২ মাস আগেই নালার উপর স্ল্যাব করার দাবি করেন ব্যারিস্টার মনোয়ার

চট্টগ্রাম শহরের খাল ও নালার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানেও নেই নিরাপত্তা বেষ্টনী। যে কারণে নালা ও খালে ডুবে মরছে মানুষ।

চলতি বছরের ৩০ জুন নগরীর ষোলশহর এলাকায় চশমা হিল খালের পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় সিঁড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশা খালে পড়ে যায়। স্রোত থাকায় খালে পড়ে তলিয়ে মারা যান অটোরিকশা চালক সুলতান (৩৫) ও যাত্রী খাদিজা বেগম (৬৫)। চট্টগ্রামে নালায় পড়ে ২৫ আগস্ট ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ নিখোঁজ হন, আজ পর্যন্ত যার কোনো খোঁজ মেলেনি। বুধবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন মুরাদপুর এলাকায় আয়োজন রেস্টুরেন্টের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাস্থল ওই নালায় কোনো স্ল্যাব ছিল না। এর পর দিন লাইভে এসে নালাগুলোতে ঢাকনা বা স্ল্যাব দেয়ার দাবী জানান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন। এদিকে নগরীর বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়েই নালার ওপর স্ল্যাব না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এর সপ্তাহ খানেক আগে চাক্তাই এলাকায় নালায় পড়ে মারা যান এক ভবঘুরে। একই ধরনের ঘটনা ঘটে গত ২৭ সেপ্টেম্বর, এ দিন আগ্রাবাদে নালায় পড়ে মৃত্যু বরন করে চট্টগ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক মেধবী তরুনী সেহেরিন মাহবুব সাদিয়া। ১৫ ফুট গভীর ও প্রচুর আবর্জনায় ভরা ছিল। প্রায় তিন-চার টন আবর্জনার স্তূপ সরিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়। এর পর থেকে অরক্ষিত নালা নিয়ে চট্টগ্রামজুড়ে ক্ষোভ বইছে।

নালার ওপর স্ল্যাব না থাকা, খাল-নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করাসহ পর্যাপ্ত সড়কবাতির অভাবে এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। গত চার মাসে নগরীতে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব মৃত্যুর পর অরক্ষিত খাল ও নালার পাশে কার্যত কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেবা সংস্থাগুলো দায় এড়ানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এক সংস্থা আরেক সংস্থার উপর দায় চাপাচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীতে প্রায় ৯৪৬ কিলোমিটার নালা রয়েছে। এছাড়া নগরীর আওতাধীন ৫৭টি খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৬১টি কিলোমিটার। এই ৯৪৬ কিলোমিটার নালার কী পরিমাণ খোলা আছে তার কোনও তথ্য নেই সিটি করপোরেশনের কাছে। তবে নগরীর অধিকাংশ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের চলাচল পথের পাশে অধিকাংশ নালার ওপর কোনও স্ল্যাব নেই। বৃষ্টির সময় নগরী পানিতে তলিয়ে গেলে কোথায় ফুটপাত, কোথায় নালা আর কোথায় সড়ক তা বোঝার কোনও উপায় থাকে না।

২ মাস আগেই নালা ও খালগুলোতে সুরক্ষিত করার দাবিটি (ব্যারিস্টার মনোয়ার এর লাইভ বক্তব্য) পাঠকের সামনে তুলে ধরলাম-

https://www.facebook.com/watch/live/?extid=NS-UNK-UNK-UNK-IOS_GK0T-GK1C&ref=watch_permalink&v=387034472878406

আসলামু আলাইকুম।
গতকাল চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা। মাত্র সামন্য বৃষ্টিপাতের পর কি হয়েছে আপনারা সকলে জানেন। সবচেয়ে আজকে বড় কথা হচ্ছে আমি লাইভে আসতে বাধ্য হলাম সে হচ্ছে একজন নাগরিক উনি হাটতে গিয়ে হঠাৎ করে পা পিছলে পানিতে পড়ে গেলেন। কিন্তু তিনি জানতেন না সেই পানিটা আসলে ছিল এটাই একটা ড্রেন। ড্রেনের উপর দিয়ে প্রবাহিত। এখানে বুঝার মত সুযোগ নাই, রাস্তা এবং ড্রেন – খাল গুলোতে পানি একাকার হয়ে গেছে। কোটা নালা কোনটা খাল কিম্বা সমতল পানির নিচে এখান বুঝার কোন উপায় নেই।
চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের চেয়ারম্যান হিসাবে আমি চট্টগ্রামবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি আবেদন করতে চাই এবং জানাতে চাই যে চট্টগ্রামের বিশেষ করে চট্টগ্রাম মহানগরীর পঞ্চাশ লক্ষাধিক মানুষ আজ গত কালকের ঘটনার পর থেকে খুবই হতাশ হয়েছে। আমি এখানে সিআরবি নিয়ে বলছি না।

জলাবদ্ধতা ইস্যুতে আমরা দেখতে পাচ্ছি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মহাপ্রকল্প যেটা নেওয়া হয়েছে সেটা কখন শেষ হবে আমাদের আর জানার কোন এখন পর্যন্ত সুযোগ নেই। এখানে নাই কোন জবাবদিহিতা। প্রকল্প যাঁরা বাস্তবায়ন করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃপক্ষ তাদের উচিত ছিল এখনো উচিত প্রতি মাসে পনের দিন পরপর অন্তত সংবাদ সম্মেলন করে মানুষকে জানানো কতটুকু কাজ হচ্ছে না হচ্ছে। কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে। ২০১৭ সালের মাঝমাঝি সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন তিন বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে।
চট্টগ্রামের জন্য তিনি সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিলেন। কিন্তু আজ কত বছর হয়ে গেল! কত শতাংশ কাজ হয়েছে এখানে জানার অধিকার মানুষের আছে। কত টাকা ব্যয় হয়েছে জানার অধিকার আছে। কেন অনেক ড্রেন গুলো অর্ধ খনন অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে কেন এগুলো শেষ হচ্ছে না জানার অধিকার আছে। এখনো খাল গুলো ভরাট হয়ে আছে। এটা তো জানার অধিকার আমাদের মানুষের আছে।
আমি মনে করি, এই প্রেক্ষাপটে গতকাল যে দুর্ঘটনা ঘটেছে একজন মানুষ খুব সম্ভবত তিনি হারিয়ে গেছেন। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব তিনি যেন বেঁচে থাকেন। তাকে খোঁজা হচ্ছে এখন কিন্তু এটি তো প্রথম ঘটনা নয় এর আগেও ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েকদিন আগে ষোলশহর দুই নাম্বার গেইটের ওখানে একটা দুর্ঘটনায় দুইজন মৃত্যুবরণ করেছিলেন তাও জলাবদ্ধতার কারণে। এর আগে ২০০৭ সালে আমরা যদি একটু পিছিয়ে যায় তাহলে অনেকে জানবেন হয়ত মনে আছে আপনাদের বেশ কয়েকজন মানুষকে ঠিক একই জায়গায় মুরাদপুর মোড়ে সেদিন ড্রেন গুলোর মধ্যে তারা ভেসে গিয়েছিল। এই ড্রেন গুলোতে যখন কাজ করা হয় সড়কের কাজ করা হয় কর্তৃপক্ষ জানে তারা কাজ করছে না। তাদের তো জানা উচিত। একটা কমনসেন্সের ব্যাপার যে দিন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এগুলো কাভারআপ করা প্রয়োজন ছিল। অথবা এখানে একটা সতর্ক ব্যবস্থা থাকা দরকার ছিল। এইজন্য কর্তব্য অবহেলার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। এই জীবনের বিশেষ করে গতকাল যিনি হারিয়ে গেছেন তার জন্য দায়ী থাকতে হবে তাদের।
আমি মনে করি, প্রশাসনিক ভাবে সরকারি ভাবে এর সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে জরুর ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। আরেকটি বিষয় আমি বলি আজকে শুধু মানুষের মৃত্যু নয়, প্রতিদিন যতবারই বৃষ্টিপাত হচ্ছে যতবারই জলাবদ্ধতা হচ্ছে শতশত কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জনজীবনের। স্বাভাবিক ভাবেই চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে। চট্টগ্রাম তো অঘোষিত বানিজ্যিক রাজধানী। বানিজ্যিক রাজধানী ঘোষণা করার কথা আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনো করা হয়নি। আমরা বছরের পর বছর ধরে সেই নেতানেত্রীর আশা পেয়েছি সেই আশা এখনো বাস্তবায়ন অফিসিয়ালি কোন ব্যপার না।
যাই হোক, জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম জাতীয় অর্থনীতির শিরোপা লাভের জন্য চট্টগ্রাম। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে টাট্টা মশকরা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। চট্টগ্রামবাসী মনে করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের দায়িত্ব তিনি নিজ হাতে নিয়েছেন কিন্তু যাদের বাস্তবায়নের দায়িত্ব তারা কি করছেন! তাদের আর কোন জনগণের আস্তা নেই। আমরা অচিরেই হয়ত যারা এর দায়িত্বে আছেন তাদের পদত্যাগ দাবি করতে পারব। আমরা চাইনা অঘটন মূলক কিছু করতে। সব সময় ঘটনমূলক সমালোচনার মধ্যে আমরা সীমাবদ্ধ থাকি। কিন্তু এভাবে মানুষের মৃত্যু হতে থাকলে মানুষের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাবে। আমি আশা রাখব সমস্ত ড্রেন গুলোতে উপরে আর্জেন্ট কাভারিং এর ব্যবস্তা করা হোক। যেখানে কাভার দেয়া যাবে না সেখানে অবশ্যই একটা সতর্ক মূলক কিছু বেঁধে থাকা উচিত। সেখানে ঘেরাও করা রাখা উচিত কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লাল ফ্লেক দিয়ে। যাতে করে এধরণের দূর্ঘটনা আর না ঘটাতে না পারে। আর চট্টগ্রাম শহরে যত বৈদ্যুতিক তার গুলো আছে সেগুলো সব আন্ডারগ্রাউন্ড করা উচিত। অর্থাৎ মাটির নিচে চলে যাওয়া উচিত যেন প্রকাশ্যে বৈদ্যুতিক তার গুলো ঝুলে থাকতে আর দেখা না যায় বিচ্ছিন্ন ভাবে। চট্টগ্রাম শহরকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। এবং তার অংশ হিশেবে যেহেতু আমরা বিশ্ব চট্টগ্রাম বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে আমরা উম্মুক্ত ড্রেন যেখান থেকে দুর্গন্ধ চলে যেতে পারে। অস্বস্তকর করে। সেক্ষেত্রে ড্রেন গুলো শহরে কাভারিং এর প্রয়োজন। এই কাভারিং গুলো হলে স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে যেমন মানুষের জন্য একটা নিরাপদ থাকবে সাথে সাথে অবশ্যই এধরণের দুর্ঘটনা ঘটবে না বলে আমি মনে করি।

যাই হোক, আমরা সবাই চট্টগ্রাম নাগরিক ফোরামের আমাদের যে প্রেসার গ্রুপ সেটা যে উজ্জ্বল। আমরা সব সময়ে আপনাদের কথাই বলি। আমরা চেষ্টা করি আমরা সরকারি সংঠন নয়। সরকারি তহবিল থেকে কিংবা কোন পকেটের তহবিলে আমরা পরিচালিত নয়। আমরা সেচ্ছাসেবী হিসেবে যতটুক পারি আমরা চেষ্টা করছি চট্টগ্রামের মানুষের জন্য, মানুষের সোচ্চার হওয়ার জন্য দেশের দেশের স্বার্থে। জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান দ্রুত হোক এবং এই জন্য নিয়মিত জবাবদিহিতা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছ থেকে দাবি করছি। সব শেষে আবারও এই নাগরিকটি গতকা হারিয়ে গেলেন মর্মান্তিক ভাবে তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। সহানুভূতি জানাচ্ছি। এই সাথে বলব, তার দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয়েছে অবশ্যই তিনি বেঁচে থাকলে শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকবেন। আর যদি বেঁচে না থাকেন অন্য বিষয়। সব ক্ষেত্রেই যথপোযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক ক্ষতি পূরণ দিতে হবে। যাতে করে প্রশাসন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ আগামী দিনে এধরণের আর কোন অবহেলা না করে।ধন্যবাদ।