ইসরাইলি নিশংসতা: ২৫ মিনিটে ১২২ বোমা

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কোনো ইঙ্গিতই মিলছে না। গাজায় গত ১০ই মে থেকে শুরু হওয়া বিধ্বংসী বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইলি বাহিনী। এরমধ্যে মঙ্গলবার রাতে ইসরাইলের বিমান বাহিনী রেকর্ড পরিমাণ বোমা মেরেছে। মাত্র ২৫ মিনিটেই ১২২টি বোমা হামলা হয় গাজার এক স্থানে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সেখানে তারা হামাসের দু’টি টানেল শনাক্ত করেছে। এ দু’টিকে সম্পূর্র্ণ ধ্বংস করে দিতেই এই বোমাবৃষ্টি চলে।
এদিকে মঙ্গলবার ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৪ জন। এরমধ্যে একজন রেডিও সাংবাদিকও রয়েছেন বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমগুলো।
গতকাল ইসরাইলি হামলায় ধ্বংস হয়েছে খান ইউনিসের ৭টি আবাসিক ভবন। নিহতের মধ্যে বাকি তিনজন একই পরিবারের। ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িগুলোর একজন জানান, মাত্র ৫ মিনিট আগে তাদেরকে সতর্ক করেছিল ইসরাইল। এর আগে হামাসও ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে রকেট হামলা চালিয়েছে। এতে একটি কারখানায় কাজ করা থাইল্যান্ডের দুই নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্যানুযায়ী এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় ২১৯ জন নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ তাদের পক্ষে মৃতের সংখ্যা বাড়িয়ে ১২ করেছে। এরমধ্যে আছে, দুই থাই নাগরিক, এক ভারতীয় ও তিন আরব-ইসরাইলিও। রয়টার্সের খবরে জানানো হয়েছে, গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৪৫০টি বাড়ি বা ভবন। এরমধ্যে আছে ৬টি হাসপাতালও। বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন অর্ধলক্ষাধিক গাজাবাসী।
ইসরাইলের নির্মম হামলা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ আল-আস্তাল বলেন, যাদের ইসরাইলি ‘মানবিকতা’ দেখার ইচ্ছে আছে তারা যেনো গাজায় এসে সেটা দেখে যায়। দেখুন, এই বাড়িগুলোতে মানুষ বাস করতো আর ইসরাইল সেগুলোকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। তার নিজের বাড়িও ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইল। তিনি অভিযোগ করেছেন, তার বাড়িতে বোমা ফেলার আগে সতর্কও করেনি ইসরাইল। যদিও ইসরাইলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তারা যেসব বাড়িতে হামলা চালান সেগুলোতে মূলত হামাস সদস্যরা আশ্রয় নেয়। এছাড়া, হামলার আগে তারা সতর্ক করে দেন বলেও জানানো হয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে।
ইসরাইলি নেতারা জানিয়েছেন, তারা হামাস ও ইসলামিক জিহাদের বিরুদ্ধে হামলা অব্যাহত রাখবে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, গাজায় থাকা ইসলামপন্থি সশস্ত্র দলগুলোর কাছে এখনো ১২ হাজারের বেশি মিসাইল ও মর্টার বোমা রয়েছে। এগুলো দিয়েই তারা গাজা থেকে নিয়মিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত রাতে সাইরেন বেজে উঠেছিল ইসরাইলের আশদদ, তেল আবিবসহ বেশ কয়েকটি শহরে। যদিও এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। ইসরাইলিদের দাবি, রকেট ক্ষতি করুক বা না করুক এটি তাদের জীবনকে অস্থিতিশীল করে দিচ্ছে।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৫০টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, এতে অন্তত ৪২ হাজার শিশুর লেখাপড়ায় প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। এদিকে ইউনিসেফ জানিয়েছে, হামাসের রকেট হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরাইলের তিনটি স্কুল। এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে পশ্চিম তীরে। এই বিক্ষোভ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২১ ফিলিস্তিনিকে। বিক্ষোভ হয়েছে হেবরন, নাবলুস, জেনিন ও বেথেলহেমে।