করোনা মোকাবেলায় যা থাকছে বাজেটে

দেশব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। এর ফলে লণ্ডভণ্ড দেশের অর্থনীতি। মোটামুটি রেমিটেন্স ছাড়া অর্থনীতির সব সূচকেই ধস নেমেছে। ভয়াবহ এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট দিতে যাচ্ছে সরকার। তাই বৈশ্বিক করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলার লক্ষ্য নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আজ জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদে এ বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এর আগে সংসদে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেয়া হবে।
সেই বাজেটে রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেয়ার পর সংসদে উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় সংসদে উপস্থিত থাকবেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের আসাও সীমিত করা হয়েছে। সাড়ে ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে তালিকা করে মাত্র ৮০ থেকে ৯০ জনের অধিবেশনে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে।
এবারের বাজেট নিয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকারকে জিডিপির প্রবৃদ্ধি, গতানুগতিক কর্মসূচির মধ্যে না থেকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষার কথা চিন্তা করা উচিত। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এবারের বাজেটে মানুষের প্রত্যাশা ভিন্ন। তবে আয় ও ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের চ্যালেঞ্জেও ভিন্নতা রয়েছে। মোটা দাগে এবারের বাজেটে ৪টি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো- করোনায় সৃষ্ট স্বল্পমেয়াদি সমস্যার সঙ্গে মধ্যমেয়াদি কর্মসূচির সম্পর্ক স্থাপন, বাজেটে অর্থায়ন, প্রবৃদ্ধি নির্ভর উন্নয়ন চিন্তা বাদ দিয়ে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক মানুষের আয় বাড়ানো এবং বাজেট বাস্তবায়ন।
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার জীবনের দ্বিতীয় বাজেট উত্থাপন করবেন। যদিও গত অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের অসুস্থতার জন্য পুরো বাজেট বক্তৃতা দিতে পারেননি। তখন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উত্থাপন ও বাজেট সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। এর মধ্যে ঘাটতির অঙ্ক দাঁড়াবে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫.৮০ শতাংশ। এ ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎসেই বেশি ভরসা রাখছে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটের এ আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। টাকার অঙ্কে যা ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকার বেশি। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে এর আকার দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। এবারের নতুন বাজেটের আকার চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ন্যায় জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ১৭.৯ শতাংশ।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৩ কোটি টাকা। এছাড়া কর বহির্ভূত অন্যান্য আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। মোট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ।
জানা গেছে, আগামী বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয়বাবদ খরচ ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেতন-ভাতাবাবদ ব্যয় রাখা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সরবরাহ ও সেবাবাবদ ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সরকারি প্রণোদনা, ভর্তুকি ও অনুদান বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সর্বাধিক বরাদ্দ রাখা হবে। এ খাতে ৩২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে। এছাড়া নতুন বাজেটে কৃষি, জনপ্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান খাতে অধিক বরাদ্দ রাখা হবে।
বাজেট অধিবেশনের সূচি: করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশন হবে মাত্র ১২ কার্যদিবস। ১১ই জুন বাজেট উত্থাপনের পর ১২ ও ১৩ই জুন অধিবেশনের মুলতবি। ১৪ ও ১৫ই জুন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা এবং সম্পূরক বাজেট পাস। পরদিন শুরু হবে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৬ ও ১৭ই জুন আলোচনা শেষে ১৮-২১শে জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকবে। এরপর ২২-২৪শে জুন আরো তিনদিন বাজেটের ওপর আলোচনা করে ২৫-২৮শে জুন ৪ দিনের বিরতি দেয়া হবে। ২৯শে জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। এদিনই পাস হবে অর্থবিল। ৩০শে জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৮ বা ৯ই জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে ওইদিনই সমাপ্তি টানা হবে। সূচি অনুযায়ী, অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে। চলবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।
বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এই সংসদ অধিবেশন নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। আমি ভার্চুয়াল অধিবেশন করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সেটা গ্রহণ করা হয়নি।
জানা গেছে, করোনাভাইরাসের কারণে আগামী বছর স্বাস্থ্য খাতে অনেক পরিবর্তন আনবে সরকার। অতীতে স্বাস্থ্য খাতে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ফলে এ বাজেট হবে অনেকটা করোনা মোকাবিলার বাজেট। ফলে আসন্ন বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়বে ৫ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এ খাতে মোট বরাদ্দ থাকছে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫.১ শতাংশ। চলতি বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা।