কি হবে মিনুর সন্তানদের? মিনুরা কি এভাবেই হেরে যাবে?

গোলাম মওলা মুরাদ: নিয়তির নির্মম পরিহাস শব্দটি আমরা প্রায়ই উচ্চারণ করে থাকি অসহায়ত্বকে গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলতে। মিনু নামের যে নারী তিন বছর জেল খাটার পর আদালতের নির্দেশে বেরিয়ে এল তার জীবন থেকে শুধু তিনটি বছর নয় হারিয়ে গেল অনেক কিছুই। মিনুর স্বামী বাবুল তার সন্তানদের রেখেই চলে গিয়েছিল অন্যখানে। একদিন সেও মারা গেল সড়ক দুর্ঘটনায়। যে ঘরটিতে মিনু তার মাকে নিয়ে থাকতো সেখান থেকেও উচ্ছেদ হলো কুলসুমী আর মর্জিনাদের ষড়যন্ত্রে। আবার তাদেরই কুটচালে মিনুকে যেতে হল জেলে। এক গার্মেন্টস কর্মী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী কুলসুমীর পরিবর্তে জেলখানায় ঠাই হলো নিরপরাধ নারী মিনুর। মিনু জেলে যাবার পর তার শোকে তার মা মারা গেল। দাফন-কাফন করার খরচ দেবার কেউ না থাকায় আশপাশের লোকজন টাকা জোগাড় করে লাশ দাফন করল। জেলে ঢোকার আগে মিনু জান্নাত নামের বুকের যে ধনটিকে দুধ খাইয়ে রেখে এসেছিল মায়ের কাছে সেটিও নির্মমভাবে মারা গেল বুকে পেরেক ফুটে। চলতি বছরের ১৬ই জুন জেল থেকে বেরিয়ে মিনু প্রথম জানলো তার মাও নাই, বুকের ধনটিও হারিয়ে গেছে। কন্যা শিশুদের জন্য জেলগেটে তার অসহায় আর্তনাদ আমার সাথে অনেকেই দেখেছেন। পরে ছোট ভাই রুবেলের ঘরে আশ্রয় নেয়া মিনু তার মা এবং সন্তানের কবরের পাশে বসে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করত। এদিকে জেল থেকে বের হওয়ার পরই মিনু শুনলো তার বড় ছেলে ইয়াসিনও নিখোঁজ। নিখোঁজ বড় ছেলে ইয়াসিনকে খুজতে মিনু বেরিয়েছিল ২৮ জুন সকালে। আর ওই দিন গভীর রাতেই সড়ক দুর্ঘটনায় মিনু নিজেও হারিয়ে যায় চিরদিনের মত। মিনুর মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা ছিল নাকি পরিকল্পিত হত্যা সেটা হয়তো তদন্তে বেরিয়ে আসবে কিন্তু একজন মিনু জীবন থেকে কি পেল? জীবনের কাছে হার মানা মিনু না পেল স্বামীর সোহাগ, একটু আশ্রয় কিংবা নিশ্চিত জীবন। আর তিন সন্তান নিয়েও সে না পেল সুখ না পেল কোন একটুখানি শান্তি। পারিবারিক অনটন ঘুচাতে গিয়ে সন্তানসহ মিনু চলে গেল পরপারে। মা-তো আগেই শেষ। নিখোঁজ বড় ছেলেটিকে অবশেষে পাওয়া গেল সিদ্ধিরগঞ্জে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে। আর মেজো ছেলেটি আছে এতিম খানায়, যেখান থেকে একবার টাকার অভাবে বের হয়ে যেতে হয়েছিল তাকে। চলমান ডিজিটাল সময়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর)কথা শোনা যায়।শোনা যায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহায়তা কথাও। দেশ-বিদেশ জুড়ে আছেন মানবিক সহৃদয়বান অনেক মানুষ। মিনু আক্তারের এতিম দুই শিশুর দায়িত্ব নেওয়ার মত কেউ কি নেই? নাকি তারাও অচিরেই হারিয়ে যাবে মায়ের মতই। আসুন একটু মমতার হাত বাড়িয়ে দেই অসহায় এই এতিম শিশু দুটির জন্য।