বন্দরের জেটি, ইয়ার্ড ও ডিপোতে ডেলিভারি কার্যক্রমে ছন্দপতন

শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরুর পর বন্দরের জেটি, ইয়ার্ড ও অফডকে (ডিপো) স্বাভাবিক ডেলিভারিতে ছন্দপতন ঘটে।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে বন্দরে আমদানি করা পণ্যচালান ডেলিভারিতে। তবে জেটিতে জাহাজ থেকে খোলাপণ্য ও কনটেইনার লোড-আনলোড স্বাভাবিক রয়েছে।

 

বন্দরের এনসিটি, সিসিটি’র অপারেশনের দায়িত্বে থাকা একজন কর্মকর্তা জানান, জেটি, ইয়ার্ড ও টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ কর্মযজ্ঞ স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। জেটির জাহাজগুলোর লোড-আনলোড স্বাভাবিক রয়েছে। তবে আমদানি পণ্য ডেলিভারি ৫ শতাংশে ঠেকেছে। অনেক ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি পণ্য বা কনটেইনার বোঝাই করে অপেক্ষা করেছে ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেই বন্দর ছাড়ার আশায়।

বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বে। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন ১৯টি অফডক থেকে যে সাড়ে ৪ হাজার কনটেইনারবাহী গাড়ি বন্দরে চলাচল করত তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। আবার বিভিন্ন কারখানা থেকে রফতানি পণ্য নিয়ে যেসব ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অফডকে আসত তা-ও আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে। এ ধর্মঘট যত দ্রুত প্রত্যাহার হবে ততই বন্দর, অফডক তথা অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।

তিনি জানান, অফডকগুলোতে এখন ৯ হাজার রফতানি পণ্যভর্তি কনটেইনার, ৮ হাজার আমদানি পণ্যভর্তি কনটেইনার এবং ৩৩ হাজার খালি কনটেইনার রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে রফতানিপণ্য কিংবা খালি কনটেইনার জাহাজীকরণে সমস্যা হয়েছে কিনা কয়েকদিনের মধ্যে জানা যাবে।

বন্দরের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) সকাল আটটায় বন্দরের মেইন জেটিতে ৬টি কনটেইনার জাহাজ, ৩টি সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজ, ১টি খাদ্যশস্যাবাহী ও ২টি সিমেন্ট ক্লিংকারবাহী জাহাজ ছিল। এ সময় বহির্নোঙরে ৬৫টি জাহাজের মধ্যে আনলোড হয়েছে খাদ্যশস্যবাহী ৯টি, সাধারণ পণ্যের ৮টি, সারের ২টি, ক্লিংকারের ২০টি, চিনির ২টি ও তেলের ৩টি জাহাজে। বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ জাহাজের মধ্যে কনটেইনারবাহী ছিল ৩টি। ওই দিন ২০ ফুট দীর্ঘ (টিইইউ’স) ৪৯ হাজার ১৮টি কনটেইনরা ধারণক্ষমতার বিপরীতে বন্দরে কনটেইনার ছিল ৩৭ হাজার ৭৩৮টি। ২৪ ঘণ্টায় ডেলিভারি হয়েছিল ৪ হাজার ৩৪টি।

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ। ছবি: জাহেদ কায়সার, নিউজ চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস বন্ধ। ছবি: জাহেদ কায়সার, নিউজ চট্টগ্রাম

বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুর আহমদ বলেন, প্রতিদিন ৫-৬ হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ঢুকে বন্দরে। জাহাজ বেশি ভিড়লে আরও বেশি পণ্যবাহী গাড়ির প্রয়োজন হয়। ধর্মঘটের কারণে ট্রাকগুলো অলস বসে আছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম আকতার হোসেন বলেন, বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড, শেড, টার্মিনাল ও ডিপোতে শুল্ক পরিশোধ, কায়িক পরীক্ষাসহ খালাসের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও হাজার হাজার গাড়ি অলস বসে আছে ধর্মঘটের কারণে। ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে আমদানি-রফতানিকারক, বন্দর ব্যবহারকারী, শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এটা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন।

শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর কোনো আলটিমেটাম ছাড়াই পরিবহন ধর্মঘট কাঙ্ক্ষিত নয়। আমরা মনে করি, করোনার দীর্ঘমেয়াদি অচলাবস্থার পর যখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্তে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আলোচনার মাধ্যমে আজই যৌক্তিক সমাধান আশা করি। নয়তো আমাদের আমদানি, রফতানিতে সংকট, দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্টসহ বন্দরে অচলাবস্থা তৈরি হবে। শিল্পকারখানার কাঁচামাল সংকট দেখা দেবে। দেশে নিত্যপণ্যের সরবরাহ চেনে বিঘ্ন ঘটাবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান সন্ধ্যায় বলেন, বন্দরের জেটি, ইয়ার্ড, টার্মিনাল, ডিপোতে কার্গো ও কনটেইনার লোড আনলোড স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। আন্তঃজেলা পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল না করায় ডেলিভারি সাইডে সমস্যা হচ্ছে। বন্দর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান, চেম্বার, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা সুষ্ঠু সমাধানের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।