কথামালা: হৃদয়ের প্রস্তুতি

শারমিন সুলতানা রাশা:: যে মানুষটিকে অন্তত একবার না দেখলে শ্বাস আটকে আসতো, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুহূর্ত উদযাপনের উপলক্ষ তৈরি হতো সময়ের ব্যবধানে সেই মানুষটিই হয়ে ওঠে চক্ষুশূল। কিন্তু কেন? সম্ভাব্য দুটো কারণ। এক প্রত্যাশা। দুই প্রয়োজন। সম্পর্ককে ঘিরে প্রত্যাশা তৈরি হয়। আর প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধানকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে না পারা। আবার প্রয়োজনের তাগিদে যে সম্পর্ক তৈরি হয় সে প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সম্পর্ক ক্রমাগত বিলীন হয়ে যেতে থাকে। সেটি দুপক্ষের একই সঙ্গে ফুরিয়ে গেলে হয়তো সেটি নিয়ে শব্দ ব্যয় করা অপচয়সম। কিন্তু যখন এক পক্ষের প্রয়োজন রয়েছে অন্যপক্ষের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় সেক্ষেত্রে? অনেকে হয়তো ভুল বুঝতে পারেন সব সম্পর্কে প্রয়োজন নির্ভর হয় না বলে দাবি করতে পারেন। তাদের বলে রাখি প্রয়োজন কেবল পার্থিব কিংবা বাহ্যিক হয় না, কারও সাথে কথা বলে আপনি ভাল থাকেন এটাও এক প্রয়োজন। কিছু প্রয়োজন শারীরিক, কিছু আবার মনস্তাত্ত্বিক। সবটাই প্রয়োজন। প্রথমে নিজেকে যার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় নি সেই পক্ষে বিবেচনা করি। কেমন অনুভূত হচ্ছে? মনে হচ্ছে না যে কোনভাবে সম্পর্কটা আকড়ে থাকি? সেক্ষেত্রে তিনটি বিষয় হতে পারে। প্রথমত, আপনি চেষ্টা করবেন সম্পর্কটি স্বাভাবিক রাখার জন্য। দ্বিতীয়ত আপনি সম্পর্কটিকে সম্মান করে নিজ থেকে সরে যাবেন। তৃতীয়ত আপনি অন্যপক্ষকে ঘৃণা করতে শুরু করবেন। এবার নিজের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে পক্ষে নিজেকে স্থাপন করুন। সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন?
প্রথমেই হয়তো বলবেন, অপরপক্ষের সহানুভূতি প্রদর্শন করে সমঝোতার চেষ্টা করবেন। অথবা যে কোনভাবে সম্পর্কের ইতি টানবেন।
এবার সম্পর্কের ইতি টানা প্রসঙ্গে আসি। বেশিভাগ সম্পর্কের ঐচ্ছিকভাবে ইতি হয় অসুন্দরভাবে। কিছু হয় মৌনতায়। আর কিছু হয় সম্মানজনক বিচ্ছেদ। তবে যে কোন বিচ্ছেদই কিছু অনুভূতি অবশিষ্ট রেখে যায়। সেখানে আছে ঘৃণা, তিক্ততা কিংবা সম্মান। আর তীব্র যন্ত্রণা তো আছেই!
এবার আসি এ যন্ত্রণায় দগ্ধ যারা তাদের উপশমের প্রক্রিয়া কি? প্রথমত এই যন্ত্রণাকে অন্য সম্পর্কের ঢাল দিয়ে রক্ষা। কিংবা নিজের বেদনাকে সৃষ্টিতে রূপান্তরিত করে বিমোক্ষণ, যেটি নিরাময়ের সর্বাপেক্ষা সুন্দরতম উপায়। আরও অনেক অনেক উপায় হয়তো আছে কিন্তু সেসব স্থূল।
প্রতিকারের কথা তো হলো এবার আসি প্রতিরোধের কথায়। প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ ভাল এ চিরন্তন সত্যটিকে আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। তাই এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্তব্য নিজেকে প্রস্তুত করা, সম্পর্ক ঠিক ঋতুর মত। সবসময় আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। তাই এটিও বিশ্বাস করে নিন আজ আপনার বন্ধু কাল আপনার শত্রু হতে পারে। আজ আপনি যাকে ছাড়া একটি সুন্দর মুহূর্ত উদযাপন করার কথা ভাবতে পারছেন না, সামনে এমন দিন অবিসম্ভাবি আগত তাকে ছাড়া আপনার পুরোটা জীবন উদযাপন করতে হবে। সম্পর্ক দুটি পক্ষের একসঙ্গে বুনন। তাই আমরা কখনও আশা করতে পারি না আজকের দিন কালকের সমান হবে। তাই হৃদয়ের প্রস্তুতির চাইতে বড় প্রতিরোধ আর হয় না।