স্বর্গের পরী তার অপূর্ব কন্ঠে গান শুনিয়ে যাচ্ছে ধুপপানি ঝর্ণায়

নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই।
ধুপপানি শব্দের অর্থ হচ্ছে কুয়াশার পানি। আবার তনচংগ্যা ভাষায় ধুপ শব্দের অর্থ হলো সাদা পানি। পাহাড়ের গা ঘেঁষে কুয়াশার মতো অবিরাম ধারায় সাদা পানি প্রবাহিত হয় বলে স্থানীয়রা এর নাম রাখেন ধুপপানি ঝর্ণা। সংগীতের সুর এবং তালের অপূর্ব সুরধ্বনির মতো এই ঝর্না হতে যেই সুর লহড়ি বেজে উঠে, মনে হয় কোন এক স্বর্গের পরী তার অপূর্ব কন্ঠে গান শুনিয়ে যাচ্ছে সবাইকে।
রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়নের
৩ নং ওয়ার্ডের ধুপপানি পাড়ায় এই দৃষ্টি নন্দন ঝর্না অবস্থিত। দেশের সবচেয়ে সুন্দর ঝর্ণা গুলোর মধ্যে এটি একটি।
সুবিশাল উচ্চতা,শুভ্র জলরাশি, ঝর্ণার নীচে গুহা, পথিমধ্যে উঁচু নীচু দৃষ্টি নন্দন পাহাড় আর ছড়া, ছড়া হতে বহমান ঝিরিঝিরি পানির শব্দ, পাহাড়ী ছোট ছোট পাড়া ও ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর জীবনধারা, ঝর্ণার অনেক উঁচু থেকে আঁচড়ে পড়া জলরাশি দর্শনার্থীদের মূহুর্তের জন্য বিমোহিত করে দেয়।ধুপ পানি ঝর্ণার নীচের গুহায় চোখ বন্ধ করে বসলে মনে হবে এযেন অন্য এক জগত।
সমতল থেকে এই ঝর্নার উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট। ঝর্না থেকে আঁছড়ে পড়া পানির শব্দ প্রায় ১ কিঃ মিঃ দূরে পর্যন্ত শোনা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার (২০ আগস্ট) বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তনচংগ্যাসহ একদল পর্যটককে সাথে নিয়ে এই ঝর্নার সৌন্দর্য উপভোগ করতে যায়। বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরোত্তম তনচংগ্যা বলেন,
ঝর্ণাটি লোক চক্ষুর অন্তরালে ছিল। ২০০০ সালে এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গভীর অরন্যে ধুপ পানি ঝর্ণার উপরে পাহাড়ে ধ্যান শুরু করেন। পরে স্থানীয় লোক জন মিলে ওই বৌদ্ধ ধ্যানরত সন্ন্যাসীকে সেবা করতে গেলে ঝর্ণাটি জন সম্মুখে পরিচিতি লাভ করে। তিনি এই ঝর্নার অবকাঠামো নির্মাণে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন। বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা দেশের সবচেয়ে সুন্দর উপজেলা। এই উপজেলায় যতগুলো ঝর্ণা রয়েছে, দেশের অন্য কোন উপজেলায় এতগুলো ঝর্ণা নেই। এই উপজেলায় ঝর্না, পাহাড়, লেক ও সবুজের সমন্বয়ে নৈসর্গিক স্বর্গ বহমান রয়েছে। এখানকার পর্যটন উপযোগী স্পট গুলোর উন্নয়নের মাধ্যমে এখানকার অধিবাসীদের জীবিকার
সু-বন্দোবস্ত করা সম্ভব হবে, একই সাথে এগুলো প্রচারের মাধ্যমে ভ্রমন পিপাসু মানুষ তাদের স্বর্গরাজ্যের সন্ধান পাবে।
বিলাইছড়ি উপজেলার ৩ নং ফারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তনচংগ্যা, স্থানীয় ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শান্তি রন্জন তনচংগ্যা ও ধুপপানি পাড়ার কার্বারী নতুন কুমার তনচংগ্যা বলেন, সরকার যদি এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায়, তাহলে এখানে আরো পর্যটকরের আগমন ঘটবে।
এই ঝর্ণা দেখতে আসা ফরিদপুর রাজবাড়ির বিশ্বজিৎ মন্ডল, কাপ্তাই থানার ওসি মোঃ নাসির উদ্দীন, চন্দ্রঘোনা খ্রীস্টিয়ান হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং জানান, এই ঝর্ণা দেখতে না আসলে বুঝতে পারতাম না বিলাইছড়ি উপজেলায় এরকম অপরুপ একটি ঝর্ণা আছে। প্রকৃতি যেনো তার আপন মহিমায় সাজিয়েছে এই ঝর্ণাকে।
প্রসঙ্গত, রাঙামাটি বা কাপ্তাই উপজেলা থেকে নৌপথে বিলাইছড়ি উপজেলা হয়ে ফারুয়া ইউনিয়নের উলুছড়ি পাড়ায় গিয়ে ঘন্টা দুয়েক পায়ে হেঁটে ধুপপানি পাড়ায় যাওয়ার পর এই ঝর্নার দেখা মিলবে।
বিলাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিলাইছড়ি উপজেলা হতে ধুপশিল হয়ে ধুপপানি পাড়া পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণের চেষ্টা চলছে। এই সড়ক নির্মান হলে বিলাইছড়ি হতে সরাসরি চাঁদের গাড়ী দিয়ে ধুপপানি ঝর্ণার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হবে।