণ এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই হালদা, কর্ণফুলী এবং সাঙ্গু নদীতে এই ডলফিনের আগমন, বিস্তৃতি এবং অবস্থান এতদিন রহস্যাবৃত ছিলো।

জীবন রহস্য উদঘাটনের উদ্দেশ্য:
গবেষকরা বলছেন, অত্যাধুনিক NGS প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার সপ্টওয়্যার (Bioinformatics) এর ব্যবহারের মাধ্যমে উন্মোচিত তথ্য একটি ড্রাপ্ট জিনোম ডাটাবেজ তৈরি করা। যা ভবিষ্যতের গবেষণাকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এছাড়া এ গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিকিকরণ ও হালদার ব্র্যান্ডিং কার্যক্রমে তথ্যভান্ডার হিসেবে কাজ করবে। অন্যদিকে বিবর্তনের উৎস (Evolutionary Origin) হিসেবে হালদার কার্প ও ডলফিনের জিনোমের তথ্যভান্ডার তৈরী করা সম্ভব হবে।

অধ্যাপক ড. এ এম এ এম জুনায়েদ সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, কতকয়েক মাসে হালদা নদীতে বেশ কয়েকটি ডলপিনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আমরা একটির ময়না তদন্তও সম্পন্ন করেছি৷ হালদা নদীর ৪টি কার্প জাতীয় মাছ ও মিঠা পানির ডলফিনের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকুয়েন্সিং হওয়ায় এখন এই নদীর ডলফিন কেন মারা যাচ্ছে, এটি তাদের জিনগত সমস্যা কিনা বা কোন ধরনের দূষণে মারা যাচ্ছে তা জানা যাবে।