রিয়াজ হায়দার চৌধুরী :: চট্টগ্রামের সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল কোনো কোনো নেতা লুকোচুরি করছেন। কেউ কেউ কাউকে কাউকে ‘ল্যাং মারতে’ চাচ্ছেন অন্ধকারের অশুভ প্রতিদ্বন্দিতায়। জনস্বার্থে নয়, নিজের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার লক্ষেই ‘জনস্বার্থের পক্ষে থাকার ভান করে ‘ থাকা কারো কারো অবস্থান সম্পর্কেও আমরা জানতে পারছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেও যে যার স্বার্থেই নিজেদের মতো করে ভুল তথ্য পরিবেশনেও মরিয়া। এমন তথ্যও আসে নির্ভরযোগ্য, তবে অসর্থিত নানা সূত্রে। তবে আশ্বস্ত হচ্ছি, আমাদের প্রিয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির বক্তব্যে। এই বিষয়ে স্পষ্ট কিছু কথা বলেছেন তিনি। বর্তমান সরকারের এই সিনিয়র মন্ত্রী অতীতে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন। আন্তর্জাতিকভাবেও পরিবেশ প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে তাঁর বেশ ধারণা রয়েছে । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও তিনি অত্যন্ত স্নেহভাজন । কার্যত তিনিই সরকারের মুখপাত্র। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের কথা তাই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, “চট্টগ্রামের সিআরবি একটি নান্দনিক ও ঐতিহাসিক জায়গা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ রাখার কারণে তিনি ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ’ পদকে ভুষিত হয়েছেন। সুতরাং বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোন কাজ হবে না।’ তথ্যমন্ত্রী ডঃ হাছান মাহমুদ আরো বলেছেন, ” সিআরবিতে পরিবেশ নষ্ট হোক, গাছপালা কাটা হোক, সেটি আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে চাই না এবং সরকার জনগণের বিপক্ষে কোনও কাজ করবে না।” সিআরবি নিয়ে জট, সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং জনমনে সংশয় কাটাতে প্রসঙ্গক্রমেই চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাত সহ নাগরিক আন্দোলন অনন্য ভূমিকা রাখা ডা. মাহফুজুর রহমানের বক্তব্য সংযুক্ত করছি। সিআরবিতে বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় এক পক্ষের দাবি অনুযায়ী এ বিষয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর নেয়া সিদ্ধান্ত’ প্রসঙ্গে বলতে যে তিনি জানালেন চট্টগ্রামে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রক্রিয়াকে ঘিরে নেওয়া ভুল সিদ্ধান্ত ও তা পরবর্তীতে সংশোধনীর কথা। তিনি লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজকে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিছু জাদরেল আওয়ামী লীগ নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যও তাই চাইছিলেন। বিএমএও তাই চেয়েছিল। আমরা কিছু লোক আন্দোলন শুরু করেছিলাম চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা যাবে না। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ভিন্ন স্থানে ভিন্ন প্রশাসনের অধীনে নিতে হবে। আমাদের যুক্তি ছিল মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে সাধারণ জনগণের বিনা মুল্যে উচ্চতর চিকিৎসার সুযোগ থাকবে না। আমরা আমাদের বক্তব্যের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বিভিন্ন ধারা উপধারার ব্যাখ্যা দিয়ে, সরকারি মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে রোগীদের ব্যায় কত পড়বে তার একটি হিসেবও দিয়েছিলাম। অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত স্মরকলিপি আকারে দেয়া আমাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌছে দিয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সত্য জানার পর তাঁর সকল নেতাদের মতামত আমলে না নিয়ে জনগণের কল্যানের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি যে সকল মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তা বাতিল করে ভিন্ন স্থাপনায় ভিন্ন প্রশাসনের অধীনে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ফৌজদারহাটে নির্মিতব্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তারই ফসল।’ এই অতীত উদাহরণটির কথা ভেবেই জনস্বার্থের বিবেচনায় আমরা আশাবাদী হই। মাননীয় তথ্যমন্ত্রী, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। দিকহীন, দিশাহীন চট্টগ্রামবাসীকে দিশা দিলেন আপনি স্পষ্ট বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। নিঃসন্দেহে আমাদের আস্থার সর্বোচ্চ ঠিকানা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে জনবান্ধব সিদ্ধান্তই দেবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি আস্থা আছে আমাদের সবারই। 23/07/2021 ( রিয়াজ হায়দার চৌধুরী : আহ্বায়ক, চট্টগ্রাম নাগরিক উদ্যাগ ও সাধারণ সম্পাদক, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রাম এবং সহ সভাপতি, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন )