আজ পহেলা অগ্রহায়ণ… মানুষ বাঁধা পড়েছে হেমন্তের মায়া জালে

মির্জা ইমতিয়াজ::

প্রথম ফসল গেছে ঘরে-
হেমন্তের মাঠে মাঠে-
ঝরে শুধু শিশিরের জল; পেঁচা, জীবনানন্দ দাশ

“ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ॥
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো–
কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু। সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রকৃতির বাংলার ঘরে আবার এসছে নবান্ন। প্রকৃতির রুপ এবং ফসলের মাঠে কৃষকের হাসিতে বাংলার মানুষ বাঁধা পড়েছে হেমন্তের মায়া জালে । কবির ভাষায়
‘আবার আসিব ফিরে ধান সিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়/ হয়তো মানুষ নয় হয়তো শঙ্খচিল শালিখের বেশে;/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে…’ (জীবনানন্দ দাশ)। বাংলার আদিগন্ত মাঠ জুড়ে এখন হলুদে-সবুজে একাকার। নয়নাভিরাম অপরূপ প্রকৃতি। সোনালি ধানের প্রাচুর্য।

আনন্দধারায় ভাসছে কৃষকের মন-প্রাণ। বাড়ির উঠোন ভরে উঠবে নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে। এসেছে অগ্রহায়ণ। হিম হিম হেমন্ত দিন। হেমন্তের প্রাণ নবান্ন আজ। বিভিন্ন জায়গায় বসবে গ্রামীণ মেলা। শহরেও নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হবে।

এখন আমন ধান কাটার মাহেন্দ্র সময়। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার পুরোভাগে থাকা এই নবান্ন উৎসব অনাদি কাল হতে বাঙালির জীবন অধিকার করে আছে। লোককথায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বাৎসরিক মাঙ্গলিক দিন। এ সময় বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয় জনপদ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি। নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে কোথাও কোথাও মিলাদ, মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রেওয়াজ আছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের কৃষকের ঘরে পূজার আয়োজন চলে ধুম-ধামে।
প্রকৃতির বৈরিতার কারণে কৃষকরা তিন বার বন্যার কবলে পড়ে ফসল হারালেও অগ্রাহায়ণ আবারো আমাদের মাঝে সুখ-সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। অগ্রাহায়ণে ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি এবার কিছুটা অম্লান হলেও আগামীর সুবার্তা নিয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে যায়।