ট্রাম্পকে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফা অভিশংসন করা হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় দফা অভিশংসন করা হয়েছে। নিজ সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহে উস্কানী দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। দেশের ইতিহাসে ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি চার বছর মেয়াদকালে দু’বার অভিশংসনের মুখে পড়েছেন এবং এবার তার নিজের দলেরও এতে সমর্থন রয়েছে। ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির ১০ জন ক্ষুব্ধ কংগ্রেস সদস্য এই অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। মোট ২শ ৩২ ভোট পেয়ে প্রতিনিধি পরিষদে এই প্রস্তাব পাস হয়েছে। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১শ ৯৭টি। এখন এই প্রস্তাবটি পাঠানো হবে সিনেটে। সেখানে তার বিরুদ্ধে ট্রায়াল বা শুনানি হবে।
যদি সেখানে তিনি অভিযুক্ত হন, তাহলে জীবনে দ্বিতীয়বার সরকারি পদ বা প্রেসিডেন্টের পদে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে তার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ, তিনি আর প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না কোনোদিন। তবে যেহেতু তার ক্ষমতার মেয়াদ আর মাত্র এক সপ্তাহ আছে, তাই অভিযুক্ত হওয়ার কারণে হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করার কোনো ঝুঁকি নেই। কারণ, সিনেট অধিবেশনের জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। এ অবস্থায় ট্রাম্পকে ২০ শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ডেমোক্রেট দল থেকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হাতে উঠবে হোয়াইট হাউজের চাবি। এ খবর দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।
উল্লেখ, ২০১৯ সালে ইউক্রেন কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় প্রথম বার ট্রাম্পকে ইমপিচ করা হয়েছিল। এই ইমপিচ প্রস্তাব গ্রহণের অব্যবহিত পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভিডিওবার্তায় ক্যাপিটল হিলে হামলায় দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে জানান। তবে তিনি তার ইমপিচ নিয়ে কিছু বলেননি। ট্রাম্প বলেন, নতুন প্রশাসনের শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান নির্বিঘœ করতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদ যদিও আর মাত্র এক সপ্তাহেরও কম। এই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনপ্রণেতারা বলেন, এখন রাজনীতি করার সময় নয়। আজ আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন। আমেরিকার গণতন্ত্রের উপর নগ্ন হামলা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। ট্রাম্প দেশের গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছেন। ক্যাপিটল হিল হামলা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।
এদিকে, মার্কিন রাজধানী ওয়াশিংটনে এ উপলক্ষ্যে নেয়া হয় নজিরবিহীন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ওয়াশিংটনকে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয় সব দিক থেকে । হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড, সিক্রেট সার্ভিস সদস্য, এফবিআই এজেন্ট, বিভিন্ন পুলিশ বাহিনীর সশস্ত্র লোকজন ঘিরে আছে ক্যাপিটল হিল সহ গোটা ওয়াশিংটন ডিসি। নগরীর রাস্তায় রাস্তায় দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড। মোড়ে মোড়ে, সড়ক মহাসড়কে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। জায়গায় জায়গায় তল্লাশী চালানো হচ্ছে মেটাল ডিটেকটর বসিয়ে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে রাজধানীর সকল প্রবেশ পথ। ওয়াশিংটন এখন যেনো এক ভূতুড়ে নগরী। সংবাদ সংস্থা সিএনএন ও এবিসি নিউজ জানায়, তাদের রিপোর্টার ও ক্রুদের স্থানে স্থানে পরিচয়পত্র দেখিয়ে তবেই নগরীত ঢুকতে দেয়া হয়। সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পায়ে হেঁটেও লোকজনের চলাচল নেই। সাত ফুট উঁচু লোহার সীমানা প্রচীর বসিয়ে চারদিক ঘিরে ফেলা হয়েছে ক্যাপিটল ভবন ও হোয়াইট হাউস। কয়েক ফুট দূর দূর সারি বেধে দাঁড়িয়ে আছে ন্যাশনাল গার্ড। ২০ হাজার ন্যাশনাল গার্ড ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে আরো ৮টি রাজ্য থেকে আনা বিভিন্ন চৌকস দল।
বুধবার আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ঘন্টাব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের সকল নগর পুলিশের প্রধানদের সাথে ভার্চ্যুয়াল কনফারেন্সে যোগ দেন এফবিআইর ভারপ্রাপ্ত পরিচলক ক্রিস্টোফার ওরেই এবং ইউএসসিআইএস পরিচালক ক্যান কুসিনেলি। ক্যাপিটল হিলের সন্ত্রাসী ঘটনায় দেশব্যাপী ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৮২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে ১শ ৭০টি। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে টহল দিচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীর লোকজন। এমন অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হযনি নাইন ইলেভেন পরর্বতী সময়েও। ট্রাম্পের উগ্রবাদী সমর্থকদের সশস্ত্র যেকোন হামলা ঠেকাতে এমন নিরাপত্তা বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানের পরও বলবৎ রাখা হতে পারে।
ট্রাম্পের বিপক্ষে তার নিজের রিপাবলিকান পার্টির যেসব কংগ্রেসের সদস্য অভিশংসনে ভোট দেন তারা হচ্ছেন- আ্যডাম কিন্জিন্গার (ইলিনয়), লিজ চেনি (ওয়োমিং), জন কাটকো (নিউইয়র্ক), ফ্রেড আপটন ও পিটার মায়ার (মিশিগান), জেইম বিউটলার এবং ড্যান নিউহাউস (ওয়াশিংটন), এ্যান্টনি গন্জালেস (ওহাইয়ো), টম রাইস (সাউথ ক্যারোলাইনা) ও ডেভিড ভালাডো (ক্যালিফোর্নিয়া)।