মেক্সিকোর সাবেক ৩ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

মেক্সিকোর সাবেক তিন প্রেসিডেন্ট, তাদের সহযোগী ও বহু তারকা আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ দেশটির রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে কাঁপিয়ে তুলেছে। অভিযোগগুলো এনেছেন মেক্সিকোর রাষ্ট্র পরিচালিত তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পেমেক্সের সাবেক প্রধান এমিলিয়ো লোজোয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব অভিযোগ দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওবরাদরকে আরো দুর্নীতিবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ করে দেবে। ৬৬ বছর বয়সী লোপেজ ওবরাদর ২০১৮ সালে দেশ থেকে দুর্নীতি হটানো ও মাফিয়া শক্তি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, গত মাসে এক দুর্নীতির মামলার সম্মুখীন হতে এমিলিয়ো লোজোয়াকে মেক্সিকোর কাছে হস্তান্তর করে স্পেন। তবে ঘটনা খুব দ্রুত আরো জটিল মোড় নেয়। নিজের সঙ্গে দেশটির জনপ্রিয় সব রাজনীতিবিদদেরও টেনে নিচে নামাচ্ছেন লোজোয়া।
সম্প্রতি ফাঁস হওয়া ৬৩ পৃষ্ঠার এক নথিপত্রে ওইসব রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলারের দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন তিনি।
স্থানীয় গণমাধ্যম এল ইউনিভার্সাল অনুসারে, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতোর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি ডলার ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধ অর্থায়ন ক্যাম্পেইন চালানোর অভিযোগ এনেছেন লোজোয়া। নিয়েতো ২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল অবধি দেশটির প্রেসডেন্ট ছিলেন। নিয়েতোর পাশাপাশি সাবেক প্রেসিডেন্ট ফেলিপ কালদেরন (২০০৬-২০১২) ও কার্লস সালিনাস (১৯৮৮-১৯৯৪) এর বিরুদ্ধেও সম্ভাব্য অপরাধকর্মের অভিযোগ এনেছেন সাবেক পেমেক্স প্রধান।
প্রসঙ্গত, নিয়েতোর ২০১২ সালের নির্বাচনী প্রচারণা শিবিরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেছেন লোজোয়া। পরবর্তীতে তাকে পেমেক্সের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেনে গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে ব্রাজিলিয়ান নির্মাণ জায়ান্ট ওদেব্রেচট থেকে ৪০ লাখ ডলারের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। জুলাইয়ে তাকে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ওবরাদর জানান, ফাঁস হওয়া নথিপত্রে উল্লিখিত তথ্যগুলো সত্য বলে বিশ্বাস করেন তিনি। এদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট কালেদরন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। এক টুইটে তিনি লিখেন, লোজোয়াকে প্রতিশোধ ও রাজনৈতিক নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট। তিনি ন্যায় বিচারে আগ্রহী নন। তবে নিয়েতো বা সালিনাস ও অন্যান্যরা তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি। নিয়েতোর শাসনামলে বেশকিছু রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। তাছাড়া, সেসময় মেক্সিকোতে দুর্নীতির হারও বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এদিকে, অনেকে দাবি করেছেন, ওবরাদরের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রভাব রয়েছে। এই অভিযানের আওতায় শি’র বেশকয়েকজন বিশিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বী কারাদণ্ডিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চীনের সাবেক নিরাপত্তা প্রধান ঝো ইয়ংকাং, কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবশালী নেতা বো শিলাই ও সান ঝেংসাই।