নিজের ঘর নিজের মতো

সবাই সুন্দরের পূজারি। শুধু নিজেকে সুন্দর করে সাজালেই হবে না, সেই সঙ্গে চাই শৌখিন সাজের গৃহশয্যা। গৃহের সৌন্দর্য আপনার মনকে প্রফুল্ল করে তুলবে। আর সুন্দর মন আপনাকে সুস্থ জীবন-যাপনে সাহায্য করবে। আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটা সম্ভব গৃহকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা প্রয়োজন।সারাদিনের ক্লান্তি মেটাতে আমরা সবাই আশ্রয় নিই গৃহে। পাখিরা যেমন নীড়ে ফিরে, তেমনিভাবে আমরাও ফিরে যাই আপন আলয়ে। নিজের বাড়ি সবারই প্রিয় জায়গা। আর প্রিয় জায়গায়ই থাকে প্রিয় একটি ঘর। নিজের ঘর। তা যেমনই হোক না কেন? ঘরটা হয় খুবই আপন। তাই ক্লান্ত শরীরটা যখন ঘরের বিছানায় এলিয়ে দিই, তখন যেন স্বর্গের শান্তি পুরো শরীরে ভর করে। বিছানার ছোঁয়া মনে হয় প্রিয়জনের ছোঁয়ার মতোই। তাই সবাই চায় নিজের ঘরটাকে একটু আলাদাভাবে সাজাতে, নিজের মতো গোছাতে। নিজের ঘর নিজের মতো সাজানোতেই স্বস্তি। কিন্তু তারপরও কিছু সহজ টিপস আপনার পছন্দের সঙ্গে মিলে গেলে ঘরটা আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। তাই আপনাদের জন্য জানিয়ে দিচ্ছি কিছু টিপস—

– ঘরটা একটু খোলামেলা দেখে নির্বাচন করুন।
– ঘরে যত কম আসবাবপত্র রাখা যায় ততই ভালো।
– খাটটা ঘরের মাঝখানে রাখতে পারেন, যাতে করে চারপাশ থেকে খাটে উঠতে পারেন। আর একটু ব্যতিক্রমও হলো। তবে ঘরে যদি জায়গা কম হয় তাহলে দেয়াল ঘেঁষে খাট রাখা আবশ্যক। তখন চেষ্টা করুন খাটটা যেন জানালার পাশে রাখা যায়।
– খাটের পাশে একটা ওয়ারড্রব রাখতে পারেন। তাতে করে ঘরের কোনো এলোমেলো কাপড় বা জিনিসপত্র সহজেই তার মধ্যে রেখে দিতে পারেন।
– ঘরে প্রকৃতির আমেজ আনতে টবে একটা গাছ লাগিয়ে রেখে দিন নিজের পছন্দসই জায়গায়। তবে যেখানে আলো-বাতাস আসা-যাওয়া করে সেখানে রাখা ভালো। আর নিয়ম করে গাছটায় পানি দিতে ভুলবেন না। আর যদি টবে না লাগিয়ে কোনো পানি দেয়া বোতল বা ফুলদানিতে গাছ বা ফুল রাখেন তাহলে প্রতিদিন অবশ্যই পানি বদলে দিন। না হলে মশার উপদ্রব বাড়বে।
– ঘরের দেয়ালে একটি ঘড়ি, চলতি বছরের দেয়াল পঞ্জিকা, আর কিছু বিখ্যাত ছবি টানাতে পারেন। ইচ্ছে করলে পারিবারিক ছবিও টানাতে পারেন। অনেকে দেয়ালে ও শোকেসে শোপিস রাখতে চান— সেটাও মন্দ নয়।
– অনেকের অভ্যাস শুয়ে শুয়ে বইপড়া। তাই শোয়ার ঘরে বইয়ের একটা ছোট্ট র‍্যাক রাখতে পারেন।
– শোয়ার ঘরে কখনই টিভি রাখবেন না। এতে করে ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে গান শোনার ব্যবস্থা রাখতে পারেন।
– ঘরের দেয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে আসবাবপত্রের রং করে নিন। আর আসবাবপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে পর্দার রং নির্বাচন করুন।
– শোয়ার ঘরের বিছানা দিনের বেলা যত কম ব্যবহার করা যায় তত ভালো। টিভি রুম থেকে টিভি দেখে এসে বিছানায় যাওয়া ভালো। আর যদি শোয়ার ঘরেই টিভি থাকে তাহলে বিছানা না ঘেঁটে বসে টিভি দেখুন। বিছানাটা টানটান হয়ে সুন্দর থাকলে দেখবেন রাতে ঘুমাতে কেমন আরাম বোধ হয়।
– প্রতি মাসে সম্ভব না হলে ছয় মাস অন্তর ঘরের আসবাবপত্রগুলো জায়গা বদল করে নিন, তাহলে দেখবেন পুরনো ঘরেও নতুনত্ব আসবে। আর ছয় মাসেও যদি সম্ভব না হয় বছর অন্তর অবশ্যই আসবাবপত্রের স্থান বদল করা উচিত।
– জানালার সঙ্গে এমন আসবাবপত্র রাখবেন না, যাতে জানালাটা খোলা না যায়। ঘরের জানালা অবশ্যই খোলা রাখার ব্যবস্থা রাখুন।
– ঘরে কার্পেট ব্যবহার না করা ভালো, তবে করলে তা অবশ্যই নিয়মিত পরিষ্কার করবেন। কার্পেটে ধুলা জমে হাঁপানি রোগের জন্ম দেয়।
– ১৫ দিন পরপর ঘরের বিছানার চাদর ও পর্দা ধুয়ে দিন। নিয়মিত পরিষ্কার করুন। সম্ভব হলে বদলে দিন।
– বছরের শুরুতে আপনিও পরিবর্তন করে ফেলুন আপনার আসবাবপত্রের স্থান। দেখুন নতুন বছরের মতো আপনার চিরচেনা বাসাটাও কেমন নতুন হয়ে যায়। না জানি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতার মতো আপনিও বলে উঠবেন—এতদিন কোথায় ছিলেন/পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে/নাটোরের বনলতা সেন। সত্যি নিজের বাসাটা সবার কাছেই বড় প্রিয়, বড় আপন। তাই তাকে আরও একটু সুন্দর করে সাজিয়ে নিন।