প্যারাদ্বীপ-সাগরদ্বীপের মাঝ দিয়ে স্থলে আসবে ‘ইয়াস’

পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ ধীরগতিতে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিমুখ সেই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

সোমবার (২৪ মে) বিকেলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইয়াস বর্তমানে ৪ কিমি বেগে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। বিকেল ৩টায় এটি উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ থেকে ৫২০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে, বালাসোর থেকে ৬২০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬১০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল।

বর্তমানে এটার যে গতিমুখ তা বিশ্লেষণ করে আইএমডি বলছে, ২৬ মে সকালের দিকে এটি উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের কাছে চলে আসবে। আর দুপুরের দিকে উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যভাগ দিয়ে বালাসোরের কাছে কোনো এলাকা দিয়ে স্থলভাগে উঠে আসবে। সে সময়ও এটি অতিপ্রবল ঝড় হিসেবে তাণ্ডব চালাবে। ইয়াস কেন্দ্রে তখন ঝড়ের গতি থাকবে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৮০ কিমি।

এদিকে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরাও একই কথা বলছেন। গতিমুখ পরিবর্তন না করলে ইয়াস সরাসরি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানবে না। তবে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিপাত হবে।

দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী জানান, সরাসরি উড়িষ্যার দিকে ইয়াসের গতিপথ। যদি এই গতিপথ একই রকম থাকে তবে বাংলাদেশে উপকূলে ক্ষতির কোনো প্রভাব হবে না বলে আমরা আশা করছি। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে হয়ত মেঘ ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

তবে ঝড়ের গতিমুখ যে শেষ দিকে পরিবর্তন হয় না, তা কিন্তু নয়। অনেক সময় আরব সাগরের ঝড়ও বঙ্গোপসাগরে চলে আসে।

গত বছরের সুপার সাইক্লোন আম্পান, তার আগে আইলা কিংবা সিডরের ঘূর্ণিঝড় গতিমুখ পরিবর্তন করেই উপকূলে আঘাত হেনেছিল।

আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান জানান, ইয়াস দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৭৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫০ কিমি দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০৫ কিমি দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

অনুকূল আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ২৬ মে ভোর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূলের কাছে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় পৌঁছাতে পারে।

বর্তমানে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিমি পর্যন্ত বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তাই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ২ (দুই) নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নামটি দিয়েছে ওমান, যার ইংরেজি জেসমিন। বাংলায় যাকে জুঁই ফুল বলা হয়।