ফের খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ বিকিকিনি শুরু হয়েছে

শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলমের আশ্বাসে ফের বিকিকিনি শুরু হয়েছে খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ, রসুন, আদার আড়তগুলোতে।

রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০টি পেঁয়াজের আড়তকে জরিমানা করার পরদিন সোমবার সকাল থেকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা বিক্রি বন্ধ রেখেছিলেন আড়তদারেরা।

দিনভর বন্ধ থাকার পর চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আড়তদারেরা। এ সময় স্থলবন্দরের সঙ্গে সংগতি রেখে সীমিত লাভে বা কমিশনে আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি করা হলে অযৌক্তিক জরিমানা, অহেতুক হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন চেম্বার সভাপতি। এ আশ্বাসের ভিত্তিতে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে আড়তের তালা খুলেন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হয় পুরোদমে বিকিকিনি।

চেম্বার সভাপতি বলেন, ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। এখানকার আড়তদারেরা সীমান্ত এলাকার আমদানিকারক বা বেপারীর কাছ থেকে কেজি প্রতি ৫০ পয়সা এবং পাইকারি ক্রেতাদের কাছ থেকে ৩০ পয়সা কমিশনে পেঁয়াজ বিক্রি করেন। শুনেছি ভারতে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। সীমান্তের স্থলবন্দরেও আমদানি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা ঊর্ধ্বগামী। এটি নির্ভর করছে চাহিদা ও জোগানের ওপর। সরকার পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে পেঁয়াজের তীব্র সংকট দেওয়া দেওয়ার আশঙ্কা থাকলে চীন, মিশরসহ বিভিন্ন বিকল্প দেশ থেকে কমদামি পেঁয়াজ আনার এখনি উদ্যোগ নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের চাষিদের প্রণোদনা দিয়ে পেঁয়াজ উৎপাদন ও হিমাগার তৈরি করে সংরক্ষণের দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, যেকোনো সংকটের কারণ চিহ্নিত করা গেলে সমাধান দ্রুত ও টেকসই হয়। পেঁয়াজের বাজারটা এখনো আমদানিনির্ভর। তাই স্থলবন্দর কেন্দ্রিক আমদানিকারকদের সঙ্গে আলোচনা, বাজার মনিটরিং বাড়ালেই সমস্যার সমাধান দ্রুত হবে।

খাতুনগঞ্জের মেসার্স মোহাম্মদিয়া বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী মিন্টু সওদাগর জানান, গণহারে জরিমানার করায় আড়তদারেরা প্রতীকী প্রতিবাদ করেছি। চেম্বার সভাপতির আশ্বাসে আমরা আড়ত খুলেছি। আশাকরি, আমাদের প্রতি প্রশাসনের যে ভুল ধারণা ছিল তা ভেঙেছে। চট্টগ্রামে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানিকারক নেই।

ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরের বড় আমদানিকারক ও বেপারীরা এখানে কয়েক ট্রাক পেঁয়াজ পাঠিয়ে বিভিন্ন আড়তে ভাগ করে দেন। কেজি প্রতি ৫০ পয়সা কমিশনের ভিত্তিতে আমরা বেচে তাদের হাতে টাকা তুলে দিই। এক গাড়িতে যদি ৩১৫ বস্তা পেঁয়াজ আসে সেখানে ৩০ বস্তাই দাগি, পচা, নষ্ট থাকে। এগুলো কমদামে বিক্রি এমনকি ফেলে দিতে হয়। ট্রাকসহ ওজন আর বস্তাপ্রতি ওজনেও তারতম্য হয়। পচনশীল পণ্য হওয়ায় কয়েকদিনের বেশি রাখলে লাভ দূরে থাক লোকসান হয়ে যায়।

মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) খাতুনগঞ্জের আল আরাফাত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. আজগর হোসেন জানান, আড়তে প্রতিকেজি ভারত থেকে আমদানি করা নাসিক পেঁয়াজ ৩৭-৩৮ টাকা, চীনা রসুন ৬০-৬৫ টাকা, চীনা আদা ১৯০ টাকা ও মিয়ানমারের আদা ১০০-১০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শিরিন আক্তার ও উমর ফারুকের নেতৃত্বে খাতুনগঞ্জ বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন অনিয়ম ও ক্রয় ইনভয়েস না রাখায় মেসার্স বরকত ভাণ্ডারকে ১০ হাজার টাকা, মেসার্স গোপাল বাণিজ্য ভাণ্ডারকে ১০ হাজার টাকা, মেসার্স হাজী মহিউদ্দিন সওদাগরকে ১০ হাজার টাকা, মেসার্স সেকান্দার অ্যান্ড সন্সকে ১০ হাজার টাকা, মোহাম্মাদীয়া বাণিজ্যালয়কে ১০ হাজার টাকা, মোহাম্মদ জালাল উদ্দীনকে ১০ হাজার টাকা, গ্রামীণ বাণিজ্যালয়কে ৫ হাজার টাকা, আরাফাত ট্রেডার্সকে ৫ হাজার টাকা, মেসার্স বাগদারিক কর্পোরেশনকে ৫ হাজার টাকা ও শাহাদাত ট্রেডার্সকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।